শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

সমন্বিত বর্তনী
নতুনধারা
  ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়

একটি সমন্বিত বর্তনী অর্ধপরিবাহী উপাদানের উপরে নির্মিত অনেকগুলো আণুবীক্ষণিক ইলেক্ট্রনিক উপাদানের অত্যন্ত ক্ষুদ্র সমবায় বা বর্তনী, যাকে অতিক্ষুদ্র ও একটিমাত্র খন্ডবিশিষ্ট যন্ত্রাংশ হিসেবে উৎপাদন করা হয়। এটি মাইক্রোচিপ, সিলিকন চিপ, সিলিকন চিলতে, আইসি (ওহঃবমৎধঃবফ ঈরৎপঁরঃ) বা কম্পিউটার চিপ নামেও পরিচিত। বর্তমানে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন কম্পিউটার, টেলিফোন, গাড়ি, রুটি ছেঁকার যন্ত্র বা টোস্টার, বাসাবাড়ির বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ও বিপুলসংখ্যায় সমন্বিত বর্তনী ব্যবহৃত হয়।

সমন্বিত বর্তনীর গঠন: সমন্বিত বর্তনীর মূল অংশটি হলো অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি পাতলা অধঃস্তর। সাধারণত এক কেলাসবিশিষ্ট সিলিকনে ভেজাল উপাদান ঢুকিয়ে, ছড়িয়ে ও মিশিয়ে দিয়ে এটিকে অর্ধপরিবাহী পদার্থে পরিণত করা হয়। এরপর ইলেক্ট্রন রশ্মিপট্টি ব্যবহার করে এই সিলিকনের স্তরের উপর বর্তনীর নকশা খাঁজ করে কাটা হয়। সিলিকন স্তরের উপরে বহুসংখ্যক অতিক্ষুদ্র সক্রিয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ, নিষ্ক্রিয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং তাদের মধ্যকার ধাতব আন্তঃসংযোগগুলো সৃষ্টি করা হয়। সমন্বিত বর্তনীর ইলেক্ট্রনিক উপাদানগুলো সাধারণত আণুবীক্ষণিক হয়ে থাকে, এদের খালি চোখে দেখা যায় না। উপাদানগুলো একে অপরের থেকে পাতলা বিদু্যৎ-অপরিবাহী অন্তরক স্তরের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন থাকে। এভাবে সৃষ্ট সমগ্র বর্তনীটি একটি ক্ষুদ্র একখন্ড চিলতের মতো দেখায়, যার আকার মাত্র কয়েক বর্গমিলিমিটার থেকে কয়েক বর্গসেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমন্বিত বর্তনীর শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াতে ভিত্তি বা মাতৃকা হিসেবে সাধারণত সিলিকনের একটি ওয়েফার বা চ্যাপ্টা পাতলা চাকতি ব্যবহার করা হয়- যার ব্যাস হয় ৮ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। একেকটি ওয়েফারে একই রকমের শত শত সমন্বিত বর্তনী সারিবদ্ধভাবে উৎপাদন করা হয়। পরে ওয়েফারটিকে কেটে কেটে একেকটি সমন্বিত বর্তনী বা চিপ বের করা হয়। এভাবে তৈরি একেকটি চিপকে একটি পস্নাস্টিকের তৈরি অতিক্ষুদ্র চ্যাপ্টা বাক্সের ন্যায় মোড়কে আবদ্ধ করা হয়। মোড়কের গায়ে অনেকগুলো বহির্মুখী বৈদু্যতিক সংযোগ বা লিড থাকে যেগুলোর মাধ্যমে চিপটিকে মুদ্রিত বর্তনী পাতে সহজে অণুপ্রবিষ্ট করিয়ে অন্যান্য বর্তনী বা অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

সমন্বিত বর্তনীর প্রয়োগ: অতি বৃহৎ মাপের সমন্বিত বর্তনীর উদ্ভাবনের ফলে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিশালভাবে লাভবান হয়েছে। একটি ছোট কম্পিউটারের যৌক্তিকও গাণিতিক কাজগুলো বর্তমানে একটিমাত্র ভিএলএসআই চিপ ব্যবহার করে সম্পাদন করা যায়, যে বর্তনীটির নাম দেওয়া হয়েছে মাইক্রোপ্রসেসর। আর সমগ্র যৌক্তিক, গাণিতিক ও স্মৃতি সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডগুলো একটি মাত্র মুদ্রিত বর্তনী পাতের উপরে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি সমগ্র ব্যবস্থাটি একটি মাত্র চিলতে বা চিপের উপরেই বসানো সম্ভব। এরূপ একটি যন্ত্রকে "মাইক্রোকম্পিউটার" নাম দেওয়া হয়েছে। ইন্টেল করপোরেশন ১৯৭৪ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম ব্যবসাসফল সমন্বিত বর্তনী মাইক্রোপ্রসেসর চিপ বা চিলতেটি উদ্ভাবন করে- যাতে ৪৮০০টি ট্রানজিস্টর ছিল। ১৯৯৩ সালে এসে ইন্টেলের পেন্টিয়াম চিপে ৩২ লাখ ট্রানজিস্টর ছিল। ২০১৮ সালে এসে মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত সমন্বিত বর্তনীতে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ৬৯০ কোটিরও বেশি ছিল। আর একই সময়ে এ এম ডি কোম্পানির উদ্ভাবিত এপিক প্রসেসরের ট্রানজিস্টর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯২০ কোটি।

কম্পিউটার প্রযুক্তির বাইরে ভোক্তামুখী ইলেক্ট্রনিকস ক্ষেত্রে সমন্বিত বর্তনীর বদৌলতে বহু নতুন নতুন পণ্য নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে আছে ব্যক্তিগত গণকযন্ত্র বা ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, ডিজিটাল ঘড়ি ও ভিডিও গেম। ইতিমধ্যে বিদ্যমান বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন ও এদের খরচ কমানোর ক্ষেত্রেও সমন্বিত বর্তনী বিশাল ভূমিকা রেখেছে, যেমন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, টেলিভিশন, টেলিফোন, বেতার এবং উচ্চমানের শব্দ উৎপাদক যন্ত্র ইত্যাদি। মোটরযান নির্মাণ শিল্পে এই বর্তনীগুলোকে মান পরীক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এই বর্তনীগুলো শিল্পকারখানা, ঔষধশিল্প, স্থল ও বিমান যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

সমন্বিত বর্তনীর প্রকারভেদ: বর্তনীর অধঃস্তরের উপাদানের ওপর ভিত্তি করে সমন্বিত বর্তনী দুই ধরনের হতে পারে: এক, ঔপাদানিক (মনোলিথিক) এবং সংকর (হাইব্রিড)।

কী ধরনের ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে সমন্বিত বর্তনী মূলত দুই প্রকারের হয়। এগুলো হলো: বাইপোলার সমন্বিত বর্তনী ও ধাতব অক্সাইড অর্ধপরিবাহী সমন্বিত বর্তনী।

সমন্বিত বর্তনীর সমন্বয় ক্ষমতা অনুযায়ী এগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়:

১. ক্ষুদ্র মাপের সমন্বিত বর্তনী: এতে প্রতিটি চিপে ৫০-এর কমসংখ্যক উপাদান থাকে।

২. মাঝারি মাপের সমন্বিত বর্তনী: এতে প্রতিটি চিপে ৫০ থেকে ৫০০-র মতো উপাদান থাকে।

৩. বৃহৎ মাপের সমন্বিত বর্তনী : এতে প্রতিটি চিপে ৫শ থেকে ৩ লাখের মতো উপাদান থাকে।

৪. অতিবৃহৎ মাপের সমন্বিত বর্তনী: এতে প্রতিটি চিপে ৩ লাখের বেশি উপাদান থাকে।

প্রস্তুত প্রণালি : সমন্বিত বর্তনী প্রধানত চারটি উপায়ে তৈরি করা হয়।

\হ১. একখন্ডীয় বা মনোলিথিক পদ্ধতি;

\হ২. পাতলা ঝিলিস্ন বা থিন ফিল্ম পদ্ধতি;

\হ৩. স্থূল ঝিলিস্ন বা থিক ফিল্ম পদ্ধতি;

\হ৪. সংকর বা হাইব্রিড পদ্ধতি।

সমন্বিত বর্তনীর সুবিধা:

\হ১.এর সাহায্যে তৈরি বর্তনী আকারে বহুগুণ ছোট হয়।

\হ২. ওজনে হালকা।

\হ৩.একসঙ্গে অনেকগুলো চিপ তৈরি হয় বলে মূল্য খুবই কম।

\হ৪.কম বিদু্যতের প্রয়োজন হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107564 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1