বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বন্যার প্রভাবে রাজধানীর আশপাশেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবুজবাগের বিভিন্ন এলাকায় ঘরে পানি ঢোকায় আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছে এক দম্পতি -যাযাদি

দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অনেক এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে।

শহরাঞ্চলে সরকারি বিভিন্ন অফিসেও ঢুকেছে পানি। কোথাও কোথাও রেলপথও পস্নাবিত হয়েছে। ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে।

ঢাকার চারপাশে এই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সুখবর দিতে পারেনি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তাদের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সোমবার ঢাকার চারপাশের নদনদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে।

এছাড়া ঢাকার পাশের মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির খবর নেই। ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আজ আরও অবনতি হতে পারে। তবে গত কয়েক দিন উজানে যেভাবে ভারী বর্ষণ হয়েছিল, রোববার তেমনটি হয়নি।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর ও নওগাঁর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই বন্যা আগস্টেও ভোগাবে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

পাবনা :বেড়েই চলেছে পাবনার যমুনা নদীর পানি। আর বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে পদ্মার পানি। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে পাবনায় যমুনা-পদ্মাসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, সোমবার সকালে নগরবাড়ীর মথুরা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর পাকশী হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি ০.৮০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বন্যায় পানি বৃদ্ধির কারণে একদিকে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। আর পানিতে বিভিন্ন রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বেশ কিছু স্কুলের সম্মুখে। ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর সার্বক্ষণিক তদারকি ও পরিদর্শন করছেন স্থানীয় সাংসদ, জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

মাদারীপুর :প্রবল বর্ষণ ও অব্যাহত নদীর পানি বৃদ্ধিতে সোমবার মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির স্রোতের তীব্রতায় দ্রম্নত পানি প্রবেশ করে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর বেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ক্রমেই নতুন করে বন্যার পানিতে পস্নাবিত হচ্ছে জেলার বাকি ৩টি উপজেলা- রাজৈর, কালকিনি ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে এবং মাদারীপুর শহর আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ সেমি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে শিবচরের পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত, মাদবরেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এছাড়া নিম্ন কুমার নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধির ফলে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর, ইশিবপুর, বদরপাশা ইউনিয়ন ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল, বাহাদুরপুর, শিরখাড়া, ছিলারচর, পাঁচখোলা, কালিকাপুর, খোয়াজপুর, মস্তফাপুর, পেয়ারপুর, ইউনিয়ন পস্নাবিত হয়েছে। কালকিনি উপজেলার লক্ষ্ণীপুর, বাঁশগাড়ী, সাহেবরামপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদীর বাঁধ ও কাঁচাপাকা সড়ক ভেঙে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৯০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার বসতবাড়ি উঠান তলিয়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু। অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ফায়েজুর রহমান হিরু জানান, বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় লুন্দি মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন বন্যাকবলিত ইশিবপুর ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রটিসহ কয়েকটি পরিদর্শন করেছেন।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাদারীপুর শহরের পাশ দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, মাদারীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩,৭০০ পরিবার ও নদী ভাঙনে ৯৮২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ ইউনিয়ন একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮টি। সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ হবে অন্তত ৯০ হাজার। বন্যার পানি ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

পুনর্বাসনে জোর দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

বন্যা শেষ হলে সময়মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে বন্যা নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সচিব বলেন, 'পুনর্বাসন প্রোগ্রামগুলো যেন খুব ভালো হয়, খুব ইফেকটিভলি ও টাইমলি হয়, সেটার বিষয়ে মন্ত্রিসভা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিতে বলেছেন।'

চলতি মৌসুমে বন্যা শুরু হয়েছে গত ২৬ জুন। প্রথম ধাপে অন্তত ১০টি জেলায়, দ্বিতীয় ধাপে আরও আটটি জেলায় বিস্তার ঘটে বন্যার। ২৬ জুলাই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশের ৩১ জেলার নিম্নাঞ্চল তিন ধাপে পস্নাবিত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বন্যা নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কী করণীয়, তাও বলেছেন তিনি।

'এজন্য ফিল্ড লেভেলে ইন বিল্ড একটা ম্যাকানিজম আছে, তারপরও একটা এক্সটা অ্যাফোর্ড দেওয়া হচ্ছে, বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া আছে। কারণ আভাস আছে পানি নামতে দেরি হতে পারে, যদিও এখন পানি নেমে যাচ্ছে।'

আনোয়ারুল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমাদের ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছেন, বন্যার্তদের যত রকমের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার সবগুলো করতে হবে। কোভিডের এই সময় যেহেতু বন্যা, তাই একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হবে।'

বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হলেও জমিতে পলি পড়ার কারণে বন্যার পরের সুফলটা নিতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উঁচু এলাকায় আমনের ফলন ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে বলে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন।

'প্রধানমন্ত্রী ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন, রোপা আমনে যেন আমরা খুব অ্যাটেনটিভ থাকি। এর পুরো সুযোগটা যদি আমরা নিতে পারি তবে বোরোতে যে এক্সেস প্রোডাকশন হয়ে গেছে, আশা করা যাচ্ছে আমন ও রোপা আমন মিলে আমাদের উৎপাদন ভালো হলে আমাদের জন্য একটা বড় হাতিয়ার হবে।'

বন্যাদুর্গত এলাকায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট, বিশেষ করে গরু-বাছুরকে যে ভ্যাকসিন দেওয়ার, সেগুলো যেন সব নিয়মিত দেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'কোভিডের কারণে ত্রাণ সরবরাহের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ছিল। সবকিছু ওপেন করে দেওয়ায় ত্রাণের চাহিদা কমে গেছে। ভালো একটা রিলিফ আমাদের কাছে মজুত আছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107335 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1