বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনও নিশ্চিত হোক
নতুনধারা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের প্রতি অবশ্য পালনীয় ৪টি অন্তর্র্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের হেগে-তে আইসিজের প্রেসিডেন্ট আবদুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ পঠিত রায়ে জানা যায়, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং রাখাইন রাজ্যে এখন যে রোহিঙ্গারা বাস করছেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে তিনদিন ব্যাপী এই মামলার শুনানি হয়। তাতে মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি অংশ নেন। সে সময় তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার রাখে না বলেও দাবি করা হয় মিয়ানমারের পক্ষে। আর রায় প্রদানের পর গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ অবসানে এটি একটি ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে আদালত তার রায়ে বলেছে, মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সব ধরনের হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা নিরসন করতে হবে। সেই সঙ্গে দূর করতে হবে তাদের যে কোনো রকমের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির আশঙ্কা। দেশটির সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বা যে কেউ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, উসকানি বা কুকর্মে সহযোগিতার সুযোগ পাবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না। সব প্রমাণ অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। আর উপরোক্ত নির্দেশগুলো যে যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে- ৪ মাস পর মিয়ানমার সে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইসিজেকে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর থেকে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক ৬ মাস অন্তর অন্তর মিয়ানমারকে এ বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সে সব প্রতিবেদন গাম্বিয়াকে প্রদান করবে আদালত, গাম্বিয়া সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের মতামত জানাবে।

বাস্তবতা হলো- প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী এই নির্দেশনায় তেমন কোনো তথ্য সন্নিবেশ করা হয়নি। তবে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার বক্তব্য এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য ও গণহত্যা কনভেনশনে উলিস্নখিত গণহত্যার সংজ্ঞা অনুসারে মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে তা গণহত্যার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে আদালত জানিয়েছে। মিয়ানমারে এখনো বিভিন্ন ক্যাম্পে ৬ লাখ বিপন্ন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে জানায় আদালত। আমরা মনে করি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতের এই নির্দেশনা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রিত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যাতে নিজ দেশে সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করতে পারে সে বিষয়েও আদালতের নির্দেশনা থাকা জরুরি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আন্তর্জাতিক আদালত অবগত যে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার যে সেনা অভিযান চালায় তাতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ব্যাপকহারে হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয় বেসামরিক রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ও বেসামরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেনি বলেও আদালত পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছে। তবে আরও বিস্তারিত তদন্ত, সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের আগে আদালত এখনই চূড়ান্ত রায় দেবে না। এজন্য আরও সময় প্রয়োজন। অন্যদিকে মিয়ানমার যেহেতু বাংলাদেশে তাদের আশ্রিত নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করেছে, এবং নানানভাবে চুক্তির শর্ত অমান্য করছে ফলে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশেরও নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলেই আমরা মনে করি।

উলেস্নখ্য, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের অপকৌশলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়া যায় কিনা এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক নানান আশঙ্কার কথা বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে কূটনীতিক তৎপরতাও অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85760 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1