শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জয়-পরাজয়ের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত গাজীপুর

অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা আওয়ামী দলীয় তরুণ প্রাথীর্ জাহাঙ্গীর আলমের জয় এবং বিএনপি দলীয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ হাসান উদ্দিন সরকারের পরাজয়ের নেপথ্যের ডজনখানেক কারণ সুনিদির্ষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন
ফয়সাল খান, গাজীপুর থেকে
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ জুন ২০১৮, ২৩:৪৯

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের ফল ঘোষণা শেষে এবার জয়-পরাজয়ের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সেখানকার ভোটাররা। বিভিন্ন মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যদিও সাধারণ অংক কষে কেউই এ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না। তবে অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা আওয়ামী দলীয় তরুণ প্রাথীর্ জাহাঙ্গীর আলমের জয় এবং বিএনপি দলীয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ হাসান উদ্দিন সরকারের পরাজয়ের নেপথ্যের ডজনখানেক কারণ সুনিদির্ষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন।

তাদের ভাষ্য, বিএনপি প্রাথীর্ হাসান উদ্দিন সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ এবং দলের সাংগঠনিক দুবর্লতা নিবার্চনে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ধরপাকড় ও ভয়-ভীতি, গত ৫ বছর বিএনপি দলীয় মেয়রের ভ‚মিকা, আঞ্চলিক ইস্যু এবং প্রতিপক্ষের সক্রিয়তা তাকে যথেষ্ট পিছিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগে হাসান উদ্দিন সরকার নিবার্চন করার প্রস্তুতি ছিল না বলে মনে করেন রাজনীতিকরা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন নিয়ে বেসরকারিভাবে নিবাির্চত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এ নিবার্চনে লড়াইয়ের জন্য দীঘির্দন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের নিবার্চনের জন্য সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তে সিটি করপোরেশন নিবার্চন থেকে সরে দঁাড়াতে বাধ্য হন। ওই নিবার্চনে দলীয় প্রাথীর্ আজমত উল্লাহ খান বিএনপি প্রাথীর্র কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হলেও হাল ছাড়েননি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রতিটি ওয়াডের্, পাড়া-মহল্লায় সামাজিক কমর্কাÐে অংশ নিয়েছেন। নিজ নামে ফাউন্ডেশন চালু করে এলাকার শিক্ষাথীের্দর বৃত্তি দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের অধীনে যানজট নিরসনে ট্রাফিক সহায়কও নিয়োগ দিয়েছেন। শ্রমিক ও ভাসমান ভোটারদের মন জয় করতেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যার ফল তিনি এবারের নিবার্চনে পেয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনীতিক ও সাধারণ ভোটাররা।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে,

২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নিবার্চনে দেড় লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। এরপর গত ৫ বছর এ সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন তিনি। যদিও এর অধের্ক সময় তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। মেয়র থাকাকালে নগরীর উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে পারেননি তিনি।

৫ বছরেও কোনো মাস্টারপ্ল্যান করেননি, যা ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া হাসান উদ্দিন সরকারের বয়সও বিবেচনায় নিয়েছেন অনেকেই।

এদিকে আঞ্চলিকতার ইস্যুটিও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে এবারের ভোটে। রাজনীতিতে প্রবীণ হলেও টঙ্গী ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় তেমন প্রভাব নেই হাসান উদ্দিন সরকারের। অথচ জাহাঙ্গীর আলম গোটা গাজীপুরের প্রতিটি এলাকা দীঘির্দনের পরিশ্রমে অনেকটাই আপন করে নিয়েছিলেন।

স্থানীয় একাধিক বিএনপি কমীর্ জানান, হাড়িনাল এলাকায় কখনো আওয়ামী লীগ প্রাথীর্ জয়ী হয় না। শুধু হাসান সরকার এমপি নিবার্চন করার সময় একবার হেরেছিল বিএনপি। এবার এ এলাকার দুটি কেন্দ্রর মধ্যে এক কেন্দ্রে জাহাঙ্গীরের চেয়ে ২ ভোট বেশি পান হাসান সরকার। অন্যটিতে পরাজিত হন। তাছাড়া এ এলাকার সংসদীয় আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ প্রাথীর্ জয়লাভ করে আসছে। জয়দেবপুর, শালনা, কোনাবাড়ী ও টঙ্গী এলাকায় বতর্মান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অনেক অনুসারীও হাসান সরকারকে ভোট দেয়নি।

এদিকে স্থানীয় অনেকের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের হয়রানি ও হুমকি ছাড়াও হাসান উদ্দিন সরকারের পরজায়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে অপযার্প্ত নিবার্চনী প্রস্তুতি। দলীয় সিদ্ধান্তের আগে সাধারণ মানুষ বা নেতাকমীের্দর সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না বষীর্য়ান এ নেতার, যা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর রাতারাতি সব গুটিয়ে আনতে পারেননি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আগামী সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। সে হিসাব করেও অনেকেই জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিয়েছেন। কেননা বিগত কয়েক বছর ধরে গাজীপুরের মানুষ খুব কষ্টে আছেন। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বাথের্ অনেকে রাজনৈতিক ভেদাভেদ বিবেচনা না করে জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিয়েছেন।

এদিকে নিবার্চন পযের্বক্ষকরা মনে করেন, দীঘির্দন ধরে ক্ষমতায় না থাকার কারণে সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই দুবর্ল হয়ে পড়েছে বিএনপি। পুলিশ প্রশাসনের ধরপাকড়, স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকমীের্দর ভয়-ভীতির মধ্যে অনেকটা তটস্থ ছিল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেতাকমীর্রা। যে কারণে দলীয় মেয়রপ্রাথীর্র পক্ষে তেমন জোরালো ভ‚মিকা রাখতে পারেনি। তারা ভোট কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ করলেও এ ব্যাপারে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

এদিকে উন্নয়নের আশায় তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিয়েছেন নগরবাসী। এটি তার দীঘর্ পরিকল্পনার ফল বলেও মনে করছেন অনেকেই। স্থানীয়দের ধারণা, তরুণ, শ্রমিক ও ভাসমান ভোটাররা জাহাঙ্গীর আলমকে বেশি ভোট দিয়েছেন। শিক্ষাথীের্দর বৃত্তি প্রদান, ট্রাফিক সহযোহী নিয়োগ, সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, মানুষের কাছাকাছি থাকাসহ শেষ মুহ‚তের্ দলীয় কোন্দল নিরসনও তার জয়ের পেছনে বড় ভ‚মিকা পালন করেছে। গামের্ন্ট মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সুসম্পকর্, শ্রমিকবান্ধব নগরী গড়ার প্রতিশ্রæতি এবং বিপদ-আপদে নাগরিকদের পাশে দঁাড়ানোÑ ভোটারদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ধমীর্য় প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকমীের্দর সঙ্গে সুসম্পকর্ নিবার্চনী ফলে বড় ভ‚মিকা রেখেছে। তাছাড়া সরকারদলীয় প্রাথীর্ হওয়ায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় সুবিধা পেয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে