শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
রিভিউ আবেদন

এবার ভাগ্য খুলতে পারে বঞ্চিত কমর্কতাের্দর!

জাতীয় নিবার্চন সামনে রেখে সিনিয়র এই কমর্কতাের্দর অসন্তোষ ঠেকাতে রিভিউ আবেদনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
দেলওয়ার হোসাইন
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:২৮

সম্প্রতি জনপ্রশাসনে ১৬৩ জন যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হলেও আরো দুইশতাধিক কমর্কতার্ তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই বিষয়টি পুনবিের্বচনা করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও সচিব বরাবর রিভিউ আবেদন করেছেন। জাতীয় নিবার্চন সামনে রেখে গুরুত্বপূণর্ এই কমর্কতাের্দর অসন্তোষ ঠেকাতে রিভিউ আবেদনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে তাদের কারো কারো ভাগ্য খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা বলেন, যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও নানা কারণে যুগ্ম সচিব পদের দুইশতাধিক কমর্কতার্ পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের ৯, ১৯৮৪ ব্যাচের ৪১, ১৯৮৫ ব্যাচের প্রায় ১০০, ১৯৮৬ ব্যাচের ৪০, নবম ব্যাচের ১৯ ও দশম ব্যাচের প্রায় ১৫ জন কমর্কতার্ রয়েছেন। বাদ পড়া কমর্কতাের্দর বেশির ভাগ তাদের পদোন্নতির বিষয়টি পুনবিের্বচনার জন্য রিভিউ আবেদন করেছেন। অনেকে জনপ্রশাসনের মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে মৌখিকভাবে পুনবিের্বচনার দাবি জানিয়েছেন। এ সময় জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ পদোন্নতিবঞ্চিত কমর্কতাের্দর বিষয়টি পুনবিের্বচনার জন্য আশ্বস্ত করেছেন। বঞ্চিতরা জানান, জনপ্রশাসন সচিব তাদের বলেছেন শিগগির এই বিষয়টি তারা পুনরায় যাচাই-বাছাই করবেন। যোগ্য কেউ বাদ পড়লে তার বিষয়টি পুনবিের্বচনা করা হবে। আবেদনে প্রত্যেকে তাদের সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার কথা উল্লেখ করেছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমথর্ক হিসেবে চিহ্নিত করতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার ডিও দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন সোমবার যায়যায়দিনকে বলেন, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পুনবিের্বচনা দাবি করে ১৫ থেকে ২০ জন কমর্কতার্ রিভিউ আবেদন করেছেন। তাদের রিভিউ আবেদন সুপিরিয়র সিলেকশন বোডের্র (এসএসবি) কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এখন এসএসবি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সময়ের বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। তবে এসএসবিতে আলোচনা হবে, এরপর একটি চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। বতর্মান সরকারের শেষ সময়ে পদোন্নতি হওয়ায় কিছু কমর্কতার্র বিষয়ে এসএসবি পুনবিের্বচনা করতেও পারে। যায়যায়দিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, বঞ্চিত কমর্কতাের্দর মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যারা বতর্মান সরকারের সমথর্ক হিসেবে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। মেধাতালিকার প্রথম দিকে রয়েছেন। ইতোপূবের্ গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অবস্থান সম্পকের্ও যাচাই-বাছাইয়ের পর পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। কেউ কেউ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসনে সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় এমপি, একাধিক মন্ত্রী ও সচিব ডিও দিয়েছিলেন। এরপরও পদোন্নতি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের। বঞ্চিত এক কমর্কতার্ ক্ষোভ প্রকাশ করে যায়যায়দিনকে জানান, চাকরি জীবনে সবসময় সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। পারিবারিকভাবেও বতর্মান সরকারের সমথর্ক। প্রশাসনে প্রায় সবাই জানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। বতর্মান সরকারের পরিবতর্ন হলে পরবতীের্ত আর পদোন্নতিও পাবেন না। এরপরও সরকারের শেষ সময়ের পদোন্নতি তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এসব কারণে তার পদোন্নতির বিষয়টি পুনবিের্বচনা করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রী বরাবর রিভিউর জন্য আবেদন করেছেন। তিনি আরও জানান, তার বিশ্বাস, সরকার পুনরায় খেঁাজখবর নিলে তাকে পদোন্নতি দিতে বাধ্য হবে। এখন পুনবিের্বচনার আশায় অপেক্ষা করছেন। একইভাবে আরো প্রায় ২০ জন বঞ্চিত কমর্কতার্ যায়যায়দিনকে এসব কথা জানান। জনপ্রশাসনের একাধিক কমর্কতার্ বলেন, ইতোপূবের্ও পদোন্নতির পর এমন রিভিউ আবেদন এসেছে। কিন্তু জনপ্রশাসন সেগুলো আমলে নেয়নি। এবারই প্রথম এসব আবেদন আমলে নেয়া হয়েছে। পুনবিের্বচনার জন্য এসএসবির কাছে দেয়া হয়েছে। কারণ, এ সময়ে সরকারপক্ষের কোনো কমর্কতার্ বঞ্চিত হলে এ বঞ্চনা তাকে দীঘির্দন সইতে হতে পারে। আবার নিবার্চনের আগে গুরুত্বপূণর্ এসব কমর্কতার্ সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেও সমস্যা আছে। ফলে রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রæত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে সরকার। এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, সততা ও জাতীয় পযাের্য় অবদানের ওপর গুরুত্ব দিতে নিদের্শনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কমর্কতাের্দর অবশ্যই অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এরপরও কমর্কতাের্দর এসব যোগ্যতা উপেক্ষা করেই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্দর পদোন্নতি তালিকা পযাের্লাচনা করে দেখা যায়, কয়েকজন কমর্কতার্ বিএনপি সরকারের আমলে জেলা প্রশাসকসহ গুরুত্বপূণর্ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমথর্ক হিসেবেও পরিচিত। মেধা ও যোগ্যতার বিবেচনায়ও পেছনে। এরপরও তাদের এবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া একজন কমর্কতার্ আরো এক বছর আগে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ তিনি জোট সরকারের আমলে বিএনপির একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে ৮৬ ব্যাচের এক কমর্কতার্ বলেন, ‘তদবির ও টাকা-পয়সার জোরে সরকারবিরোধী মতাদশের্র কমর্কতার্রাও এবার পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ পারিবারিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের সমথর্ক হওয়ার পরও আমি বঞ্চিত।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে