বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা তারকাদের বিজয় ভাবনা

আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। বিজয়ের এ দিনে উৎসবে মেতে উঠেছিল বাঙালি জাতি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মীরাও। মুক্তিযোদ্ধা তারকাদের বিজয় ভাবনা নিয়ে যাযাদির বিনোদনের আজকের এ আয়োজন।
নতুনধারা
  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সোহেল রানা

অনেক ক্ষেত্রে তারা অবহেলিতও হচ্ছেন

সোহেল রানা, চলচ্চিত্রাভিনেতা

১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা সোহেল রানা। তার অভিনীত ও প্রযোজিত 'ওরা ১১ জন' ছবিটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত ছবি। তিনি বলেন, 'আমরা মুক্তযুদ্ধ করেছিলাম একটি পতাকা, দেশ ও আত্মপরিচয়ের জন্য। আমরা তা পেয়েছি। আজ আমরা স্বাধীন হিসেবে বাংলাদেশকে পেয়েছি। লাল সবুজের পতাকা ও বাঙালি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি। এদিক থেকে আমার দুঃখ কিংবা হতাশা নেই। তবে কষ্ট লাগে তখন, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যখন প্রকৃত সম্মান পাই না। শুধু আর্থিক সুবিধাই বড় কথা নয়। আরও কিছু করার থাকে। আমি তো এতদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিতাম না। গত এক বছর ধরে নিচ্ছি। এর জন্য আমাকে দীর্ঘ সময় প্রসেস করতে হয়েছে। মাসিক যে টাকা পাচ্ছি তা নিজে ভোগ না করে এলাকার মসজিদে দিচ্ছি। বিজয়ের এ সময়ে এসে মনে হয় মুক্তিযোদ্ধারা আসলেই কী সম্মান পাচ্ছেন? অনেক ক্ষেত্রে তারা অবহেলিতও হচ্ছেন। তাদের যতটুকু সম্মান করা হয় মনে হয় তা হৃদয় থেকে নয়।' এ মুক্তিযোদ্ধা তারকা আরও বলেন, 'সরকার তাদের জন্য কয়েকটি সুবিধা দিতে পারেন। এর মধ্যে একটি ভিআইপি কার্ড, নির্ধারিত পোশাক, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং বেসরকারি হাসপাতালে শুধু ওষুধের দাম নিয়ে চিকিৎসা সেবা। এছাড়া রেল, স্টিমার ও বাসে সম্মানের সাথে যাতায়াত সুবিধা। এ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বারবার দৃষ্টি আকর্র্ষণ করা হলেও তা হচ্ছে না। এটা কী সরকারের জন্য অসম্ভব? শুধু শুধু পুরস্কার দেওয়াতে লাভ কী। আদরের নামে অনাদরের দরকার নেই।

আমাদের দেশ হবে মানবতার দেশ

ড. ইনামুল হক, নাট্যাভিনেতা

ড. ইনামুল হক ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন। তিনি বলেন, 'আমরা নাটক করতাম দেশের মানুষকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য। দেশের পক্ষে লড়ার জন্য। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এই জন্য যে, আমাদের দেশ হবে মানবতার দেশ। 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই'- এই কথার মর্ম ছিল মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু এখনো আমরা সেখানে পৌঁছতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তা ম্স্নান হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন লোকেরা ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ সময় পর ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসলে আবার আমরা স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আবার ক্ষমতায় আসেন তারা। এরপর জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ধীরে ধীরে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পাল্টে দেন। মানুষের মনে একবার কোনো ধারণা বা বিশ্বাস গভীর হলে তা সহজে সংশোধন করা যায় না।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হবে বর্তমান প্রজন্মের হাত দিয়েই

সুজেয় শ্যাম, সংগীতজ্ঞ

যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু, আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, আমাদের সেই স্বপ্ন কিন্তু আজও পূরণ হয়নি। কারণ রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, ঠিক তেমনি তারা এত বছর পরও ঐক্যবদ্ধ আছে। কিন্তু আমরা যারা দেশ স্বাধীন করার চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, তারা নানাভাবে নানা নামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে গেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে আমরা ইতিহাস রচনা করছি। এসব দেখে সত্যিই খুব কষ্ট হয়। আমরা মুখে বলি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি কিন্তু অনেকেই তা অন্তরে লালন করি না। আমরা অনেকেই নিজেদের স্বার্থের দিকেই বেশি খেয়াল রাখছি, যা আদৌ উচিত নয়। আমি রাজনীতি করি না, তবে সত্যিকার অর্থে মন থেকে ভালোবাসি বঙ্গবন্ধুকে। তিনি যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন হয়তো একদিন পূরণ হবে আর তা হয়তো হবে বর্তমান প্রজন্মের হাত দিয়েই। আমরা হয়তো দেখে যেতে পারব না। তবে এই শান্তি নিয়ে যেন মরতে পারি, বাংলাদেশ সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ার দায়িত্ব আমাদেরই

শাহীন সামাদ, সংগীতশিল্পী

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শিল্পী ছিলেন শাহীন সামাদ। ৩৬টি দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো 'তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর', 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে', 'রক্তের প্রতিশোধ রক্তেই নেব আমরা'। তিনি বলেন, 'আমরা এখন স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি। মহান বিজয়ের উলস্নাসের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রূপটি ফুটে ওঠে। এই বিজয় অর্জন না হলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। তবে পরাধীনতার রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা স্বাধীন জাতি। তাই বিশ্বের দরবারে এখন নিজেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি। ধীরে ধীরে আমাদের দেশ অনেক উন্নতির পথ ধরে হাঁটছে। মহান এই বিজয়ে নতুন প্রজন্মকে দেশকে ভালোবাসার আহ্বান জানাই। এই দেশ আমাদের মা। আমার বিশ্বাস প্রতিটি মানুষ যদি তার মায়ের মতো দেশটাকে ভালোবাসেন তাহলে দেশ সমৃদ্ধি লাভ করবে। আর নতুন প্রজন্মের হাতেই আমাদের আগামীর সম্ভাবনা। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ার দায়িত্ব আমাদেরই। আগামীর বাংলাদেশকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা করে সুন্দরভাবে পরিচালনার দায়িত্ব তরুণদেরই।

স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে

জিয়াউল হাসান কিসলু, অভিনয়শিল্পী

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। আমরা তো আসলে একটা চেতনার জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। এই সময়টাতে দাঁড়িয়ে আমি বলব, আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনার জায়গায় দাঁড়াতে হলে আমাদের আরও সংগ্রাম করতে হবে। একটা সাম্যবাদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম। যেখানে গরিব-ধনী সবার দেশ হবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন আমরা দেখি কেবল একটা শ্রেণিই ফুলে-ফেঁপে বড়লোক হয়ে উঠছে। অন্যদিকে অনেক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এটা কাম্য নয়। তবে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর। স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীতে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার প্রাণের বাংলাদেশের কাছে চাওয়া থাকবে। বাংলাদেশ হবে সব মানুষের। এখানে কেউ টাকার পাহাড় গড়বে, কেউ খাবারের খরচ জোগাতে পারবে না এটা দেখতে চাই না। সমতার ভিত্তিতে সব নাগরিক, সব জাতি-সম্প্রদায় মিলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই চাওয়া। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<80036 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1