শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পবিত্র আশুরা

যাযাদি রিপোটর্
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আজ পবিত্র আশুরা। মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপযর্ময় ও শোকাবহ দিন। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন।

আজ যথাযোগ্য মযার্দায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে। নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের ভেতর দিয়ে ধমর্প্রাণ মুসলমানরা দিনটি পালন করবেন। দেশব্যাপী বিভিন্ন ধমীর্য় সংগঠন নানা কমর্সূচি গ্রহণ করেছে। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন গতকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে।

আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। তারা সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে

সবার প্রতি আহ্বান জানান।

৬৮০ খৃস্টাব্দের মোতাবেক ৬১ হিজরীর এই সেই দিবস যেদিন অপশক্তি-অন্যায়-অসত্যের কাছে মাথানত না করে সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের পথে লড়াই করে বীরের মতো পরিবারের অনেক সদস্য ও সহচরকে নিয়ে শাহাদাৎবরণ করেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.)। সেই দুঃখময় স্মৃতি আজো বিশ্ব মুসলিমকে কঁাদায়। সে সঙ্গে প্রেরণা জোগায় ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়-অনাচার, অসত্য-অসুন্দরের বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম করার।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধমীর্য় সংগঠন নানা কমর্সূচি গ্রহণ করেছে। পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এছাড়া নগরের মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরানা পল্টনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবেন শিয়া সম্প্রদায়।

আশুরা নামকরণ নিয়ে ওলামাগণের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। অধিকাংশের মতে, মহররম মাসের দশম তারিখ বিধায় এ নামকরণ। বাংলায় যার অথর্ দঁাড়ায় দশমী। কারো মতে, এ তারিখে মহান রাব্বুল আলামীন দশজন পয়গম্বরকে তার অনুগ্রহের দ্বারা ধন্য করেছেন বলেই এ নামকরণ।

এদিন হযরত আদমের (আ.) তওবা কবুল হয়, মহাপ্লাবনের পর নূহনবীর কিশতী সবর্প্রথম মাটির সংস্পশর্ লাভ করে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) ভ‚মিষ্ঠ হন, হযরত দাউদ নবীর তওবা কবুল হয়, হযরত আইয়ুব নবীর রোগ-যাতনা উপশম হয়, মুসা নবীকে আল্লাহ উদ্ধার করেন, ইউনুছ নবীকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দান করেন, ঈশা নবীকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়।

মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসের রোজা ফরজ হবার আগে আশুরার রোজা ফরজ হিসেবে রাখা হত। অতঃপর যখন রমজান মাসের রোজার হুকুম অবতীণর্ হল তখন তা নফলরূপে গণ্য হয়। রাসুলে করীম (সা.) আরো এরশাদ করেন, রমজান মাসের ফরজ রোজার পর মহররম মাসের রোজা সবোর্ত্তম (মুসলিম)। তিনি আরো এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য মুক্ত হাতে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে সারা বছর সচ্ছলতা দান করবেন।

এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে প্রবেশের সময় দা, ছোরা, কাচি, বশার্, বল্লম, তরবারি ও টিফিনক্যারি ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। একই সঙ্গে মিছিলে আতশবাজি ও পট্কা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়।

এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কয়েক স্তরের সুদৃঢ় নিরাপত্তা ও প্রবেশের চার মুখে চেকপোস্টে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। আশুরা উপলক্ষে কোনও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছে ডিএমপি।

আশুরার ইতিহাস

এই দিনে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং হযরত আলী (রা.) এর পরিবারের সতের জন শিশু-কিশোর যুবকসহ মোট ৭৭ জন মদের্ মুজাহিদ কারবালার প্রান্তরে ফোয়াতের দু’কূল ছাপা নদীর কিনারায় এক বিন্দু পানি হতে বঞ্চিত হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন। রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.) -এর পবিত্র মস্তক নিষ্ঠুর নরাধম শিমার ছিন্ন করে কুফার দুরাচার ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে প্রেরণ করেছিল। কেন এ মহান ত্যাগ ও শাহাদাত? এটা কি ছিল এজিদের হাত থেকে খেলাফত কেড়ে নেয়ার জন্য? তা নয়। হযরত হুসাইন (রা.) এর শিবিরে মাত্র ৪০ জন লোক ছিল তরবারি চালানোর মতো। পক্ষান্তরে এজিদের নিদেের্শ কুফার গভনর্র চার হাজার রণ নিপুণ সৈন্য পাঠিয়েছিল। এ অসম যুদ্ধে পরাজয় ও মৃত্যু ছিল নিশ্চিত। তারপরও কেন স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ? কারণ, শতর্ ছিল, ‘হয় এজিদের আনুগত্য স্বীকার কর, না হয় যুদ্ধ কর’। রসুল (সঃ) -এর কলিজার টুকরাসম হুসাইন (রাঃ) একটি মুহূতের্র জন্য এ এজিদের আনুগত্য স্বীকার করে ইসলামী খেলাফতের মযার্দাকে ভ‚লুন্ঠিত করতে চাননি। পূবের্ উম্মাহর মধ্যে শান্তি-শৃংখলা স্থাপনের জন্য একটি লিখিত চুক্তি হয়। সেখানে বলা হয়, হযরত মুয়াবিয়ার পর হযরত হুসাইন (রাঃ) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু মুয়াবিয়া তঁার খেলাফত পরিচালনার শেষ সময়ে স্বীয় পুত্র এজিদকে খেলাফতের দায়িত্ব অপের্নর প্রস্তাব দেন।

এজিদ জনমতের কোন তোয়াক্কা না করে নিজেই খেলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়। তখন সবর্ত্র বিশৃংখলা দেখা দেয়। ইসলামী খেলাফতের মযার্দাকে ধ্বংস করে রাজতন্ত্রের সূত্রপাতকে বেশিরভাগ মুসলমানেরা সে সময় মানতে পারেননি। যার কারণে বিদ্রোহ দানা বঁাধতে শুরু করে এজিদের বিরুদ্ধে। এজিদ তখন ভাবল, চারদিকে বিদ্রোহ দমন করার চেয়ে বরং হুসাইনকে (রাঃ) যদি দুনিয়া হতে সরিয়ে দেয়া যায় তাহলে সব মামলা চুকে যায়। সাথে সাথে নিজের নেতৃত্ব কতৃর্ত্ব অনায়াসে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ইসলামী খেলাফতে কলঙ্ক সৃষ্টিকারী এজিদ সেই হুসাইনকে (রাঃ) হত্যা করার পরিকল্পনা করল যিনি বেহেশতের সব যুবকদের সরদার হবেন।

হুসাইনকে হত্যা করতে এজিদের নিদেের্শ কুফার গভনর্র ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের সৈন্যরা সবার্ত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করলো। সেদিন ছিল ১০ই মহররম ৬১ হিজরী ৬৮০ খ্রীষ্টাব্দে ১৯ অক্টোবর। সকালে একটি লাল সূযের্র উদয় হলো পশ্চিম আকাশে। ফজরের নামাজের পরই হযরত হুসাইন (রাঃ) তঁার সাথীদের দঁাড় করালেন। মাত্র ৩২ জন ঘোড় সওয়ার ও ৪০ জন পদাতিক সৈন্য নিয়ে গঠিত তঁার ক্ষুদ্র বাহিনী। ডান দিকে যুহাইর বিন কাইন এবং বাম দিকে হাবীব বিন মুযাইর নিজ নিজ দলের অধিনায়ক নিযুক্ত হলেন। বাহিনীকে এভাবে সাজালেন যে পিছনে তঁাবুগুলো। আর পিছনের দিকটাকে অধিকতর নিরাপদ করার জন্য পরীখাসদৃশ গভীর গতর্গুলোতে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। যাতে শক্রুরা পিছন দিক থেকে আক্রমণ করতে না পারে। আর ফুরাতের পানির দখল নিজেদের জন্য নিয়ে নিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রারম্ভে হযরত হুসাইন (রাঃ) একটি মমর্স্পশীর্ ভাষণ দিলেন, হে জনমÐলী! তাড়াহুড়ো করো না। আগে আমার কয়েকটি কথা শোন। আমার কথা যদি তোমরা মেনে নাও এবং আমার প্রতি যদি সুবিচার কর, তাহলে তোমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মানুষ বলে পরিগণিত হবে। তোমরা সবর্শক্তি নিয়োগ করে আমার সাথে যে আচরণ করতে চাও তা করে নাও। আল্লাহই আমার একমাত্র সহায়। তিনিই তঁার সৎ বান্দাদেরকে সাহায্য করে থাকেন। হযরত হুসাইনের এই কথা শুনে তার শিবিরে কান্নার রোল পড়ে গেল। তখন হুসাইন (রাঃ) হয়ত মনে মনে বলছিলেন, এখনো তো কান্নার অনেক বাকী। যথারীতি যুদ্ধ শুরু হলো। প্রবল বীরবিক্রমে মুসলিম সৈনিকেরা শাহাদাতের পেয়ালা হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝঁাপিয়ে পড়ে প্রায় দুই হাজার শত্রæ সৈন্য খতম করে দিলেন। কিন্তু মুসলিম বাহিনী হতেও ঝরে পড়ল অনেকগুলো তরতাজা প্রাণ। ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের বা এজিদের বাহিনী পানির দখল নিয়ে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হুসাইন শিবিরে পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেল। কাসেমকে কোলে নিয়ে শত্রæদের কাছে এক কাতরা পানি প্রাথর্না করলেন। কিন্তু শিশু পুত্র আলী আকবর ও কাসেমের মৃত্যু হযরত হুসাইনকে আবারো যুদ্ধে ঝঁাপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করলো। তিনি অনেক শত্রæ নিধন করলেন। অবশেষে একটি তীর এসে তার শরীরে বিদ্ধ হলো। সাথে সাথে ঘোড়ার পৃষ্ঠ হতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। একটানে তীরটি বের করে ফেললেন ও শক্রদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকলেন। কিন্তু গÐদেশ হতে রক্তক্ষরণ তঁাকে দুবর্ল করে ফেলল। এ অবস্থায় পর পর কয়েকটি তীরবিদ্ধ হলেন হুসাইন (রাঃ)। অবশেষে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। কাফেররা তঁার মস্তক কাটার জন্য ইতস্তত করছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর পাষÐ নরখাদক শিমার হযরত হুসাইন (রাঃ) এর মস্তক কতর্ন করে খন্ডিত মস্তক নিয়ে এজিদের দরবারে পৌঁছালো। এই যুদ্ধে হযরত হুসাইন (রাঃ) -এর পুত্র জয়নাল আবেদীন ছাড়া সবাই শাহাদাতবরণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13611 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1