বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

ঐক্যফ্রন্ট ছাল-বাকলে তৈরি জোট

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং, মানুষ হত্যাকারী তারা সবাই এক হয়েছে। তিনি তো দেখতে পাচ্ছেন, কয়েকটা স্বাথাের্ন্বষী গোষ্ঠী এক হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এসব নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় নেই।
যাযাদি রিপোটর্
  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:৩১

নতুন গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘ছাল-বাকল দিয়ে তৈরি’ জোট বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই জোটকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন, গণমাধ্যম স্বাধীন। যে কেউ ইচ্ছা করলে রাজনীতি করতে পারে। আমি নতুন জোটকে স্বাগত জানাই।’ সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একে স্বাগত জানাই। তবে একটু লক্ষ্য রাখা দরকার, কারা কারা এক হলো। কোন চরিত্রের লোক তারা। এমনকি মেয়েদের প্রতি কার কী মন্তব্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় নেই। কারণ, এখানে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী আছে। সব মিলিয়েই কিন্তু এটা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগে ছিল। তারা এখন আওয়ামী লীগের বিরোধী হয়েছে। নবগঠিত জোটের সাত দফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাত দফা আর কত দূর যায়, এর জন্য অপেক্ষা করে আছি। এরপর আমি আমার বক্তব্য দেব।’ সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য ড. কামাল হোসেনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিঠি তো এখনো পাইনি। চিঠি না পাওয়া পযর্ন্ত তো কোনো মনোভাব তৈরি হয়নি। এর জবাব কী দেব? প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে বলেন, ‘কামাল হোসেন কাদের সঙ্গে এক জোট হয়েছেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত যারা আসামি, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য এফবিআই থেকে এসেছে। এতিমের অথর্ আত্মসাতের জন্য যিনি সাজাপ্রাপ্ত। এই অথর্ আত্মসাতের মামলা যিনি দিয়েছিলেন তখন তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি এখন এই জোটে যুক্ত হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী, যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা এর মধ্যে আছে। রাজাকার, আলবদর বাহিনী তৈরি করে যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা এর সঙ্গে আছে। দুনীির্ততে চ্যাম্পিয়ন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস যারা সৃষ্টি করেছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে যারা হত্যা করেছে, সেই মানুষ হত্যাকারী তিনি তাদের পক্ষ হয়েছেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং, মানুষ হত্যাকারীÑ তারা সবাই এক হয়েছে। আমি তো দেখতে পাচ্ছি, কয়েকটা স্বাথাের্ন্বষী গোষ্ঠী এক হয়েছে।’ নিবার্চন প্রসঙ্গ : সুষ্ঠু নিবার্চন নিয়ে সংশয় রয়েছে, গত শনিবার জনসভায় দেয়া জাতীয় পাটির্ চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিবার্চনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নিবার্চন কমিশন। নিবার্চন নিয়ে সংশয় যারা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কী? আমরা চাই, নিবার্চন সুষ্ঠুভাবে হোক এবং নিবার্চন যথাসময় হবে। তবে ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের চিরাচরিত বিষয়। এর মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা জনগণের শক্তিকে ভরসা করে সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে নিবার্চন করব। যে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা রুখব।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নিবার্চন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা একটা বিদেশি বন্ধুকে নিয়েও চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টা সফল হয়নি। গণতান্ত্রিক ধারা ও উন্নয়ন অনেকের কাছে ভালো লাগে না। তাদের কিছুই ভালো লাগে না।’ পথচারীদের সচেতন হওয়ার আহŸান সময়ের যেমন দাম আছে, জীবনেরও তেমন মূল্য আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পথচারীদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় না দেন, ফঁাকফেঁাকর দিয়ে রাস্তা পার না হন। সময় বঁাচাতে গিয়ে জীবন দেয়ার কোনো মানে হয় না। হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বের হোন, তাও ভালো। সড়ক দুঘর্টনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কি বলতে পারেন, কী কারণে এ ধরনের দুঘর্টনা ঘটে? যারা অ্যাকসিডেন্টের শিকার হলো, তারা রাস্তার কোথায় ছিল? সেটা একটু আমাকে বলুন প্লিজ।’ তিনি বলেন, ‘গাড়ি যান্ত্রিক ব্যাপার, এটা এমন না যে, হাত দেখালেই থেমে যেতে পারে। সেটা সম্ভব না। গাড়ি থামাতে একটু সময় লাগে।’ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষাথীর্ নিহতের ঘটনায় শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল ওই ঘটনার পর মানুষ একটু সচেতন হবে। কিন্তু মানুষ কি সচেতন হয়েছে? কেন হয়নি, সেটার জবাব দিন। আপনাদের পত্রিকায় ছবি দেখেছি, গাড়ি চলছে, গাড়ির ফঁাক দিয়ে মানুষ বের হচ্ছে। তখন কেউ যদি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়, কাকে দোষ দেবেন? ফুটপাত, আন্ডারপাস রয়েছে, ফুটওভারব্রিজ আছে। অথচ মানুষ হাত তুলে দৌড় দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে। তখন যদি অ্যাকসিডেন্ট হয়, তখন দোষটা কাকে দেবেন? সচেতনতাটা কার দরকার? আমাদের সবার স্বভাব পরিবতর্ন করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে সৌদি আরব সফরের বণর্না দেন। তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সাক্ষাতের সময় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে