শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যায় হাজি কামাল গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ জুন ২০২০, ০০:০০

স্বল্প অর্থে স্বপ্নের ইউরোপযাত্রার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের নিম্নবিত্তদের টার্গেট করে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা। ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই হয়ে মিসর ও পরে লিবিয়ার বেনগাজি-ত্রিপলি পাঠানো হয় তাদের।

এরপর ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথে ইউরোপযাত্রা শুরুর আগেই লিবিয়াতে নির্যাতন করে আদায় করা হয় বিপুল অংকের অর্থ। এই নির্যাতনে কেউ কেউ মারা যান। আবার কারও সলিল সমাধি ঘটে গভীর সমুদ্রে। স্বপ্নের ইউরোপযাত্রা শুধু থেকে যায় স্বপ্নের মতো করেই।

সম্প্রতি লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে

হত্যার ঘটনায় মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজি কামালকে (৫৫) আটক করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব-৩)।

রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুর এলাকা থেকে আটক কামাল প্রায় ১০ বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে বিদেশে গমনেচ্ছু নির্বাচন, লিবিয়ায় পাঠানো ও লিবিয়া থেকে ইউরোপ পাঠানো- এ তিনটি ধাপ অনুসরণ করে চক্রটি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলির্ যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।

আটক কামালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রকিবুল হাসান বলেন, বিদেশে গমনেচ্ছু নির্বাচনকালে এই চক্রের দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষের অল্প খরচে উন্নত দেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। বিদেশ গমনেচ্ছুদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট কেনা সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানেই করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের এককালীন বা ধাপে ধাপে টাকা পরিশোধের আশ্বাসে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ইউরোপ পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালরা সাত থেকে আট লাখ টাকার অধিক অর্থ নেয়। এর মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর আদায় করা হয়।

র্

যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, দেশ থেকে লিবিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালচক্র বেশ কয়েকটি রুট ব্যবহার করে। রুটগুলোতে সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে পরিবর্তন অথবা নতুন রুট নির্ধারণ করে। সম্প্রতি লিবিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-কলকাতা-মুম্বাই-দুবাই-মিসর-বেনগাজী-ত্রিপলি (লিবিয়া) রুট ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া গেছে।

দুবাইয়ে পৌঁছে ইউরোপ গমনেচ্ছুদের বিদেশি এজেন্টদের তত্ত্বাবধানে ৭ থেকে ৮ দিন রাখা হয়। বেনগাজিতে পাঠানোর আগে সেখান থেকে কথিত 'মরাকাপা' নামে একটি ডকুমেন্ট দুবাইতে পাঠানো হয়, যা দুবাইয়ে অবস্থানরত বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভিকটিমদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টরা মিসর ট্রানজিট নিয়ে তাদের লিবিয়ার বেনগাজিতে পাঠায়। বেনগাজিতে বাংলাদেশি এজেন্ট বেনগাজি থেকে ত্রিপলিতে স্থানান্তর করে।

ভিকটিমরা ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কথিত কয়েকজন এজেন্ট তাদের গ্রহণ করে। তাদের সেখানেই বেশ কয়েকদিন অবস্থান করানো হয়। এ সময়ে এজেন্টদের দেশীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে ভিকটিমদের আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।

এরপর ভিকটিমদের ত্রিপলির বন্দর এলাকায় একটি সিন্ডিকেটের কাছে ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ওই সিন্ডিকেট ভিকটিমদের সমুদ্রপথে অতিক্রম করার জন্য নৌ-যান চালনা এবং দিক নির্ণয়যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর নানাবিধ প্রশিক্ষণ দেয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোর রাতে একসঙ্গে কয়েকটি নৌ-যান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল হয়ে ইউরোপের পথে রওয়ানা দেয়। কখনো গভীর সমুদ্রেই দুর্ঘটনায় মৃতু্যবরণ করেন ইউরোপ গমনপ্রত্যাশীরা।

গত ২৮ মে লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা এবং আরও ১১ বাংলাদেশিকে আহত করা হয়। যারা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

আটক কামালের বিষয়ের্ যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, তিনি একজন টাইলস কন্ট্রাক্টর। এ কারণে অনেক শ্রমিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেসব শ্রমিকদের অধিক আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে আসছিলেন তিনি। সেখানে পৌঁছানোর পর নির্যাতন করে ভিকটিমদের পরিবারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হতো। গত ১০ বছরে অন্তত ৪০০ জনকে অবৈধ পন্থায় লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন তিনি।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101027 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1