শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আ’লীগের প্রতিদ্ব›দ্বী আ’লীগ!

নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে হাইকমান্ড গণসংযোগে দলীয় প্রতিদ্ব›দ্বীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হিড়িক দলে বড় ধরনের বিপযের্য়র আশঙ্কা অনেকের
ফয়সাল খান
  ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন মতভেদ ভুলে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে সরকারবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে, তখন ঘরের চাপ সামলাতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ হিমশিম খাচ্ছে। একাদশ সংসদ নিবার্চনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের নেতাকমীর্রা পাড়া-মহল্লায় বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের কঠোর নিদের্শনার পরও কোন্দল নিরসন না হওয়ায় চিন্তিত দলের হাইকমান্ড। নিবার্চনের আগে তৃণমূলে কোন্দল না মেটাতে পারলে বড় ধরনের বিপযর্য় সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদীয় ৩০০ আসনের বেশিরভাগ জায়গায় ক্ষমতাসীনদের একাধিক প্রাথীর্ রয়েছেন। এর মধ্যে শতাধিক আসনে প্রাথীর্ বাছায়ে হিমশিম খাচ্ছেন নীতি নিধার্রকরা। এসব আসনে রয়েছে একাধিক হেভিওয়েট প্রাথীর্। এক জনকে রেখে অন্যজনকে মনোনয়ন দিলে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। কৌশলে কীভাবে সেই ক্ষোভ প্রশমন করা যায় তা নিয়ে ভাবছে দলটি। তবে মাঠ পযাের্য়র অবস্থা এতই ভয়াবহ যে, আওয়ামী লীগের এক গ্রæপের নেতাকমীর্রা অপর গ্রæপের নেতাকমীের্দর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন। এলাকায়ও যেতে পারছেন না অনেকেই। অনেক জায়গায় দলের ত্যাগী নেতাকমীর্রাও হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। নিবার্চনী গণসংযোগের ব্যাপারে কেন্দ্রের নিদের্শনা অমান্য করে পরস্পরবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজধানীর কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তাফার ছেলে। সংবাদ সম্মেলন করে প্যানেল মেয়র দাবি করেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। অভিযোগের তীর বিএনপি বা অন্য দলের কারও বিরুদ্ধে নয়। সংসদ নিবার্চনে প্রাথীর্ হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর নিজ দলীয় সংসদ সদস্য তাকে বেকায়দায় ফেলতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গাজীপুর-৩ আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন এডভোকেট রহমত আলী। তার সঙ্গে অনেকেই মনোনয়ন চাইলেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এগিয়ে ছিলেন। বাধর্ক্যজনিত কারণে রহমত আলী অসুস্থ থাকায় তার ছেলে জামিল হাসান দুজর্য় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন। এলাকায় পোস্টার-ফেস্টুন দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার পাশাপাশি বাবার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও দেখাশোনা করছেন। এমনকি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনও করছেন তিনি। তবে একাদশ সংসদ নিবার্চনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ইকবাল হোসেন সবুজের অনুসারীরা। এ নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকমীর্রা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নানা ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে থাকেন আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের নেতাকমীর্রা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে যে, দু-পক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় সংঘষর্ও বাধতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে মেয়র আইভির দ্ব›দ্ব পুরনো। এই আসন থেকে শামীম ওসমানের মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে সমথর্ন করছেন মনোনয়ন মেয়র আইভির সমথর্করা।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে সব আসনে একাধিক প্রাথীর্ থাকলেও এমন দেড় শতাধিক আসনের শক্তিশালী একাধিক প্রাথীর্ রয়েছেন। যারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এসব আসনে নিজ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রাথীের্দর সমথর্করা সবাই প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার কথা বলে নিবার্চনী প্রচারণা গিয়ে পরস্পরের প্রতি বিষদগার করছেন। এসব আসনে বিএনপি বা অন্য বিরোধী দলের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার চেয়ে নিজ দলের কোন্দল মেটানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীনদের।

তবে কোন্দল নিয়ে চিন্তিত হলেও এতে আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন দলীয় নেতারা। তাদের মতে, দলে কেউ চাকরি করেন না। সবাই স্বাধীনভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং নিজের শক্ত অবস্থান নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। যারা বিবাদে লিপ্ত তারা সবাই প্রভাবশালী, তাদের কারণে দল শক্তিশালী হয়েছে। তাই তাদের কোন্দল নিরসনের জন্য আলাপ আলোচনা ও মোটিভেশনের মাধ্যমে কোন্দল, বিভেদ দূর করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমÐলীর সদস্য কনের্ল (অব) ফারুক খান যায়যায়দিনকে বলেন, বড় দলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ইতিবাচক। রাজনীতির উদ্দেশ্যই হলো নেতৃত্ব তৈরি করা। আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখন অনেক শক্তিশালী। প্রতিটা আসনে এমপি হওয়ার মতো ৮/১০ যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে ওঠায় তারা খুশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো প্রাথীর্ পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন না। সবাই নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। ছোটখাটো যা বিবাদ আছে মনোনয়ন দিলে তা ঠিক হয়ে যাবে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বিগত সিটি করপোরেশন নিবার্চন। প্রত্যেক সিটিতে ১০/১৫ জন করে প্রাথীর্ ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন দেয়ার পর সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। এবারও মনোনয় দেয়ার পর সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করবেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এরপরও যদি কেউ দলীয় নিদের্শ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রাথীর্ হন, তাহলে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সভাপতিমÐলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বড় দলে কোন্দল থাকাটা স্বাভাবিক। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে এমনটা হয়। তবে কেউ অপরাধ করলে ছাড় দেয়া হবে না।

এদিকে গত বছর দলীয় কোন্দল নিরসনে জেলা নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ। তবে স্বাভাবিক পন্থায় আলোচনা করে কোন্দল নিরসন হয়নি। আবার কোনো নেতাকে বহিষ্কার করে তার দীঘির্দনের ত্যাগ তীতিক্ষার মূল্যায়ন না করা ও সংগঠনকে দুবর্ল করার পক্ষপাতি না দলের হাইকমাÐ। কিন্তু কোন্দল-সহিংসতায় নিয়মিতভাবে আওয়ামী লীগের ভাবমূতির্ ক্ষুণœ হচ্ছে। পাশাপাশি দলাদলির কারণে সংগঠনও দুবর্ল হয়ে পড়ছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। তাছাড়া তৃণমূল পযাের্য়র অনেক প্রভাবশালীসহ সাধারণ নেতাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মেনে নেন না। তারা সরাসরি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বিবাদ মীমাংসায় বিব্রত বোধ করেন এবং তৃণমূল নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ।

এসব বিষয়ে তৃণমূল নেতারা বলছেন, ত্যাগী নেতাদের যদি মূল্যায়ন করা হয় তখন সবাই মেনে নেয়। কিন্তু দলের সমস্যা হলো, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে কাউয়া, হাইব্রিড ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি কাউকে মনোনয়ন দিলে মেনে নেয়া কষ্টকর। তাদের প্রত্যাশা, এবার ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18834 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1