বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যার নাম। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, গরিব দেশগুলো এ সমস্যার নিত্যকার শিকার। বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে মানব পাচার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া এমন ঘটনা পুরোপুরি থামাতে না পারা এবং মানব পাচারসংক্রান্ত মামলাগুলোর জট ছাড়াতে না পারায় আন্তর্জাতিক চাপেও রয়েছে দেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদনে আরও অবনমনের শঙ্কায় রয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

প্রসঙ্গত, মানব পাচার বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশের তিন পাশেই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় বেশিরভাগ মানব পাচারের গন্তব্য হয়ে থাকে ওই দেশের বিভিন্ন শহর। আর এর শিকার হচ্ছেন মূলত গরিব ও অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত নারীরাই। তথ্য মতে, ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে সীমান্ত অতিক্রমের পরই তারা বুঝতে পারেন পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, সরকারি হিসাবে, দেশের ১৭টি জেলা থেকে প্রতিবছর ভারতে অনেক নারী পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী পাচার হয় যশোর, নড়াইল ও খুলনা থেকে। এমন তথ্য উঠে এসেছে যে, বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সত্ত্বেও পাচারকারীদের ঠেকাতে পারছে না সরকার। এ ছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, সাগরপথে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যাওয়ার নামে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটে থাকে। অন্যদিকে উন্নত জীবন ও ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের ঘটনাতেও মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্ন দেশের আদালতে দন্ডিত হয়ে বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হলে কূটনৈতিক চেষ্টায় তাদের ছাড়িয়ে দেশে ফেরার উদ্যোগ নেয় বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। তবে এমন ঘটনাগুলো পুরোপুরি রুখে দেয়ার মতো সক্ষমতা পুরোপুরি অর্জনে সক্ষম হয়নি বাংলাদেশ- এমনটিও জানা গেছে।

আমরা বলতে চাই, মানব পাচার সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিলে যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা সুখকর নয়। এই উৎকণ্ঠাজনক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। জানা গেছে যে, মানব পাচার অপরাধটি জটিল; কারণ, এর একটি বড় অংশ দেশের বাইরে সংগঠিত হয়। সেখানে দেশের আইন কাজে আসে না। এ ছাড়া এই গত তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার (ট্রাফিকিং ইন পার্সন) প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে- এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন সময়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে যে, মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যান। এ ছাড়া মানব পাচারের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন নারীরা- অনৈতিক কাজের জন্য এসব নারীদের বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে গিয়ে ভারতে বিক্রি করে দেয়া হয় বলেও জানা গেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু জীবন ও জীবিকার কারণে স্বচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষ বিদেশগামী হতে চায়, সেহেতু গমনাগমন যাতে নিরাপদ এবং বৈধ হয় সেই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। মানব পাচারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86215 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1