বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়াটিয়া যেন অমাবস্যার চাঁদ

'গত ১০ বছরের কোনো মাসে ভাড়াটিয়াশূন্য ছিল না; কিন্তু গত চার মাস ভাড়াটিয়া ছাড়াই পড়ে আছে ফ্ল্যাটটি। আমার নিজেরও ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর ফ্ল্যাট ভাড়া না হওয়ায় বেশ বিপদেই আছি।'
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

স্বামীবাগের একটি বাড়ির অংশীদার শাহাদাত হোসেন। গত ১ মার্চ তার একটি ফ্ল্যাট থেকে চলে যান ভাড়াটিয়া।

টুকটাক কিছু কাজ করিয়ে এপ্রিল থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন শাহাদাত। সে সঙ্গে ভাড়াও বাড়ানোর ইচ্ছা ছিল এক থেকে দুই হাজার টাকা; কিন্তু গত চার মাসেও ভাড়া হয়নি ফ্ল্যাটটি। ভাড়া বাড়ানোর বদলে এখন কমিয়েও পাচ্ছেন না ভাড়াটিয়া।

৫ জুলাই বিকালে কথা হলো শাহাদাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এটা আমাদের পারিবারিক বাড়ি। আমার দুটি ফ্ল্যাট। একটিতে পরিবার নিয়ে থাকি, অন্যটি ভাড়া দিই। গত ১০ বছরের কোনো মাসে ভাড়াটিয়াশূন্য ছিল না; কিন্তু গত চার মাস ভাড়াটিয়া ছাড়াই পড়ে আছে ফ্ল্যাটটি। আমার নিজেরও ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর ফ্ল্যাট ভাড়া না হওয়ায় বেশ বিপদেই আছি।'

একই অবস্থা গেন্ডারিয়া ডিস্টিলারি রোডের বাড়িওয়ালা শাহিদুল হাসানের। তিনি বলেন, 'শুধু ঘরের সামনে নয়, মহলস্নার বিভিন্ন জায়গায় টু-লেট লাগিয়েছি; কিন্তু ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।'

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই নানা ঝামেলায় পড়তে শুরু করেন তারা। বিশেষ করে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরই অনিয়মিত হতে শুরু করে বাড়ি ভাড়া।

এ সংকট কাটতে না কাটতেই বাসা খালি করার যন্ত্রণায় পড়েন বাড়িওয়ালারা। করোনার কারণে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দেওয়ায় নতুন ভাড়াটিয়াও পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় অনেক বাড়ির ফ্ল্যাট এখন ফাঁকা।

গেন্ডারিয়ার ঢালকানগরের বাড়িওয়ালা মির্জা হাবীবুর রহমান বলেন, 'গেন্ডারিয়া এলাকায় আমার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। একটিতে আমি পরিবার নিয়ে থাকি, অন্যটি ভাড়া। যেটি ভাড়া দেওয়া ছিল, সেটির ভাড়াটিয়াও ভালো ছিল। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিয়ে দিতেন। করোনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়ায় মে মাসে এসে তিনি অ্যাডভান্সের টাকা থেকে বাসা ভাড়া কেটে নিতে বলেন। আমি মেনে নিই; কিন্তু ১ জুন তিনি দুই মাসের নোটিশ দিয়ে বাসা ছেড়ে দেন এবং এই ২ মাসের ভাড়াও অ্যাডভান্স থেকে কেটে নিতে বলেন।'

তিনি বলেন, '২ জুন আমি টু-লেট লাগিয়েছি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও আমি কোনো ভাড়াটিয়া পাইনি। জানি না, ১ আগস্ট নতুন ভাড়াটিয়া পাব কি না। আমার নিজের ব্যবসার অবস্থাও ভালো নয়। এখন আমি নিজেই বিপদের মুখে।'

টিকাটুলী এলাকার বাড়িওয়ালা মনোয়ার হোসেন বলেন, 'জানুয়ারিতে আমার বাসার একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা হয়। কিছু কাজ করানোর কারণে মার্চে নোটিশ দিই। আর এখন পর্যন্ত কোনো ভাড়াটিয়া পাইনি। অন্য ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দেওয়া নিয়েও ঝামেলা হচ্ছে। আমরা বাড়িটি বড় করতে ইতোমধ্যে ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেছি। এ অবস্থায় কী হবে বুঝতে পারছি না।'

এসব বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, 'করোনাভাইরাসের প্রভাবে সরকারি কর্মজীবী, কিছু সংখ্যক বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব পেশাজীবী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যেখানে পরিবারের জন্য প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করাই একটি চ্যালেঞ্জ, সেখানে 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দেখা দিয়েছে বাড়ি ভাড়া, গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল ও বিভিন্ন সার্ভিসের বিল। এ চাপ সহ্য করতে না পেরে আমাদের কাছে থাকা হিসাব মতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার লোক বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে ভাড়াটিয়া পরিষদ বাড়ি ভাড়ার অমানবিক চাপ থেকে অসহায় সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার কর্ণপাত করেনি। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার বাড়িওয়ালাদের কর মওকুফের মতো কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়ে করোনাকালে ভাড়া মওকুফ করে সারাদেশের অসহায় ভাড়াটিয়াদের পাশে দাঁড়াবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105100 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1