শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আনন্দ নেই মানুষের মনে

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা বছর ঘুরে আবার এলো মুসলমানদের জীবনে। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০ তারিখ আগামীকাল শনিবার ঈদুল আজহা পালিত হবে। প্রতিটি ঈদ মানুষের মনে আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও মহামারি করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে গত প্রায় ৫ মাসে মানুষের জীবনের গতি অনেকখানি বদলে গেছে। ভিন্ন জীবনযাপনে ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষ, কিন্তু কর্মহীন হয়ে পড়া কিংবা ব্যবসায় মন্দার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তারা। এরই মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে তান্ডব চালিয়ে গেছে, তার সঙ্গে এখনো লড়ছে উপকূলবাসী। আর এখন বন্যায় গ্রাস করেছে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা। খাবার জোগাতে যেখানে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে যেখানে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য কোথায়? করোনা ও বন্যার মতো দুর্যোগে সৃষ্ট এমন সংকটের কারণে মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায় ঠিক আগের দিনে চাঁদ দেখা নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই। ১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়াসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। ঈদুল আজহা দেশের মানুষের কাছে 'কোরবানির ঈদ' নামেই পরিচিত। কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। কিন্তু এবার সেই আমেজ নেই। প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশত মানুষ মারা যাচ্ছে। অনেকে হাসপাতালের বিছানায় মৃতু্যর সঙ্গে লড়ছেন। করোনা আক্রান্ত এই বিশাল সংখ্যক মানুষ যখন জীবন-মৃতু্যর সন্ধিক্ষণে কিংবা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তার কাছে ঈদের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। ইতোমধ্যে করোনায় যারা মারা গেছেন, স্বজনহারা পরিবারগুলো শোকে মুহ্যমান। তাদের মাঝে ঈদের খুশি নেই। এবার কোরবানির পশুর হাট বসেছে কম। গতকাল পর্যন্ত সেভাবে বেচাকেনা জমে উঠেনি। হাটে কোরবানির পশু কম, বিক্রিও কম। কারণ, করোনার আঘাতে মানুষের সামর্থ্যকে ছেঁটে ফেলেছে। কর্মহীন করে দিয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। আবার কর্ম থাকলেও বেতন নেই কিংবা অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন। কর্মজীবী এই মানুষের তো এই বেতনে জীবন চালানো দায়, সেখানে কীভাবে ঈদে পশু কোরবানি করবেন তারা? তবে এখন সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন। অনেক ফসলি জমি পানির নিচে। লাখ লাখ বাড়িঘরে মাচা বানিয়ে মানুষ জীবনযাপন করছে। খাবার পানির সংকট বেশি। পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বানভাসি মানুষ। অনেক গবাদি পশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সর্বোপরি বন্যার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় একশ মানুষ। বন্যাকবলিত ওই সব এলাকায় ঈদ কী হয়তো তাও বুঝতে পারছেন না তারা। এর আগে ২৫ মে ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। তখন প্রবল ছোঁয়াছে করোনাকে থামাতে সাধারণ ছুটির আড়ালে সারাদেশ কার্যত লকডাউন ছিল। তাই মানুষ ঘরবন্দি ঈদ উদযাপন করেছে। এখন সারাদেশে সংক্রমণ তখনকার চেয়ে বাড়লেও লকডাউন নেই। মৃতু্য আর করোনা আক্রান্তের সঙ্গে বসবাস করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে অনেকেই কোরবানির পশু কিনে ভবনের কার পার্কিং সামনের ফুটপাতে রাখতেন। এবার অনেক বাড়ি ও এলাকায় পশু রাখা নিষেধ করা হয়েছে। যার কারণে খোলা মাঠে এবার পশু কোরবানির সংখ্যা বেশি হতে পারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদগাহগুলোতে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে না। নিকটস্থ মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কোরবানির ইতিহাস: হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আলস্নাহ তাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই। ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে আলস্নাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আলস্নাহ তাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কোরবানি করতে উদ্যত হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আলস্নাহ তাআলার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে। পশু কোরবানি দেওয়া হলেও আলস্নাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য। এই ঈদে পশু কোরবানিই প্রধান ইবাদত। ঈদের জামাত আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কোরবানির জন্য। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। বাণী: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে