শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
দ্বিতীয় পবের্ সুইডেন-মেক্সিকো

চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিশ্বকাপ শেষ

দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহাসিক জয়
রাজু আহাম্মেদ
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৮ জুন ২০১৮, ০২:১২
এ যাত্রায় জামাির্নকে বঁাচিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি ম্যানুয়েল ন্যয়ার। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে শেষ মুহ‚তের্ দুই গোল হজম করে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রæপ পবর্ থেকেই বিদায় নিয়েছে বতর্মান চ্যাম্পিয়নরা Ñওয়েবসাইট

আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন পরের আসরের গ্রুপপর্ব থেকেই ঝরে যাবে, এটা কি বিশ্বকাপের অলিখিত রীতি হয়ে গেল? ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালি আর ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেন বিদায় নিয়েছিল পরের বিশ্বকাপের গ্রুপ থেকে। বুধবার ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিও হাঁটল একই পথে। বুধবার কাজান অ্যারেনায় দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে ৮০ বছর পর বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।

কাজানে শেষ বাঁশি বাজার আগে দেখা গেল চরম নাটকীয়তা। সেই নাটকীয়তা মুষরে পড়া জার্মানদের চোখে-মুখে অবিশ্বাস- তাদের ‘রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ’। অথচ ২০১৪ সালে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ভেঙে বিশ্বকাপ জেতা দলটি রাশিয়ায় গিয়েছিল অন্যতম ফেভারিটের তকমা নিয়ে। কিন্তু শুরু থেকেই এই বিশ্বকাপ যে ফেভারিট তকমা মানছে না! চোখের জলে থমাস মুলার-ম্যানুয়েল ন্যয়ার-মেসুত ওজিলদের বিশ্বকাপ অধ্যায়ের ইতি ঘটল তো এ কারণেই।

যে জার্মানি ১৯৩৮ বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে পেরিয়ে গ্রুপপর্বের বাধা, ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচে যাদের নামের পাশে জয় লেখা হতো অবধারিতভাবে, তাদেরই কিনা বিদায় করে দিল দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ‘পুচকে’ এক দল! বিশ্বকাপে যে জার্মানি বরাবরই এশিয়ার দলগুলোর কাছে অজেয়, সেই জার্মানিকে হারের তেতো স্বাদ দিয়ে ইতিহাস গড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। জার্মানিকে পেছনে ঠেলে গ্রুপে তৃতীয় হয়েছে তারা, নিঃসন্দেহে এটা তাদের ফুটবল ইতিহাসে সেরা অর্জন হয়ে থাকবে।

চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি মুলার-ভের্নার-ক্রুস-ওজিলরা। কিন্তু কাক্সিক্ষত গোলটাই তারা এনে দিতে পারেননি জার্মানিকে। একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেছেন। যার দায় চুকিয়ে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ের দিনে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোয় নাম তুলেছে সুইডেন আর মেক্সিকো। গ্রুপের অপর ম্যাচে যারা একই সময়ে মুখোমুখি হয়েছিল ইয়েকাতেরিনবুর্গে। সেই ম্যাচে মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাছাইয়ের প্লে-অফ থেকে ইতালিকে বিদায় করে রাশিয়া বিশ্বকাপে নাম তোলা সুইডেন।

প্রথম দুই ম্যাচে জার্মানি আর দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আগেই শেষ ষোলোর পথে এগিয়ে ছিল মেক্সিকো। এরপরও শঙ্কা ছিল, তাদের জালে তিনবার বল পাঠিয়ে সেই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল সুইডেন। তবে আরেক ম্যাচে জার্মানি নিজেদের কাজটা করতে পারেনি। মেক্সিকো বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিতলেই চলত জার্মানদের, সেই ম্যাচে উল্টো হেরে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

দিনটা নিশ্চিতই জার্মানির ছিল না। ৭৫ শতাংশ সময় বলের দখল নিজেদের কাছে রেখেও কোনো গোল আদায় করতে পারেনি তারা। সেভাবে গোলের জোরালো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা। ১৪ মিনিটে মার্কো রেউসের কাছ থেকে বল পেয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন গোরেৎজা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের গায়ে লেগে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। ৩৯ মিনিটে একইভাবে সুযোগ নষ্ট করেছেন টিমো ভের্নার। কর্নার পায় জার্মানি। কর্নার থেকে আবার বল ভের্নারের পায়ে। তিনি বল বাড়ান ম্যাট হামেলসকে। এই ডিফেন্ডার শট নিয়েছিলেন, কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারেননি।

প্রথমার্ধে জার্মান আক্রমণগুলো ছিল এমনই ভোঁতা। সেই তুলনায় ২৫ শতাংশ সময় বলের দখলে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণগুলো ছিল বেশ জোরালো। ভাগ্য সহায় হলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত এশিয়ার দলটি। ১৯ মিনিটে দারুণ এক ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন জাং। তার শটে ফ্লাইট মিস করেছিলেন জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যয়ার। বল তার গায়ে লেগে ফিরে যায়, ফিরতি বলে গোলের চেষ্টা করেছিলেন সন হিউং-মিন। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে এযাত্রা কর্নারের বিনিময়ে জার্মানিকে রক্ষা করেন ন্যয়ার। একইভাবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জার্মানিকে গোলবঞ্চিত করেছেন কোরিয়ার গোলক্ষক চো হেউন-উ। গোরেৎজার দারুণ শর্ট দুর্দান্তভাবে রুখে দিয়েছেন তিনি।

এরপর আরও কত সুযোগ পেয়েছে জার্মানরা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার জমাট রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি তারা। উল্টো ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়া দেখিয়েছে চমক। অতিরিক্ত সময়ে কিম ইয়ং-গোউন (৯০+২ মিনিট) আর সন হিউং-মিনের (৯০+৬ মিনিট) গোলে জার্মানির বিপক্ষে ইতিহাসগড়া জয় তুলে নিয়েছে এশিয়ার দেশটি। যেভাবে ২০০২ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে কোরিয়ানদের হৃদয় ভেঙেছিল জার্মানরা, এদিন নির্দয়ভাবেই প্রতিশোধটা নিয়ে কোরিয়া।

এদিকে, আগের দুই খেলায় একটিতে জয় পাওয়া সুইডেনের জন্য মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার। শেষ ষোলোয় যেতে জয়ের বিকল্প পথ ছিল না তাদের সামনে। এরপরও সমীকরণ ছিল, জয়টা পেতে হতো যতটা সম্ভব বড় ব্যবধানে। কিন্তু ইয়েকাতেরিনবুর্গে প্রথমার্ধে কোনো গোলের দেখা পায়নি দলটি। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ২৪ মিনিটের ব্যবধানে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে নেয় তারা। ৫০ মিনিটে লুডিগ অগাস্টিনসনের গোলে এগিয়ে যায় সুইডেন। এরপর ৬২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে স্কোরলাইন ২-০ বানিয়ে ফেলেন আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ট।

ম্যাচে মেক্সিকোর হতাশা আরও বাড়ে ৭৪ মিনিটে। সুইডেনের অতর্কিত আক্রমণ রুখতে গিয়ে এডসন আলভারেজ নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দিয়েছেন। তাতে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে জয়ের সঙ্গে শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিতই করে ফেলে সুইডেন। আগের ম্যাচে জার্মানির কাছে হারের পর তাদের এমন দাপুটে প্রত্যাবর্তনে বিদায়ের শঙ্কায় পড়েছিল মেক্সিকো। কাজানে জার্মানিকে হারিয়ে সেই শঙ্কা দূর করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে