শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতন

সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি
নতুনধারা
  ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

দেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ। ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির বিষয় স্পষ্ট দিক হলো স্থানীয় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত ব্যর্থতা।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ৩ স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। রোববার রাতে উপজেলার সাতকোয়া বন এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীদের এক অভিভাবক বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। ওই তিন জন ঘাটাইলের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী। মামলা ও ছাত্রীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রোববার বিদ্যালয় থেকে চার ছাত্রী তাদের দুই বন্ধুর সঙ্গে উপজেলার সাতকোয়া বন এলাকায় বেড়াতে যায়। সন্ধ্যায় ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত তাদের অপহরণ করে সাতকোয়া বনের গভীরে নিয়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীদের পরিবারের কাছে ফোনে মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্বৃত্তরা তিন ছাত্রীকে ধর্ষণ ও আরেক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে পালিয়ে যায়। ওই ৩ স্কুলছাত্রীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনা অত্যন্ত পীড়াদায়ক।

\হআমরা কোনোভাবেই সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি না। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। আমরা এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। অবাক ব্যাপার যে, যৌন নির্যাতন করছে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারী, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা, ধনীর দুলাল। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ। রাস্তাঘাটে, রেস্তোরাঁয়, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এই পৈচাশিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের নারী ও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকারই কেবল হচ্ছে না, এমনকি ধর্ষণের পর খুনও হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, অবমাননা এবং এর বিয়োগান্তক পরিণতি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। পৃথিবীব্যাপীই ঘটছে, তবে ইদানীং বাংলাদেশে যেন এর জোয়ার এসেছে। অপরাধীরা তো এ মানব সভ্যতারই অন্তর্গত; আমাদের চারপাশেরই বাসিন্দা। সবাই কোনো না কোনো পরিবারেই বেড়ে উঠেছে। সে পরিবার থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছিল- এটাই আমাদের প্রশ্ন।

আমাদের দেশেও নারী নির্যাতন রোধে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। শুধু আইন তৈরি ও পাস নয়- সংশ্লিষ্ট মহলকে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা উচিত। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে? সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা। তাদের নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণ করার পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। পরিবার মামলা করেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সমাজ কি এভাবেই চলতে থাকবে, কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে? যে করেই হোক সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর দায়িত্ব সরকারের। সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন হলে চলবে না। মনে রাখতে হবে নারী স্বাধীনতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আসুন আমরা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হই এবং গড়ে তুলি সামাজিক আন্দোলন। এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86405 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1