বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

চাঁদ
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
  ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বাংলায় চাঁদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে এসেছে। ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটির নাম ঞযব গড়ড়হ। মুন শব্দটি জার্মান ভাষাগোষ্ঠীর কোনো একটি থেকে এসেছে যার সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে লাতিন শব্দ সবহংরং।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার- যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার- যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। এটি প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পর পর চন্দ্রকলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রম আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্রকলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে।

পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

চাঁদ পৃথিবীকে প্রদিক্ষণ করতে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু সমসাময়িক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯.৫ দিন হিসাবে গণনা করে। চাঁদ পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদ একদিন বা ২৪ ঘণ্টায় ১৩ক্ক কোণ অতিক্রম করে। এ জন্য আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ দেখে থাকি। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পেয়ে থাকি।

ইতিহাস: পিথাগোরাসের সময়ে, চাঁদকে একটি গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মধ্যযুগে কিছু মানুষ বিশ্বাস করত যে চাঁদ হয়তো একটি নির্ভুলভাবে মসৃণ গোলক যা অ্যারিস্টেটলের তত্ত্ব সমর্থন করত এবং অন্যরা মনে করত সেখানে সাগর আছে (সাগর বলতে চাঁদের উপরিতলের অন্ধকার অঞ্চলকে বোঝায় যা চিত্র শব্দতে এখনও ব্যবহার করে)। ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও যখন তার দূরবীক্ষণ চাঁদের দিকে ধরলেন, তিনি দেখলেন যে চাঁদের উপরিতল মসৃণ ছিল না। তা ক্ষুদ্র কালো রেখা, উপত্যকা, পর্বত এবং খাদের গঠিত হয়। সেই মুহূর্ত থেকে তিনি অনুভব করতে শুরু করেন যে এটি পৃথিবীর মতোই একটি কঠিন গলিত পদার্থ ছিল- যা পরে এই রূপ নেয়। ১৯২০ সালেও মনে করত যে চাঁদের শ্বাস গ্রহণের উপযোগী বায়ুমন্ডল আছে এবং কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি ক্ষুদ্র বায়ুস্তরের উপস্থিতি আছে বলে অনুমান করত; কারণ চাঁদ পর্যবেক্ষণ সময় তারা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু উড়ন্ত বস্তু দেখে ছিল।

চাঁদই একমাত্র জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যাতে মানুষ ভ্রমণ করেছে এবং যার পৃষ্ঠতলে মানুষ অবতরণ করেছে। প্রথম যে কৃত্রিম বস্তু পৃথিবীর অভিকর্ষ অতিক্রম করেছিল এবং চাঁদের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তা হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা-১। লুনা-২ প্রথমবারের মতো চাঁদের পৃষ্ঠতলকে প্রভাবান্বিত করেছিল। চাঁদের দূরবর্তী যে অংশটা স্বাভাবিকভাবে লুকায়িত থাকে তার প্রথম সাধারণ ছবি তুলেছিল লুনা-৩। এই তিনটি ঘটনাই সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ সালে লুনা-৯ প্রথমবারের মতো চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে এবং লুনা-১০ প্রথমবারের মতো চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমণ করতে সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পালস্না দিতে অ্যাপোলো প্রকল্প শুরু করে। পরে ১৯৬৯ সালে, অ্যাপোলো-১১ অভিযান প্রথমবারের মতো চাঁদে মনুষ্যবাহী নভোযান অবতরণ করাতে সমর্থ হয়। নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন ছিলেন প্রথম মানুষ যারা চাঁদে হেঁটেছেন। পরে আরও ১০ মানুষ কেবল চাঁদে হেঁটেছিল। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়টি নভোযান চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। অ্যাপোলো অভিযানের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সব পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ২০০৯ সালে প্রথম দিকে ভারত, চন্দ্রযান নামে একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠায়। কিন্তু প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছার পর পরেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু অল্প সময়ে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা মানব জাতিকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে চাঁদে জীবের অস্তিত্ব থাকার কারণ সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে ২০১৯ সালে ২২ জুলাই ভারতের ইসরো, চন্দ্রযান-২ নামে পুনরায় একটি মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94015 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1