শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি (বাংলা দ্বিতীয় পত্র)

মো. ইমরান হোসেন, সহকারী শিক্ষক ইস্টার্ন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা য়
  ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
দীর্ঘতম নদী মেঘনা

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো

ভাব বিশেষণ

যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনামভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তাই ভাব বিশেষণ। ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যেমন :

১. ক্রিয়া বিশেষণ : যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন :

ক) ক্রিয়া সংঘটনের ভাব : ধীরে ধীরে বায়ু বয়।

খ) ক্রিয়া সংঘটনের কাল : পরে একবার এসো।

২. বিশেষণীয় বিশেষণ : যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন :

ক) নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।

খ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেট অতি দ্রম্নত চলে।

৩. অব্যয়ের বিশেষণ : যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন : ধিক্‌ তারে, শত ধিক্‌ নির্লজ্জ যে জন।

৪. বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করতে পারে তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন : দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।

বিভিন্নভাবে বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন :

ক) ক্রিয়াজাত : হারানো সম্পত্তি, খাবার পানি, অনাগত দিন

খ) অব্যয়জাত : আচ্ছা মানুষ, উপরি পাওনা, হঠাৎ বড়লোক

গ) সর্বনাম জাত : কবেকার কথা, কোথাকার কে, স্বীয় সম্পত্তি

ঘ) সমাসসিদ্ধ : বেকার, নিয়ম-বিরুদ্ধ, জ্ঞানহারা চৌচালা ঘর

ঙ) বীপ্সামূলক : হাসিহাসি মুখ, কাঁদো কাঁদো চেহারা, ডুবুডুবু নৌকা

চ) অনুকার অব্যয়জাত : কনকনে শীত, শনশনে হাওয়া, ধিকিধিকি আগুন, টসটসে ফল, তকতকে মেঝে

ছ) কৃদন্ত : কৃতী সন্তান, জানাশোনা লোক, পায়েচলা পথ, হৃত সম্পত্তি, অতীত কাল

জ) তদ্ধিতান্ত : জাতীয় সম্পদ, নৈতিক বল, মেঠো পথ

ঝ) উপসর্গযুক্ত : নিখুঁত কাজ, অপহৃত সম্পদ, নির্জলা মিথ্যে

ঞ) বিদেশি : নাস্তানাবুদ অবস্থা, লাওয়ারিশ মাল, লাখেরাজ সম্পত্তি, দরপত্তনি তালুক

বিশেষণের অতিশায়নের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন : যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর। বিশেষণের অতিশায়ন দুই প্রকার। যেমন : বাংলা শব্দের অতিশায়ন ও তৎসম শব্দের অতিশায়ন

বাংলা শব্দের অতিশায়ন

১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে : বাংলা শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে চাইতে, চেয়ে, হইতে, হতে, অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে তারতম্য বোঝাতে প্রথম বিশেষ্যটি প্রায়ই ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে এবং মূল বিশেষণের পর কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না। যেমন : গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।

২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন : অনেকের মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বোঝাতে মূল বিশেষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। মূল বিশেষণের আগে সবচাইতে, সবচেয়ে, সব থেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন : নবম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। ভাইদের মধ্যে বিমলই সবচাইতে বিচক্ষণ। পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।

৩. দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়ন : দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে হলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম, অধিকতর প্রভৃতি বিশেষণীয় বিশেষণ যোগ করতে হয়। যেমন : পদ্মফুল গোলাপের চাইতে অনেক সুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।

৪. ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত অতিশায়ন : কখনো কখনো ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত শব্দে ষষ্ঠী বিভক্তিই চেয়ে, থেকে প্রভৃতি শব্দের কার্যসাধন করে। যেমন : এ মাটি সোনার বাড়া।

তৎসম শব্দের অতিশায়ন

১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন : তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে 'তর' এবং বহুর মধ্যে 'তম' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন : গুরু-গুরুতর-গুরুতম। দীর্ঘ-দীর্ঘতর-দীর্ঘতম। কিন্তু 'তর' প্রত্যয়যুক্ত বিশেষণটি শ্রম্নতিকটু হলে 'তর' প্রত্যয় যোগ না করে বিশেষণের আগে 'অধিকতর' শব্দটি যোগ করতে হয়। যেমন : অশ্ব হস্তী অপেক্ষা অধিকতর সুশ্রী।

২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন : বহুর মধ্যে অতিশায়নে তুলনীয় বস্তুর উলেস্নখ না করেও 'তম' প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। যেমন : মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। দেশসেবার মহত্তম ব্রতই সৈনিকের দীক্ষা।

৩. দুয়ের মধ্যে তুলনায় অতিশায়ন (ঈয়স-প্রত্যয় ও ইষ্ঠ-প্রত্যয়) : তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে তুলনায় ঈয়স-প্রত্যয় এবং বহুর মধ্যে তুলনায় ইষ্ঠ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলায় সাধারণত ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয় না। যেমন :

মূল বিশেষণ দুয়ের তুলনায় বহুর তুলনায়

লগু লঘিয়ান লঘিষ্ঠ

অল্প কনীয়ান কনিষ্ঠ

(বাংলায় ব্যবহার নাই)

বৃদ্ধ জ্যায়ান জ্যেষ্ঠ

শ্রেয় শ্রেয়ান শ্রেষ্ঠ

উদাহরণ : তিন ভাইয়ের মধ্যে রহিমই জ্যেষ্ঠ এবং করিম কনিষ্ঠ। সংখ্যাগুলোর লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বের কর।

৪. ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ : ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত কোনো কোনো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ বাংলায় প্রচলিত আছে। যেমন : ভূয়সী প্রশংসা।

একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে প্রয়োগ

বাংলা ভাষায় একই পদ বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন :

১. ভালো

বিশেষণরূপে- ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন।

বিশেষ্যরূপে- আপন ভালো সবাই চায়।

২. মন্দ

বিশেষণরূপে- মন্দ কথা বলতে নাই।

বিশেষ্যরূপে- এখানে কী মন্দটা তুমি দেখলে?

৩. পুণ্য

বিশেষণরূপে- তোমার এ পুণ্য প্রচেষ্টা সফল হোক।

বিশেষ্যরূপে- পুণ্যে মতি হোক।

৪. নিশীথ

বিশেষণরূপে- নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি।

বিশেষ্যরূপে- গভীর নিশীথে প্রকৃতি সুপ্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84316 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1