শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরানো চামড়া বিক্রি হয়নি নতুন কেনা নিয়ে সংশয়

হাসান আরিফ
  ২৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০
ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করছেন -ফাইল ছবি

ট্যানারিতে পুরানো চামড়ার মজুত রয়ে গেছে। এদিকে চামড়ার পিক সিজন কোরবানির ঈদ। এই সময় ট্যানারি শিল্পের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনায় অনীহা দেখাচ্ছেন। যদিও সরকার তাদের ঋণ সুবিধা এবং বকেয়া ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দিয়েছে। একই সঙ্গে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে চামড়ার দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের চামড়ার আন্তর্জাতিক মানদন্ড বা লেদার ওয়ার্কিং গ্রম্নপের সার্টিফিকেট (এলডবিস্নউজি) নেই। ফলে বাংলাদেশের চামড়া ইউরোপ-আমেরিকার প্রতিষ্ঠিত কোনো কোম্পানি আমদানি করে না। এ দেশের চামড়ার প্রধান আমদানিকারক চীন আর ইউরোপের নিম্নশ্রেণির কিছু ক্রেতা। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চামড়া আমদানি করে থাকে। ফলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।

সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। বাংলাদেশের মূল ক্রেতা চায়না এবার বাংলাদেশ থেকে চামড়া আমদানি না করায় এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে চায়না চামড়া আমদানি করে তা কমপস্নায়েন্স চামড়া হিসেবে ফিনিসগুডস তৈরি করে ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রি করত। কিন্তু ওইসব দেশ বাংলাদেশের চামড়াকে কমপস্নায়েন্স হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ, বাংলাদেশের এলডবিস্নউজি নেই। চায়নার এই চতুরতা ধরা পড়ায় তারা আর বাংলাদেশি চামড়াপণ্য ওইসব দেশে বিক্রি করতে পারছে না। ফলে চায়নাও আর তেমন একটা চামড়া আমদানি করছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা মহামারি। ফলে সব দিক থেকেই বিপাকে রয়েছে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ এনডিসি বলেন, এ ধরনের একটা কথা তিনিও শুনেছেন। তাই এই বিষয়ে কথা বলতে হলে খোঁজ নিয়ে বলতে হবে। তবে এটা ঠিক বাংলাদেশের চামড়ার এলডবিস্নউজি না থাকায় ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করে না। আর ভালো প্রতিষ্ঠান আমদানি না করলে ভালো দামও পাওয়া যাবে না বলে তিনি জানান। এজন্য এলডবিস্নউজির মানদন্ড অর্জন করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে বর্তমানে বিক্রয় মূল্য হিসেবে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা মূল্যের ওয়েট-বস্নম্ন এবং ৬-৭শ' কোটি টাকা মূল্যের ক্রাস্ট। নতুন করে চামড়া কিনে তা রাখার মতোও পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। তবে এবার যেন কিছুটা দাম পাওয়া যায়, সেজন্য কাঁচা চামড়া বা ওয়েট-বস্নম্ন লেদার রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনই রপ্তানির ঘোষণা দেওয়া হয়নি। বরং চামড়া নিয়ে যদি গতবারের মতো সমস্যা হয় তাহলে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

এদিকে, চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করলে কোরবানিদাতারাও পাবেন সামান্য কিছু টাকা। ফলে তারাও চামড়া বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এতে চামড়া সংগ্রহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এখন ভরসা শুধুমাত্র এতিমখানা। যদি তারা সঠিকভাবে চামড়া সংগ্রহ করে তাহলে এই সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

চামড়া শিল্পের বর্তমান অবস্থা আঁচ করতে পেরে ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে কোরবানির চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের সহজ শর্তে ৩ শতাংশ সুদে ৫-৬শ' কোটি টাকা ক্যাশ ক্রেডিট দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা।

গত বছর ট্যানারিগুলোর কেনার জন্য ঢাকায় গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দর ঠিক করে দিয়েছিল সরকার। এবার পশুর চমড়ার দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমানো হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ খাতে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় কমেছে ২৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া খাতে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

অর্থাৎ আয় কমেছে ২৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে আয় কমেছে ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ, চামড়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে ফুটওয়্যার রপ্তানিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107451 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1