শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাধারণ মানুষ বড় অসহায়

হাসান মোলস্না
  ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০

দৈনিক মানবকণ্ঠের কম্পিউটার অপারেটর রাজা গত ৩০ মে প্রচন্ড কাশি, গলাব্যথা ও জ্বর নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়েছিলেন করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাতে। কিন্তু আগে থেকেই সিরিয়াল দেয়া না থাকায় তিনি পরীক্ষা করাতে পারেননি। পরে সিরিয়ালের জন্য নাম লিখালে তাকে ১৪ দিন পর তারিখ দেয়া হয়। আর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। সেই হিসাবে শুধু করোনায় আক্রান্ত কিনা, তা জানতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে তার। জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যদের জন্যই শুধু জাতীয় প্রেসক্লাবে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের পরীক্ষা করাতে গিয়ে ২০ দিনের দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৫০টি কেন্দ্রে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা করাতে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মুমূর্ষু রোগীর জন্য কোনো তদবির বা কারও সুপারিশও কোনো কাজে আসছে না। বলতে গেলে সাধারণ মানুষ একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

দিন যত যাচ্ছে, করোনা রোগীর সংখ্যা ততোই বাড়ছে। বাড়ছে মৃতু্যর সংখ্যাও। মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বেড়ে গেছে। সঙ্গত কারণে উপসর্গ থাকা না থাকা অনেকে পরীক্ষা করানোর জন্য চেষ্টা করছেন। আর করোনার বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় যে সর্বব্যাপী টেস্ট, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই বলে আসছে। কিন্তু এই টেস্ট করতে গিয়ে মানুষকে পড়তে হচ্ছে অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে। এর মধ্যে আগে থেকেই যাদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে, সেখানে সিরিয়াল পেতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ও লাগছে। আর সরাসরি গিয়ে যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন, তাদের অসুস্থ শরীর নিয়ে ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে। জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো অসুস্থ মানুষগুলোকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দফায় দফায় বৃষ্টিতে ভিজতে এবং রোদে পুড়তে হচ্ছে। করোনার উপসর্গ থাকা রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই লাইনে থাকে, ধাক্কাধাক্কি করে পরীক্ষা করার চেষ্টায় সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অর্ধশত শনাক্তকরণ কেন্দ্রের মধ্যে রাজধানীতে অনলাইনে ফরম পূরণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্র্যাকের নমুনা সংগ্রহের বুথের মধ্যে রয়েছে, মিরপুর-১৩ নম্বরের সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর ১৩ নম্বরের চার নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার, বাউনিয়া এলাকার আনোয়ারা মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, উত্তরা ছয় নম্বর সেক্টরের উত্তরা হাইস্কুল, মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন ১০ নম্বর কমিউনিটি সেন্টার, উত্তরখান জেনারেল হাসপাতাল, দক্ষিণখানের জামতলার নবজাগরণ ক্লাব, মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টার, মধুবাগের আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টার, নয়াপল্টনের পল্টন কমিউনিটি সেন্টার, জাতীয় প্রেসক্লাব, যাত্রাবাড়ী শহিদ ফারুক সড়কের ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার, দয়াগঞ্জ বস্তির সুইপার কলোনি, বাসাবো কমিউনিটি সেন্টার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, আমলিগোলা পার্ক ও কমিউনিটি সেন্টার, কামরাঙ্গীরচরের মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী কমিউনিটি সেন্টার, টঙ্গীর শহিদ আহসানউলস্নাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং নয়াবাজার মোড়ের হাজি জুম্মন কমিউনিটি সেন্টার। আর জেকেজি হেলথ কেয়ারের বেশ কয়েকটি বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর বাইরে প্রায় ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করালে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং হাসপাতালের প্রতিনিধির বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে সাড়ে চার হাজার টাকা লাগছে। নমুনা সংগ্রহের অর্ধশত কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও ভোগান্তি কমছে না। রোগীর সংখ্যা দ্রম্নত বৃদ্ধি, কিট স্বল্পতা, দক্ষ লোকবল সংকটসহ নানা কারণে ভোগান্তি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য মানুষের একটু অসুবিধা হতেই পারে। তবে তার হাসপাতালের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৯০টি পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্টাফ, ইনডোর রোগী এবং আউটডোর রোগী- এই তিনটি ভাগে ভাগ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে স্টাফ বা ইনডোর রোগী, যাদের প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে, শুধু তাদেরই পরীক্ষা করা হয়। উপসর্গ নেই বা অপ্রয়োজনীয় কারও পরীক্ষা করা হয় না। এর বাইরে আউটডোরের পরীক্ষা করানোর জন্য একটি ফরম আছে, যা হাসপাতালের স্টাফরাই পূরণ করে দেয়। এরপর সিরিয়াল অনুযায়ী, তাদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দিনে ৯০টি পরীক্ষা হয়ে গেলে ফরমের সিরিয়াল অনুযায়ী পরের দিন পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101127 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1