শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
শিক্ষকদের দেওয়া হবে নির্দেশিকা বই ও প্রশিক্ষণ

সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে 'করোনা অধ্যায়'

নূর মোহাম্মদ
  ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের ১১০টি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ ভাইরাস আগামী দু'বছর চলমান থাকতে পারে বলে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি সম্পর্কে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে টিচার গাইড (শিক্ষক নির্দেশিকা) দেওয়া হবে। পাঠদানের সুবিধার্থে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস বিষয়টি নতুন কারিকুলামে সংযোজন করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২ জুন রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ের পরিবেশ অধ্যায়ে করোনা বিষয়টি যুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে আরও কয়েক দফা এনসিটিবির (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, ভাইরোলজিস্ট, অতিমারী বিশেষজ্ঞসহ সবাইকে নিয়ে মিটিং করে চূড়ান্ত করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে করোনাভাইরাস বিষয়টি যুক্ত করতে। আমাদের ডাক্তার, ভাইরোলজিস্ট, অতিমারী বিশেষজ্ঞরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের নিয়ে সভা করতে না পারলে ২০২২ সাল থেকে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে করোনা বিষয়টি যুক্ত করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো. ফসিউলস্নাহ  বলেন, বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাস প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত; করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সে সম্পর্কে প্রাথমিকের শিশুদের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে ধারণা দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরের কারিকুলাম রিভিশনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আমাদের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব।

জানা গেছে, গত ২ জুন রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় ২০২২ সাল থেকে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় করোনার বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করতে এনসিটিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, আমাদের অন্য রকম পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্য সচেতনার বিষয়গুলো ছবি দিয়ে তুলে ধরব। প্রথম থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে হাইজিনের বিষয়ের সাথে চিত্রগুলো যুক্ত করা হবে। আর আলাদা একটি প্যাকেজ দেওয়ার কথা ভাবছি। তাতে টিচার গাইড দেওয়া হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা অনুযায়ী সচেতন করবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কীভাবে পড়াবেন তার ট্রেনিং দেওয়া হবে।

জানা গেছে, মূলত সচেতনতা বাড়াতে ২০২১ সালের পাঠ্যক্রমে করোনাভাইরাস বিষয়টি যুক্ত করার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পুরো ভারতজুড়েই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে জায়গা করতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। পিটিআই প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মূল বিষয় কীভাবে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতন বাড়ানো যায়।

জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে চীনে। ওই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। চীনে ২৩ কোটি ৩০ লাখ ও বাংলাদেশে ৩ কোটি ৬৭ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। বাংলাদেশে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ওই তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নাম। এ পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ থেকে বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। ইউনিসেফ গত মার্চে বিশ্বের ৭৩টি দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব শিশুর কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীদের মতামত জানতে চেয়েছেন তারা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে ইউনিসেফ। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের এই সময়টাতে পড়াশোনা থেকে আরও বেশি দূরে চলে যেতে পারে। তাদের পারিবারিক কাজে বেশি করে যুক্ত করার ফলে তারা পড়াশোনায় ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে। ঝরে পড়া শিশুদের মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা বেশি হতে পারে বলেও মনে করছে ইউনিসেফ। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও শিশুদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে ধারণা দিতে বিভিন্ন দেশের কারিকুলামে বিষয়টি যুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104782 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1