শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ভাষার সমৃদ্ধিই হোক আজকের অঙ্গীকার

অমর একুশে

নতুনধারা
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বাঙালির জাতীয় আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার দাবিকে উচ্চে তুলে ধরার ঐতিহাসিক মাইলফলক দিবস আজ। আজ মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারি, ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বলাই বাহুল্য, একুশ আমাদের বারবার 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো'র কথা মনে করিয়ে দেয়। একুশ আমাদের 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দুর্বার আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। একুশ 'বায়ান্ন' সালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রাণ হারান সালাম, বরকত, রফিকের মতো বীর ভাষাসৈনিকরা। ঢাকার পিচঢালা পথ শহিদের রক্তে রঞ্জিত হলেও বাঙালি জাতি সব প্রতিবন্ধকতাকে দলে-মুচড়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার কণ্ঠে সমস্বরে ধ্বনি তুলল- 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। যে কারণে বাঙালি জাতির চেতনা গঠনের পাঠশালা বলা হয় শহিদ মিনারকে। '৫২-র ২১ ফেব্রম্নয়ারি পাকিস্তানি শাসকের বুলেট বাংলার বুকে গড়ে দেয় এই সম্মিলনী কেন্দ্র। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দাবানলের শিখা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি নিয়ে প্রতি বছর হাজির হয় আমাদের সামনে। ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে শহিদ মিনার এখন সারা দেশে, সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে সগৌরবে জানান দিচ্ছে ভাষার দাবিতে বাঙালির বীরত্বগাথা, যা বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

কিছুতেই ভুলে যাওয়া যাবে না, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরপরই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব রোপিত হয়েছিল। সেই রোপিত বীজের নাম ভাষা আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদ উঠেছিল ভাষার দাবিতে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ইতিহাসে এ সম্ভাবনাময় দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামের এক ভূখন্ডের লড়াইয়ে লিপ্ত বাঙালি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদ হয়েছে বাংলাদেশের ভাষাপ্রাণ মানুষ। মূলত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের প্রকৃত ভিত্তি। তবে এ ক্ষেত্রে তমদ্দুন মজলিসের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। ভাষার মাস এলেই সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর দাবি ওঠে আবার মাস শেষ হলেই ভুলে যাই সবই। অথচ যেভাবেই হোক দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের পাশাপাশি ভাষার সমৃদ্ধি ঘটানো অত্যন্ত যৌক্তিক।

সংশয়হীনভাবেই বলা যায়, একুশে ফেব্রম্নয়ারির প্রধান লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং গড়ার পরে এগিয়ে যাওয়া- স্বাধীনতা, মৈত্রী ও সাম্যের লক্ষ্যে। একুশ কারও সঙ্গে আপস করেনি। কেননা, সে জানে কোনো আপসই নিজের শর্তে হয় না, হয় নিঃশর্তে। ভাষা আন্দোলনের পথই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ। বাংলাভাষা কতটা প্রচলিত হচ্ছে তার নিরিখে বিচার করলেই বোঝা যাবে গণতন্ত্রের দিকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কিংবা এগোইনি। দেশের শিক্ষা মোটেই সর্বজনীন হয়নি এবং শিক্ষিতরাও বাংলাভাষা চর্চায় অধিক আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তাও নয়। বীর এখন তিনিই, যিনি ইংরেজি ভালো জানেন। না, উর্দুর পক্ষে এখন কেউ বলবে না; কিন্তু বাংলার পক্ষে আন্তরিকভাবে কথা বলবেন, কাজ করবেন এমন মানুষও সমাজে খুবই কম। আর এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বাংলাভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের আরও যত্নবান হওয়া কর্তব্য। বাংলা ভাষা যদি তার মাধুর্য, সুষমা ও আকর্ষণ হারায়, তাহলে এর চেয়ে ভাষিক নৈরাজ্য আর কী হতে পারে!

স্মর্তব্য যে, ভাষা শহিদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি 'মায়ের ভাষার' মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নবপ্রেরণা পেয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ভাষা-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেলে বসেও। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে বাঙালি স্বাধিকার আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে মাতৃভাষাকে আত্মস্থ করা এবং বাংলা ভাষায় সুন্দরভাবে কথা বলা গৌরবের হওয়া উচিত। নিজেদের কাছেই যদি মাতৃভাষা কোণঠাসা হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে এটা অত্যন্ত লজ্জার। আমাদের দেশের স্বাধীনতা পেতে লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়, ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতেও প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনার মধ্যেও ভাষা আন্দোলনের চেতনা মিলে-মিশে একাকার। এই দেশকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। বাঙালি জাতি এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন করছে। একুশের চেতনা বিকাশে ও বাংলা ভাষার মর্যাদা ও সমৃদ্ধির প্রশ্নে কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। মুজিববর্ষে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ঘটানোই হোক অন্যতম অঙ্গীকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89366 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1