বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টিভি নাটকে ভাষার বিকৃতি

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
সেকান্দার বক্স নাটকের দৃশ্যে আনিকা কবির শখ ও মোশাররফ করিম

নাটক বিনোদনের আলাদা একটি খোরাক। বহুকাল আগে থেকেই এর প্রচলন। নাটকের চমকপ্রদ সংলাপ দর্শকরা মনে রাখেন অনেকদিন। মুখে মুখে উচ্চারিত হয় নাটকের সংলাপ। একসময় টেলিভিশন নাটকে সংলাপের ক্ষেত্রে 'প্রমিত' বাংলা ভাষার শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও এখন চলিত ও আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারই চোখে পড়ে বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে ভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণ।

নাটকে ভাষার বিকৃতি এখন অনেকাংশে ভাঁড়ামির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। খুব কম নাটকেই দেখা যায় সঠিক বাংলা ভাষার ব্যবহার।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে শুদ্ধ ভাষাকে মিলিয়ে নতুন এক ধরনের ভাষা তৈরি করে কথা বলছেন একটি দল। এর বাইরে নয় আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও। অফিস-আদালতে ভাষাকে সম্মান জানিয়ে নিয়ম তৈরি করা হলেও মাতৃভাষার প্রতি অবহেলার এ প্রবণতা আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি। অথচ এ মাধ্যমগুলোতেই ফেব্রম্নয়ারি এলে বাংলা ভাষা নিয়ে তৈরি হয় নানা অনুষ্ঠান।

কর্মকর্তা আর নীতিনির্ধারকদের অন্তরে নয়, টিভি স্ক্রিনের এক কোণে স্থান পায় শহীদ মিনারের ছবি। এমনকি ভাষার মাসেও শুদ্ধ ভাষার ব্যবহারে কার্পণ্যতা করতে দেখা যায় নানা অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন নাটকের সংলাপে সারা বছরই আমরা শুনতে পাই অশুদ্ধ বাংলার ছড়াছড়ি।

ড. ইনামুল হক বলেন, 'নাটকের ভাষা বিকৃতির বিষয়টিকে আমি মোটেও ভালোভাবে দেখছি না। এ বিষয়টিতে আমি মোটেই খুশি না, বরং আমি খুবই আহত। আমাদের বাংলা ভাষার একটা প্রমিত রূপ রয়েছে, যা সবারই রপ্ত করা দরকার। আঞ্চলিক ভাষায় আমরা নাটক করতেই পারি কিন্তু সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষাটাও সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু নাটকের ক্ষেত্রে বিশেষ করে টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেও আঞ্চলিক ভাষাকে টেনে আনাটা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রাসঙ্গিক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ভাঁড়ামির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফলে নাটক হারাচ্ছে তার দর্শক। নাটকে যদি আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব নতুন প্রজন্মের ওপর পড়বে। তাই এখনই আমাদের জাতির ও নতুন প্রজন্মের স্বার্থে এদিকে নজর দেয়া উচিত।'

এ প্রসঙ্গে নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের বলেন, 'আসলে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখে না। এমনকি অনেকেই এ বিষয়ে জ্ঞান রাখার প্রয়োজনও বোধ করে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার বিকৃতিটাকে তেমন কিছু মনে হয় না অনেকের কাছে। আমাদের মনে রাখা উচিত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আমরা যেকোনো মাধ্যমে যা-ই করি না কেন, সেখানে শুদ্ধরূপে প্রমিত বাংলার ব্যবহার থাকা উচিত। আমরা যখন কোনো ভাষা উচ্চারণ করতে যাই তখন সে ভাষার অভিধানে যেভাবে উচ্চারণ রয়েছে সেভাবেই তা করা উচিত। যেমন, যদি কেউ ঢাকার আদি ভাষায় কোনো কিছু রচনা করতে চান, তাহলে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ গবেষণা করে লেখা উচিত। নাটক-সিনেমার সংলাপ লেখতে গেলেও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আমি মনে করি, নাটক-সিনেমায় যারা বাংলা ভাষাকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছেন তারা ঠিক করছেন না। ভুল পথেই হাঁটছেন তারা।'

সদ্য একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী লাকী ইনাম বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমার অভিযোগ বর্তমানে টেলিভিশন নাটকে প্রমিত বাংলা ব্যবহার হচ্ছে না। টিভি নাটকে বাংলাভাষা রুচিহীন হচ্ছে। যে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে সেই শুদ্ধ বাংলাভাষার ব্যবহার টিভি নাটকে নেই বললেই চলে। নির্দিষ্ট আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া অশুদ্ধ বাংলাভাষার ব্যবহার পরিহার করা জরুরি। ভাষার ব্যবহার ঠিক হলে বাকি সব ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।'

এ সময়ের অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা বলেন, 'আমরা একেকজনের সঙ্গে একেকভাবে কথা বলি। বাসায় যেরকম ভাষায় কথা বলি, অফিসে সেভাষায় কথা বলি না। বন্ধুর সঙ্গে একরকম ভাষায় কথা বলি, রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলি আরেকভাবে। ব্যক্তি ও পরিবেশ ভেদে ভাষার ব্যবহার হয়। নাটকের বেলায়ও তাই হয়। আমার কাছে এ বিষয়গুলো সমস্যা মনে হয় না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37876 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1