শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

কুষ্ঠ
নতুনধারা
  ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়

কুষ্ঠ হ্যানসেনের রোগ (এইচডি) নামে পরিচিত। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি নামক ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে কুষ্ঠ রোগ হয়। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি ব্যাক্টেরিয়াটি খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এদের দ্বিগুণ হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে। কুষ্ঠ রোগ সাধারণত ত্বক, চোখ, নাকের মিউকাস মেমব্রেন, মস্তিষ্ক, মেরুদন্ডের বাইরের দিকের স্নায়ু এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নালির ক্ষতি করে। জিনগত কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের সংক্রমণের জন্য দায়ী হতে পারে। যে কোনো বয়সেই কুষ্ঠ রোগ হতে পারে। তবে সাধারণভাবে ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সি অথবা ৩০ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায়।

প্রকারভেদ : কুষ্ঠ রোগের কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি ব্যাক্টেরিয়া। শরীরের সংক্রমণকে কীভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে তার ওপর নির্ভর করে। একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়-

১. টিউবারকুলার লেপ্রসি

২. ইন্টারমিডিয়েট লেপ্রসি

৩. লেপ্রোমাটাস লেপ্রসি

মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি অপেক্ষাকৃত শীতল অঙ্গে বৃদ্ধি পায় (তাই চামড়া, নাক ও টেস্টিসে হলেও অন্তর্র্বর্তী অঙ্গ যেমন- ডিম্বাশয়ে সাধারণত হয় না)। এই ব্যাক্টেরিয়া এখনো শরীরের বাইরে গজানো যায়নি। ন'টি ডোরা বিশিষ্ট আর্মাডিলো নামক প্রাণীর শরীরের অভ্যন্তর অপেক্ষাকৃত শীতল হওয়ায় এর পুরো শরীরে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি গজানো যায়। নতুবা ইঁদুরের পায়ের পাতায় এদের গজানো যায়। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় ও দ্বিগুণ হতে সময় লাগে এক সপ্তাহ।

কীভাবে কুষ্ঠ রোগ ছড়ায় :

-নিঃশ্বাসের সঙ্গে এ রোগ ছড়াতে পারে।

-আক্রান্ত ব্যক্তির নাক-মুখ দিয়ে ঝরা সর্দির মাধ্যমে।

-কুষ্ঠ রোগীর স্পর্শের মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগ ছড়াতে পারে। তবে সাধারণত স্পর্শের মাধ্যমে এটি ছড়ায় না।

-আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘ সময় ধরে মেলামেশার ফলে কুষ্ঠ রোগ হতে পারে। অল্প বা সামান্য মেলামেশায় সাধারণত এ রোগ ছড়ায় না।

-অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলেও কুষ্ঠরোগ হয় না।

কুষ্ঠ রোগের ফলে সৃষ্ট জটিলতাগুলো-

কুষ্ঠ রোগের ফলে নানারকম জটিলতা হতে পারে। যেমন- কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পায়ের তালুতে ক্ষত সৃষ্টি হলে, হাঁটতে সমস্যা হতে পারে, নাকে ক্ষত সৃষ্টি হলে নাকে বেশকিছু সমস্যা হতে পারে, চোখে হলে গস্নুকোমা বা অন্ধত্ব হতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গ : কুষ্ঠ সংক্রমণের ৫ থেকে ৭ বছর পর সাধারণত কুষ্ঠ রোগের উপসর্গগুলো দেখা দিতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে উপসর্গগুলো বাড়তে থাকে।

-ত্বকে লালচে দাগ অথবা মসৃণ সাদাটে দাগ দেখা যায়।

-ত্বকের যেসব স্থান সংক্রমিত হয় সেসব জায়গায় পিন্ড দেখা যায় বা ফুলে যায়।

-স্পর্শ, ব্যথা এবং তাপমাত্রার অনুভূতি হ্রাস পায়।

-নিজের অজান্তেই কোনো ক্ষতি করতে পারে যেমন- শরীরের কোনো জায়গা আগুনে পুড়ে যাওয়া, কাটা ইত্যাদি। আবার অনেক ক্ষেত্রে, হাত বা পায়ের আঙ্গুল হারাতে পারে।

-টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠের ক্ষেত্রে, ত্বকে লালচে দাগের সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় মসৃণ সাদাটে দাগ হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থান অসাড় হয়ে যায়।

-লেপরোমেটাস কুষ্ঠের ক্ষেত্রে, ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক পিন্ড হতে পারে কিংবা অনেকখানি স্থানজুড়ে নানান আকারের লালচে দাগ হতে পারে, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের বেশির ভাগ স্থান অসাড় হয়ে যায়।

-বর্ডারলাইন কুষ্ঠের ক্ষেত্রে, টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠ এবং লেপরোমেটাস কুষ্ঠের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকে।

রোগ নির্ণয় : চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানের ত্বকের টিসু্য পরীক্ষা এবং রক্তের পরীক্ষা করতে হতে পারে।

কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধে করণীয়

অআক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নিঃসৃত তরলজাতীয় পদার্থ যেমন- নাক-মুখ দিয়ে ঝরা সর্দির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।

অআক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে মেলামেশায় কুষ্ঠের সংক্রমণ হতে পারে।

অপরিবারে কেউ এ রোগে আক্রান্ত থাকলে জীবাণুর সংক্রমণে কুষ্ঠ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

অআক্রান্ত রোগীর ত্বকের ফুসকুড়ি এবং ফুসকুড়ি থেকে নিঃসরিত পদার্থের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।

অবিসিজি টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

চিকিৎসা: সাধারণত কুষ্ঠ রোগে মৃতু্যর হার অত্যন্ত কম। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা সাধারণত রোগের ধরন, মাত্রা, রোগীর বয়স ইত্যাদি কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সব বিষয় বিবেচনা করে প্রধানত দুভাবে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমন- দীর্ঘ সময় ধরে এন্টিবায়োটিকজাতীয় ওষুধ সেবনের মাধ্যমে অথবা ড্যাপসোন দিয়ে সারাজীবন ধরে চিকিৎসা। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে অনেক মানসিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার নতুন কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। অপুষ্টি ও সচেতনতার অভাবেই এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমেই এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব। কুষ্ঠ কোনো মরণব্যাধি নয়, এটিকে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101259 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1