শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিবার্চন প্রত্যাখ্যান: ফের ভোট চায় বিএনপি

যাযাদি রিপোটর্
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ জুন ২০১৮, ২৩:৪৮

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের ফল ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান করে আবার ভোট দাবি করেছে বিএনপি। নিবার্চনের পরদিন বুধবার সকালে বেসরকারি ফল ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষে এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, গাজীপুরে নিবার্চনের নামে শুধু তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে তারা। দলীয় অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আমরা গাজীপুর সিটি নিবার্চনের ফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা এ নিবার্চনের ফল বাতিল করে আবার নিবার্চন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। জনগণকে এ ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহŸান জানাচ্ছি। কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে বড় ধরনের গোলযোগহীন গাজীপুর সিটি নিবার্চনে মেয়র পদে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ জাহাঙ্গীর আলম।

৪১৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি প্রাথীর্ হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীকে

পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। অথার্ৎ সাবেক সাংসদ হাসান সরকারের চেয়ে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। ১১ লাখ ৩৭ হাজার ভোটারের এ সিটি করপোরেশনে মোট কেন্দ্র ছিল ৪২৫টি। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও জালভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এ ৯ কেন্দ্রে সবের্মাট ভোট ছিল ২৩ হাজার ৯৫৯টি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৩ সালের নিবার্চনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ আজমতউল্লাহ খানকে এক লাখ ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিএনপি নেতা এমএ মান্নান। এবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নিবার্চনে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি প্রাথীর্ করে প্রবীণ নেতা হাসান সরকারকে। মিজার্ ফখরুল বলেন, খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে এ নিবার্চন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পূণর্ভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নিবার্চন কমিশনকে ব্যবহার করে নিবার্চনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, নিবার্চন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।

তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) আগের রাতেই অনেক ভোট দিয়ে দিয়েছে। এটা ভোটের পারসেনটেজ দেখলে বোঝা যায়। ভোটের টানর্ আউট কত আর টোটালটা কত? তা থেকেই বোঝা যায় যে, আগের রাতে ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি প্রাথীর্র অনেক এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, অনেককে বাসা থেকেই বের হতে দেয়া হয়নি। অনেককে পথেই বাধা দিয়ে রুখে দেয়া হয়েছে। এসব দৃশ্য গণমাধ্যম কমীর্রা গতকাল নিজেরাই দেখেছেন। এ ষড়যন্ত্রে সরকার, নিবার্চন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন এক হয়ে কাজ করেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, সরকার একটি নিবার্চনী প্রকল্প করেছে, তার অংশ হিসেবে খুলনায় যা ঘটিয়েছিল, গাজীপুরেও একই কাজ করেছে। সেই ‘নীলনকশার’ অংশ হিসেবে পুলিশের একটি অংশ ও নিবার্চন কমিশন মিলে একের পর এক নিবার্চনকে কব্জা করে চলেছে বলে মন্তব্য করেন খসরু।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে এই নিবার্চনী প্রকল্পকে ভেঙে দিতে হবে। সাম্প্রতিক ভোটগুলোতে কারচুপির অভিযোগ করলেও বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের আসন্ন নিবার্চনে অংশ নেবে বলে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান মহাসচিব ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারের নিলর্জ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নিবার্চনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নিবার্চনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বতর্মান জনবিচ্ছিন্ন সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন ও নিবার্চন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বমূলক এ নিবার্চনগুলোর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান মিজার্ ফখরুল ইসলাম। সে সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমানকে সরকার নীলনকশার গল্প সাজিয়ে গ্রেপ্তার করেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তারও মুক্তির দাবি জানান তিনি। গাজীপুর নিবার্চনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিএনপির এ নেতাকে সোমবার তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাযার্লয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিও উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে