মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল থাকুক

গোপাল অধিকারী ঢাকা
  ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ইতিহাস বলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই থেকেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। আর এর পেছনের ইতিহাসটা লম্বা। ১৭৫৭ সাল। যেদিন স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কিছু আত্মীয় মহলের চক্রান্ত ও অসযোগিতায় নবাব পরাজিত হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। সেই থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ চলে যায় ব্রিটিশদের অধীনে। চলে কোম্পানি আর ব্রিটিশদের শাসন। ব্যবসা করার জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে আসলেও বাংলার জমি সোনার চেয়েও খাঁটি যা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি ব্রিটিশরা। পাঁয়তারা করে দেশকে শাসন করার। এভাবে চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন। তাই তো বলা প্রায় ২০০ বছর স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত ছিল। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের অত্যাচারে ভারতীয় উপমহাদেশ শোষিত হয়েছে সেই অর্থে বলা সূর্য অস্তমিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়। তার আগে বঙ্গভঙ্গসহ বিভিন্ন কৌশলে ব্রিটিশরা শাসনমেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তৎকালীন সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান। তখনও আজকের বাংলাদেশ শোষিত। খেলাটা একই ছিল শুধু খেলোয়াড় পরিবর্তন হয়েছিল। যার প্রথম প্রমাণ মেলে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাঁয়তারা করার মধ্যদিয়ে। কিন্তু তা সফল হয়নি। ভাষার জন্য রাজপথে মিছিল করে জীবন দিয়ে বাঙালি জাতি পৃথিবীতে প্রথম বুঝিয়ে দিয়েছে তারা আন্দোলন করতে পারে। তারা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে। সেদিন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহিদদের রক্ত বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিল। সেদিনের সেই ইতিহাস নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রেরণ জুগিয়েছিল। সাহস জুগিয়েছিল পরবর্তী সব আন্দোলন সংগ্রামের। যার প্রতিদানস্বরূপ ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা যার প্রথম দফাই ছিল স্বায়ত্তশাসনের, ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যত্থান এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে। ৭০ নির্বাচন দিয়ে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ওই পাকিস্থানিরা শুরু করে ক্ষমতা দেওয়ার নামে টালবাহানা। আলোচনার কথা বলে ২৫ মার্চ রাতে আকস্মিকভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা। সেদিন রাতেই চলে আপারেশন সার্চ লাইট। হত্যা করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। দিনটি 'গণহত্যা দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের এদিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে পরিচালিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করা। সেই রাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংসতা চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বাঙালির অদম্য মনোবলের কাছে ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালির স্বাধীকার আদায়ে প্রেরণা জুগিয়েছিল। মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনেছিল। সেদিন যদি এই ঘোষণা না আসত তাহলে হয়তো বা আমাদের বিজয়ের দিন দেরি হতো। জাতি হতো দিশাহারা। ২৬ মার্চের ঘোষণা জাতিকে একটি পথ দেখিয়েছিল। সবাই একটি লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলে। ২৬ মার্চ আমাদের সেই লক্ষ্যটা নির্ধারণ করে দেয়। যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার মনে হয় বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস একটি স্বাধীনতা প্রত্যাশী দেশকে অনুপ্রেরণ জোগাবে। শুধু দেশ নয়- একটি ব্যক্তি মনেও জোগাবে সাহসের বাতি। স্বাধীনতার সেই সূর্য উজ্জীবিত হোক। আলো ছড়াক সকল প্রাণে। জেগে উঠুক বাংলা স্স্নোগান বলি 'জয় বাংলা'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94427 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1