শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার দৃঢ়তায় দেশের ভাবমূতির্ বদলে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোটর্
  ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অথর্মন্ত্রীর ‘ঘোর আপত্তি’ সত্ত্বেও নিজস্ব অথার্য়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করায় বাংলাদেশের ভাবমূতির্ বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও

তিনি বলেছেন, “আমি ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই, বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সাথে ছিল, হয়ত আমার দুয়েকজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা ছাড়া সবাই ছিলেন আমার সাথেও এই একটা সিদ্ধান্ত, আপনারা দেখেন, বাংলাদেশের ভাবমূতির্ পরিবতর্ন হয়ে গেছে।”

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে পদ্মা সেতু নিমাের্ণ বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে জটিলতার প্রসঙ্গ টেনে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকসহ ‘পশ্চিমা বিশ্বের কিছু নেতা’ পদ্ম সেতু নিমাের্ণ বঁাধা হয়ে দঁাড়িয়েছিল।

পদ্মা সেতু নিমাের্ণ বিশ্ব ব্যাংকের অথার্য়নের কথা থাকলেও সংস্থাটি দুনীির্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। এক পযাের্য় সরকার বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়েই সেতুর কাজ শুরু করে।

পদ্মায় বাংলাদেশের দীঘর্তম সেতু নিমাের্ণ বিশ্ব ব্যাংকের অথার্য়ন আটকাতে মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি এখনো খুঁজে পাই না; এমডি পদে কি মধু আছে...যার জন্য এতকিছু করা হল।”

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কমর্কতার্ অথর্মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সে সময় নিজস্ব অথার্য়নে পদ্মা সেতু নিমাের্ণর সিদ্ধান্তের ‘প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন বলেন জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি তখন সিন্ধান্ত নিলাম এই সেতু নিজের টাকায় করব, কারো অনুদানে না। আমার অথর্মন্ত্রী, তার ঘোর আপত্তি।”

কিন্তু নিজস্ব অথার্য়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের মানুষের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

“আমি যখন এ কথাটা বললাম, বাংলাদেশের মানুষ সকলে জেগে উঠল। আমি চারিদিক থেকে মেসেজ পেলাম, সকলে সাহায্য করতে প্রস্তুত। অনেকই টাকা পাঠানো শুরু করে দিলেন না জেনেই।”

কিস্তু অথর্মন্ত্রীর পাশাপাশি একজন উপেদষ্টাও যে সে সময় আপত্তি করেছিলেন, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“অথর্মন্ত্রী বললেন, ‘না, ওয়াল্ডর্ ব্যাংক ছাড়া হবে না’। আমার উপদেষ্টা বলে, ‘ওয়াল্ডর্ ব্যাংক ছাড়া হবে না’। আমি বললাম, ‘কেন হবে না ? দরকার হলে আমি ডিজাইন চেইঞ্জ করব’। আমি এটা আমাদের নিজের টাকায় করব। অন্য কারো টাকায় করব না।”

দুনীির্তর ষড়যন্ত্রের ওই অভিযোগ নিয়ে ডামাডোলের মধ্যে তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরে যেতে হয়েছিল। দুদক তদন্তে নামার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কয়েকজন সরকারি কমর্কতাের্ক।

কিন্তু পরে দুদক জানায়, অভিযোগের কোনো সত্যতা তারা পায়নি। কানাডায় এ বিষয়ে যে তদন্ত চলছিল, সেখানেও একই ফল আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়াল্ডর্ ব্যাংক লোভ দেয়, অমূককে অ্যারেস্ট কর, তাহলে টাকা দেব। অমুকের বিরুদ্ধে মামলা দাও তাহলে টাকা দেব। স্বাভাবিক ভাবে আমার উপদেষ্টা, আমার অথর্মন্ত্রী যখন বারবার বলেন, কিছু কিছু আমরা শুনলাম, আমরা মানলাম।”

বিশ্ব ব্যাংক সে সময় ‘অনেকভাবে প্ররোচিত করলেও’ প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করার নিদের্শ দিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কষ্ট পেয়েছে আমার ছেলে, কষ্ট পেয়েছে আমার বোন। বারবার আমার ছেলেকে স্টেট ডিপাটের্মন্টে ডেকে নিয়ে থ্রেট করা... আমার মেয়ে চাকরি করত; তার ভিসা না দেওয়া... অনেক অত্যাচার আমরা সহ্য করেছি, মাথা নত করি নাই।”

ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যে নোবেল প্রাইজের মত একটা প্রাইজ পেয়ে গেছেন, তাক এমডির পদটা ধরে রাখতে হবে কেন? সেখানে কী স্বাথর্টা আছে? কী আকাঙ্ক্ষাটা আছে ?

“গ্রামীণ ব্যাংকের আইন আছে ৬০ বছরের বেশি কেউ এমডি পদে থাকতে পারবে না। যার বয়স ৭০ পার হয়ে গেছে, তখনও তিনি এমডি পদ আকড়ে ধরে বসে আছেন।”

সে সময় ইউনূসকে যে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা করার প্রস্তাব হয়েছিল, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“অথর্মন্ত্রী মুহিত সাহেব এবং গওহর রিজভী সাহেব গিয়ে তাকে অনুরোধ করেলন যে, আপনি একজন অ্যাডভাইজার এমিরেটাস হয়ে থাকেন। তিনি সেটা গ্রহণ না করে সরকারের বিরুদ্ধে দুটো মামলা করে দিলেন।”

কিন্তু আদালতের রায় সে সময় ইউনূসের বিপক্ষে যায়। সরে যেতে বাধ্য হন ইউনূস। তারপরও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি ধরে রাখতে তিনি ‘পশ্চিমাদের দিয়ে সরকারের ওপর চাপ’ দেন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

“উনি গোস্বা করে তখন... তার আগে থেকে উনি লবিং করছিলেন আমেরিকায়। হিলারি ক্লিনটন নিজে আমাকে ফোন করলেন, এমডি পদে রাখতে হবে। আমি বললাম, এমডি কেন, উনাকে তো আমরা অনেক উচ্চ পদ দিতে চাচ্ছি, উনাকে সেটা গ্রহণ করতে বলেন।

“আমার সাথে যখন দেখা হল, তখন ওই একই কথা। টনি বেøয়ার যখন (যুক্তরাজ্যের) প্রাইম মিনিস্টার; তার স্ত্রী আমাকে ফোন করল... আমি একই উত্তর দিলাম। বললাম, এখানে আমার কিছু করার নাই, এটা কোটের্র ব্যাপার, আইনের ব্যাপার। তিনি (ইউনূস) তো এতদিন আমাদের কিছু বলেন নাই। এখানে আমাদের কী করণীয় আছে।”

নাম উল্লেখ না করে একজন সম্পাদকের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “এরপর আমাদের দেশেরই একজন এডিটর, ভালোই ইংরেজি জানেন এবং আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড।... সাবসিডিয়ারিতে আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড ছিলেন।

“তিনিও তার সাথে দোসর হলেন। আমেরিকাও চলে গেলেন, হিলারির কাছে বহু ই-মেইল পাঠানো হলো এবং তারই প্ররোচনায় হিলারি নিদের্শ দিল ওয়াল্ডর্ ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পরও নিজের অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমেরিকান অ্যাম্বাসেডর পর পর যারা তখন ছিল; প্রত্যেকে এসে আমার অফিসে সকলকে একটা হুমকি দিয়ে যেত যে, এমডির পদ থেকে সরালে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হয়ে যাবে।”

“স্টেট ডিপাটের্মন্টের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি যখন এসে এই কথাটা আমার সামনে বললেন; আমি তারপর থেকে আমেরিকার কোনো প্রতিনিধির সাথে দেখাই করতাম না। সম্পূণর্ দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার কথা ছিল, আমার দেশের কোনো অ্যাম্বাসেডর তো প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে পারে না। আর তারা আসলেই আমরা দেখা করি, এত খাতির করি কেন? যারা আমার দেশের এত বড় প্রজেক্ট বন্ধ করার হুমকি দিতে পারে, তাদের সাথে দেখা করার কোনো প্রয়োজন আমার নাই।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18694 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1