মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমন সংগ্রহে চ্যালেঞ্জ

বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে
নতুনধারা
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

চলতি মৌসুমে সরকারের আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংগ্রহের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও খাদ্য অধিদপ্তর যে ধান ও চাল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে তার পরিমাণ সামান্যই। আর এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ খাদ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের আমন সংগ্রহ জোরদারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। শনিবার যায়যায়দিনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমন সংগ্রহ শুরু করতে বিলম্ব এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে খাদ্যশস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বল দিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উলেস্নখ করা যেতে পারে, গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আমন সংগ্রহ অভিযান। আর ৬ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ৪ লাখ ৫৩ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি ২৮ তারিখের মধ্যে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এই পরিমাণ মাত্র ৫০ শতাংশ। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৫০ শতাংশ আমন সংগ্রহ সম্ভব নাও হতে পারে। এর পেছনের অন্যতম একটি কারণ হলো, চলমান আমন ক্রয় নির্ধারিত তারিখের এক মাস পর শুরু হওয়া। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা না গেলে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে অধিদপ্তর। খাদ্যের মজুত গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের সংগ্রহের বড় একটি অংশ আমন থেকে করতে চাচ্ছে সরকার। সংকটকালে বাজার নিয়ন্ত্রণে এই মজুত সরকারের অন্যতম হাতিয়ার। একই সঙ্গে কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও এই সংগ্রহের অন্যতম উদ্দেশ্য। এবারই প্রথম আমনের মৌসুমে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এ বছর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ৬ লাখ টন আমন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৩৬ টাকা দরে সাড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনা হচ্ছে। এবার আমনে 'কৃষকের অ্যাপ'-এর মাধ্যমে দেশের ৮ বিভাগের ১৬ উপজেলায় এই সংগ্রহ অভিযান চলমান। কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে লটারির মাধ্যমে। এরপরও কৃষক নির্বাচন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্ক ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, যারা কখনো কোনো দিন ধান চাষ করেননি তাদের নামও লটারিতে উঠেছে। তাদের টিকিট কিনে নিচ্ছে কিছু দালাল। সেই দালালরাই খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে। অথচ সরকার প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বলাই বাহুল্য, দেশের দরিদ্র কৃষক প্রাণান্ত পরিশ্রম করে যে ধান উৎপাদন করে, বরাবরই তারা সেই ধানের ন্যায্য দাম পায় না। এর কারণ উৎপাদন মৌসুমে ধানের দাম অত্যধিক কমে যাওয়া। আবার উৎপাদন খরচের জন্য যে ধার-দেনা করা হয়, তা মেটাতে গিয়ে ধান বিক্রিরও কোনো বিকল্প থাকে না তাদের সামনে। গরিব কৃষকদের এই দুরবস্থা থেকে রক্ষা করতেই সরকার উৎপাদন মৌসুমে ধান কেনার কর্মসূচি নেয়। কিন্তু তার সুফল খুব একটা পাওয়া যায় না। প্রায়ই দেখা যায়, সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় দেরিতে, তত দিনে গরিব কৃষকরা ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। আবার ধান ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অসততা এবং ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশে যে ধান কেনা হয়, তাতে গরিব কৃষকের অংশ খুব কমই থাকে। এবার আমন মৌসুমেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও প্রকৃত কৃষকরা তার সুফল পাচ্ছেন না কেন এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া কর্তব্য।

ধান-চাল সংগ্রহ সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা মনে করি, যারা এই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা আবশ্যক। সময়মতো অভিযান শুরু করা না গেলে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কিংবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় সেটাও সংশ্লিষ্টরা অবগত। ফলে এ ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হতে হবে। সরকার সারা দেশে ২০০ খাদ্য গুদাম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জরুরি বিবেচনায় তা দ্রম্নত সম্পন্ন করতে হবে। প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্টরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে যাতে, আমন সংগ্রহ অভিযান সর্বতোভাবে সফল হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88712 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1