শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ সংসদ নিবার্চন

তফসিলের আগেই হিস্যা চায় ছোট দলগুলো

নিবার্চনকে সামনে রেখে অনেক রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। মোট রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১৯৩ হলেও নিবার্চন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দল এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূণ
যাযাদি রিপোটর্
  ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে লাভক্ষতির হিসাব চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নিজেদের পক্ষে দল ভারী করতে চেষ্টা করছে। এ সুযোগে নামসবর্স্ব দলগুলোর নেতারা মন্ত্রী-এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে তফসিলের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা হওয়ায় এর আগেই নিজেদের হিস্যা আদায়ে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে ছোট দলগুলো।

জনসমথর্ন না থাকলেও নিবার্চনকে সামনে রেখে অনেক রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১৯৩ হলেও নিবার্চন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দল এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূণর্। এসব দলের মধ্যে অনেক দল সমমনা একাধিক জোটেও আছে। কিছু রাজনৈতিক দল এখনো কোনো জোটের অন্তভুর্ক্ত হয়নি। বাম সংগঠনের আরেকটি জোট গঠন এখন প্রক্রিয়াধীন। তবে এসব জোট গড়তে গিয়ে বেশিরভাগ দলই তাদের আদশের্ক অনুসরণ করছে না। প্রগতিশীল দলগুলো ধমির্ভত্তিক দলগুলোকে নিয়েও জোট করছে। সব ছোট দলেরই এখন লক্ষ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি অথবা যে জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সবোর্চ্চ হিস্যা আদায় করা। আর তফসিলের আগের এ সময়টাকে কাজে লাগাতে তৎপর তারা।

আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ ছোট বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কে-কোন আদশর্ বা কারা দেশের জন্য ইতিবাচক অথবা কী করতে চায় বতর্মান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তির দিক থাকে কাদের পাল্লা ভারী এ বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জোটে ভাঙন ঠেকাতে এবং আরও সম্প্রসারিত করতে নিজেদের মতো রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে। আর নাম এবং ব্যানার সবর্স্ব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দর কীভাবে বাড়ানো যায় সে কৌশল অবলম্বন করছে।

২০ দলীয় জোট ও মহাজোটে থাকা এবং যারা সুবিধা অনুযায়ী জোটে অন্তভুর্ক্ত হতে চায় এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, অনেক দল আছে যারা শেষ পযর্ন্ত কোন জোটে থাকবে তা ফসসিলের আগে সুস্পষ্ট করে নিজেরাই বলতে পারে না। অনেকে একই সঙ্গে আলোচনা করছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট ও বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। সবোর্চ্চ সুবিধার আশায় থাকা এসব দলের নেতারা এবার কোনো মৌখিক আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করবে না। নিবার্চনে কয়টি আসনে ছাড় পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে তারা কী পাচ্ছে এ বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে চাচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জোটে থাকা দলগুলো শীষর্ দলকে নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার আগেই এ সমস্যার সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জোটের ভাঙন ঠেকাতে এবং সম্প্রসারণ করতে কৌশলী ভ‚মিকায় আছে শীষর্ রাজনৈতিক দল দুটি। ভাঙনের বিষয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বেশি ঝঁুকিতে আছে। এদিক থেকে অনেকটা স্বস্তিতে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, কয়েকদিনের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থতিতে একটা আমূল পরিবতর্ন আসবে। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন জোট থেকে বিএনপি জোটে অনেকে আসবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের আলোচনাও চলছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে নিজেদের জোট বড় করার ইচ্ছা ক্ষমতাসীনদের। তা সম্ভব না হলে যাতে ছোট দলগুলো নিবার্চনে অংশ নেয় সেই চেষ্টা করছে তারা। এ জন্য ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে তারা। এ বিষয়ে সিপিবি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বিএনএ জোট, বিকল্পধারা, এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের কথা হয়েছে। তবে কোনো রাজনৈতিক দলই শেষ পযর্ন্ত তারা কী করবে তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয়নি।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা জানান, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই আওয়ামী লীগ সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নিবার্চন চায়। ক্ষমতায় থাকলেও নিবার্চনে অনিয়ম করতে চায় না। কিন্তু রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি তা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। এ বিষয়টিই আওয়ামী লীগের দল ভারী করতে সবচেয়ে কাজে লাগছে। ছোট দলগুলোর ধারণা, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এবারেও নিবার্চন বজর্ন করবে বিএনপি। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে নামসবর্স্ব দল নিয়েই মন্ত্রী-এমপি হওয়া যাবে। আওয়ামী লীগ যেহেতু সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না, সেহেতু বিএনপির একেবারেই একা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শুধু ছোট দলের জোট নেতারাই নন, বিএনপির প্রভাবশালী কিছু নেতাও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও দাবি এই নেতার।

নিবার্চনকে সামনে রেখে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আরও বড় হতে পারে। অনেকেই জোটে আসতে চাচ্ছে। অনেকে আলাদা জোটে থাকতে চাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গেও থাকবে না, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও নয়। এমন জোটও হতে পারে। শেষ পযর্ন্ত বিষয়টা কোথায় গিয়ে দঁাড়ায় তা সময়ই বলে দেবে।

বিএনপি সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে প্রথমে আন্দোলন সফল এবং পরে বড় জোট নিয়ে নিবার্চনী মাঠে নামতে চায় বিএনপি। জামায়াত থাকার কারণে পুরো ২০ দলকে ঐক্যফ্রন্টে আনা সম্ভব না হওয়ায় দুই দিক থেকেই জোট সম্প্রসারণের ভাবনা রয়েছে দলটির। এছাড়া ২০ দলের বেশ কয়েকটি দলকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি একেবারে ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দল যারা কোনো জোটেই নেই তাদের ২০ দলের অন্তভুুর্ক্ত করার জন্য আলোচনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভাঙন ঠেকাতে এবং জোট সম্প্রসারণে বিএনপি কৌশলী অবস্থানে রয়েছে। জোটের যেসব দল ভাঙনের চেষ্টা করবে সেসব দলের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রধানের সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে দলে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ন্যাপ ও এনডিপির প্রধান ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করার পরপরই সেই দলের সিনিয়র নেতারা শীষর্ নেতাকে বহিষ্কার করে ২০ দলে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া নিবার্চনী আসনে ছাড় দেয়ারও লোভনীয় প্রস্তাব আছে নামসবর্র্স্ব দলগুলোর কাছে। এদিকে ন্যাপ ও এনডিপির জোট ত্যাগ করার পর এনডিপি ও কল্যাণ পাটির্ জোট ছাড়তে পারে রাজনৈতিক মহলের এমন গুঞ্জন উঠলে বিএনপি নেতারা দল দুটির শীষর্ নেতা কনের্ল (অব.) অলি আহমদ ও মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তারা এসব বিষয় শুধুই গুঞ্জন বলে জানিয়ে দেন বিএনপি নেতাদের।

বিএনপি বা আওয়ামী লীগ জোট বড় করতে যে কৌশলই নিক না কেন ছোট রাজনৈতিক দলের নেতারা এবার কোনো অবস্থাতেই ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা চায় তফসিলের আগেই চুক্তি করতে হবে যে, তারা কী পাচ্ছেন। তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা ঘোষণা দেবেন নিবার্চনে তাদের অবস্থান কী হবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটে থাকা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, যেদিকে বেশি লাভ থাকবে সেদিকেই তারা থাকবেন। গত নিবার্চনের আগে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও ২০ দলীয় জোটের যেসব নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাননি এবার পরিস্থিতি বুঝে সেদিকে পা বাড়ানোর কথা ভাবছেন অনেকে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটে থাকা অনেকের ভাবনা আছে, পরিস্থিতি বুঝে লাভজনক পক্ষেই থাকার। এছাড়া লোভনীয় প্রস্তাব পেলে অনেকে দল এককভাবে নিবার্চনে লড়ার কথাও ভেবে রেখেছে।

রাজনৈতিক হিস্যা আদায়ের এই চলমান পরিস্থিতিতে এলডিপির অবস্থান সম্পকের্ জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, তারা একটি জোটে আছেন। রাজনৈতিক এমন পরিস্থিতিতে কখন কারা কী অবস্থান নেয় তা বলা মুশকিল। তবে দল ও দেশের জন্য ভালো হবে এ বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তার দল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18469 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1