বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটতি বাজেট ও বীমা শিল্পের করণীয়

বীমা কোম্পানিগুলোর শাখা খোলার ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদি কোম্পানিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে বীমা কোম্পানি যত শাখা খুলবে এবং ব্যবসা করবে তা থেকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ
  ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

প্রাথমিক পযাের্য় এরশাদ সরকার যখন বীমা কোম্পানি বেসরকারি খাতে চালুর চিন্তাভাবনা করেন তখন উদ্দেশ্য ছিল আপামর জনসাধারণকে ধাপে ধাপে বীমার আওতায় নিয়ে এসে জীবন, স্বাস্থ্য এবং সম্পদের বিভিন্ন অথৈর্নতিক ঝুঁকি মোকাবেলার মাধ্যমে সামাজিক ও অথৈর্নতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, সেই তাগিদে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ গঠিত হয়। তাই বীমা শিল্পকে গতানুগতিক ধারা থেকে বের করে সময় উপযোগী নিয়মতান্ত্রিক ধারায় চালিত প্রয়াসে সুষ্ঠু নীতিমালা ও কাঠামোর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, আথির্ক শৃঙ্খলা বজায়, বীমা শিল্পে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি এবং অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুনীির্ত প্রতিরোধ করে বীমা খাতকে সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সময়োপযোগী দিক নিদের্শনার মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষকে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।

সরকার জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪ এর কমর্পরিকল্পনা প্রণয়ন মাধ্যমে বীমা শিল্প তথা জাতীয় অথর্নীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বদ্ধপরিকর। তাই যুগোপযোগী ও আধুনিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা শিল্পকে আন্তজাির্তক মানে উন্নীত করা প্রয়োজন। বীমার বিশিষ্ট ব্যক্তিবগের্র মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত বীমা নীতিসমূহের আলোকে সময় অনুযায়ী কমের্কৗশল এবং করণীয়সমূহ বাস্তবায়িত হলে আথির্ক খাতে শৃঙ্খলা বজায় ও সমৃদ্ধি অজের্ন সহায়ক হবে এবং বীমার সুফল সবার কাছে পেঁৗছে দেয়ার উদ্দেশ্যে আথির্ক উন্নয়নের অন্যতম সহায়ক বীমা খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশা করা যায়।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশের সব বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ২২ মাচর্ ২০১৮ইং স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অজের্নর ঐতিহাসিক সাফল্য উদ্যাপন করে। “অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” সংবলিত প্ল্যাকাডর্, ব্যানার, গেঞ্জি পরে, সুসজ্জিত বাদকদলসহ গানে গানে মুখরিত হয়ে বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষ। পরবতীের্ত প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তা আরও বণির্ল রূপ ধারণ করে।

“স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ পরবতীের্ত বীমা শিল্পের করণীয়” এই বিষয়ে গত ২৫ মাচর্, ২০১৮ইং বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বীমা শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্ট ব্যক্তিবগর্ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের শুরুতেই কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান এবং সেমিনারের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন ২০২১-২৪ সালের মধ্যে আমরা বিভিন্ন পযার্য় অতিক্রম করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদাপর্ণ করব। সরকারের এই অগ্রযাত্রায় অথৈর্নতিক স্থিতিশীলতা সমুন্নত রাখা এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বীমা শিল্পের করণীয় বিষয়ে সকলকে অবহিত করেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতিতে কিছু কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ আথির্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে যা স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে ভোগ করে আসছিল। এই ঘাটতি আথির্ক সংকট নিরসনে বীমা শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই সাবির্ক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের বীমা শিল্পের করণীয় সম্পকের্ উপস্থিত সবার মতামত জানতে চান।

সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ে বিভিন্ন বক্তারা বীমা শিল্পের করণীয় সম্পকের্ নি¤œরূপ বক্তব্য রাখেন :

* আস্থার সংকট দূর করতে হবে।

* বীমা শিল্পে কমিশন একটি মরণব্যাধি এর থেকে বঁাচার দ্রæত কৌশল বের করতে হবে।

* দাবি নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে।

* বীমা শিল্পে লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক সংস্কার কাযর্ক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

* বিদেশে দেশীয় বীমা কোম্পানির শাখা বা এজেন্সি খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

* স্বতন্ত্র পুনঃবীমা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় পুনঃবীমা বাজার সম্প্রসারণ এবং পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের বহিঃপ্রবাহ হ্রাস করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

* বিদেশে পুনঃবীমা না করে দেশের মধ্যে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির মাধ্যমে পুনঃবীমার পুল সিস্টেম চালু করতে হবে।

* বীমার সুফল সম্পকের্ গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বীমা শিল্পের উন্নয়নের জন্য ‘জাতীয় বীমা দিবস’ পালন।

* বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে (যেমন: ট্যাক্স, ভ্যাট, গ্রাহক সেবা, পেশাদারিত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূবর্ক) ইবংঃ চৎধপঃরপব অধিৎফ চালু করা।

* বীমা আইন, ২০১০ ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ আইন, ২০১০-এর আওতায় সব বিধি-প্রবিধি দ্রæত প্রণয়ন।

* বীমা আইনের সঙ্গে সাংঘষির্ক আইনসমূহ পযাের্লাচনা করে সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।

* সরকারি সম্পদের বীমাকরণ, আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপ না করে সবাই যাতে ব্যবসা করতে পারে সে ব্যাপারে বীমা আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা।

* শ্রম নীতি ও আইনের মাধ্যমে প্রবাসী কমীর্সহ সব শ্রমিকের বীমা নিশ্চিতকরণ।

* সব বীমা কোম্পানিতে গ্রæপ ও হসপিটালাইজড বীমা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

* বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্রæপ বীমা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের সময় গ্রæপ বীমা প্রচলনের বাধ্যবাধকতা আনয়নের পযার্য়ক্রমিক আইনি ও বিধিগত প্রচেষ্টা গ্রহণ।

* বীমা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং এই বিষয়ে শিক্ষিত জনশক্তিকে যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

* বীমা শিল্পে পেশাদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে বীমা পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা।

* সকল বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামোর মডেল তৈরি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করা।

* বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একইরূপ চাকরি বিধিমালার মাধ্যমে সুষ্পষ্ট কমর্পরিধি সৃষ্টি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

* বীমা কোম্পানিসমূহের জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ কতৃর্ক সব কোম্পানির জন্য একইরূপ গাইডলাইন তৈরি করা।

* বীমা শিল্পে ‘কপোের্রট গভনের্ন্স’ চালুর জন্য গাইডলাইন জারি।

* ব্রোকার লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ব্রোকার/ফাইনান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট/ সাভের্য়ার/ অ্যাডজাস্টার/ রেটিং কোম্পানিসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সবির্ন¤œ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণের মানদÐের ভিত্তিতে লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থাসহ বীমা শিল্পে অভিজ্ঞ ও বীমা পেশায় শিক্ষিতদের প্রাধান্য দিতে হবে এবং উপযুক্ত বিধি-প্রবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

* ইসলামী বীমা কাযর্ক্রম পরিচালনার জন্য শরীয়াহ্ভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তাকাফুল হজ ও ওমরাহ বীমা স্কিম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ।

* দরিদ্র শ্রেণির জন্য কল্যাণমূলক বীমা পলিসি তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করা এবং দারিদ্র বিমোচন কমর্সূচির আওতায় গোষ্ঠী ক্ষুদ্র বীমার ব্যবহার নিশ্চিত করা।

* স্বাস্থ্য বীমা, কৃষি বীমা, ক্যাটেল বীমা, সকল যানবাহন ও যাত্রী বীমা, রেলওয়ে বীমার প্রচলন করা।

* বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ এবং বীমা কোম্পানিসমূহের মধ্যে ওহঃবমৎধঃবফ ঝড়ভঃধিৎব বাস্তবায়ন এবং এর মাধ্যমে বীমা কোম্পানিসমূহের কাযর্ক্রম তত্ত¡াবধান।

* বীমা পলিসি বিক্রির জন্য ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহারে আইনগত বাধা দূর করা।

* নন লাইফের বীমা ডকুমেন্টস যেহেতু ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাই বীমা কোম্পানি ডকুমেন্টস ইস্যুর পর ব্যাংক থেকে সেদিনই চধু ঙৎফবৎ ইস্যুর কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

* মুখ্য নিবার্হী কমর্কতার্ নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত, ০৩.০১.২০১৩ অনুযায়ী নিয়োগের নিয়োগ-বিধি বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও কোথাও কোথাও গেজেটে উল্লিখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্নতো নয়ই এমনকি বীমা শিল্পের সাথে সম্পকর্হীন কতার্ ব্যক্তিরাও যখন বীমা কোম্পানির প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ হিসাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ কতৃর্ক নিয়োগ লাভ করেন তখন মনে হয় মুখ্য নিবার্হী কমর্কতার্ নিয়োগে সরকারি গেজেটের কি দরকার? বিষয়টি আশা করি কতৃর্পক্ষ ভেবে দেখবেন। কোনো গোষ্ঠীর প্রতি নয় বীমা শিল্পের প্রতি কতৃর্পক্ষের শুভ দৃষ্টি শিল্পে নিয়োজিত মুখ্য নিবার্হী কমর্কতাের্দর সম্মানকে সমুন্নত করবে।

* বিদেশের বীমা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাটিির্ফকেট, ঋবষষড়ংিযরঢ়, অংংড়পরধঃবংযরঢ়, ঈযধৎঃবৎবফ অপপড়ঁহঃধহঃ, ওঈগঅ, ঈঋঅ, ঈচঅ ইত্যাদিকে গেজেটে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে অথচ সরকারীভাবে বাংলাদেশে স্বীকৃত ইওঅ ডিগ্রিধারীদের ব্যাপারে এই গেজেটে কোনো স্বীকৃতি মিলে নাই। তাই বীমা পেশার প্রতি কমর্রত কমর্কতাের্দর মধ্যে বীমা শিক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। একমাত্র বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষই পারে আইনের যথাযথ সংশোধনের মাধ্যমে বীমা শিল্পে পেশাদারিত্ব চালু করতে।

২০১৮-১৯ অথর্বছরে মূল বাজেট টাঃ ৪,৬৪,৫৭৩/- কোটি টাকা, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা টাঃ ৩,৩৯,২৮০/- কোটি টাকা, সামগ্রিক ঘাটতি টাঃ ১,২৫,২৯৩/- কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি সামগ্রিক ঘাটতি কমিয়ে আনতে হলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে এটাই বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

সরকারের সহায়ক হিসাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষকে বীমা শিল্প থেকে অথের্র প্রবাহ সৃষ্টি করার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করতে হবে। এই শিল্পে কমর্রত সকলেই জানে বীমা শিল্পে কমিশন একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা বীমা শিল্পের সাথে যুক্ত সকল ব্যক্তিবগের্র করা উচিত। আমরা এটাও জানি যে নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে ব্যবসা কোনো এজেন্ট-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় না। কোম্পানিতে কমর্রত কমর্কতার্ ও কমর্চারীই ব্যবসা সংগ্রহ করে থাকেন, তাই নন-লাইফ বীমা ব্যবসার এজেন্ট ব্যবস্থা রহিত করা হউক। নন লাইফ বীমার ক্ষেত্রে কমিশন একটা বড় সমস্যা এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মানি লন্ডারিং বলে বীমা শিল্পে আর কিছুই থাকবে না। নন-লাইফ বীমার কমিশন সাধারণত: বীমা গ্রহীতা সরাসরি, কখনো কখনো ব্যাংক কমর্কতার্গণ গ্রহণ করে থাকেন। বীমা গ্রহীতা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বীমার জন্য যে পলিসি গ্রহণ করেন তার বিপরীতে যে প্রিমিয়াম আসে তাই খরচ হিসেবে আথির্ক বিবরণীতে (ব্যালেন্স সীট) দেখান কিন্তু কমিশন হিসাবে যা পান তা তার পকেটে থেকে যায় তার জন্য কোনো হিসাব সংরক্ষণ সাধারণত করেন না, ফলে সরকার কমিশনের বিপরীতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তেমনি ব্যাংক কমর্কতার্রা কমিশনের আয়কে তার কোনো হিসাবে দেখান না এর ফলেও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। যা মানি লন্ডারিংয়ের প্রধান কারণ। আশা করি বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ আমলে এনে এ ব্যাপারে সত্বর আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাতে বীমা শিল্প থেকে সরকারি রাজস্ব বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।

বীমা কোম্পানিগুলোর শাখা খোলার ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদি কোম্পানিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে বীমা কোম্পানি যত শাখা খুলবে এবং ব্যবসা করবে তা থেকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

কোম্পানিগুলো ব্যবসা করলেই কেবল সরকারকে ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স ও স্ট্যাম্প বাবদ টাকা সরবরাহ করতে পারবে। শুধু তাই নয় বীমা নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষও শাখা খোলা বাবদ বীমা কোম্পানি থেকে নিধাির্রত হারে ফি পাবেন যা তাদের আয়ের পথকে প্রসারিত করবে।

লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম বৎসর যে পলিসি ইস্যু করা হয় পরবতীের্ত সে পলিসির নবায়ন ৫০-৬০% ই হয় না। এর একমাত্র কারণ হতে পারে বীমা শিল্পের এজেন্টরা নিজেরাই পলিসি করে চলতি বছরে কোম্পানির প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে পরবতীের্ত আর পলিসি নবায়ন করে না। আবার কোনো কোনো সময় বেশি বেতনের জন্য অন্য কোম্পানিতে নিয়োগ নিয়ে সেখানে একই কাযর্ক্রম চালায় তাই প্রথম বৎসর কমিশনের হার কমিয়ে কোম্পানিগুলোকে আথির্ক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়।

কমিশন প্রথার কারণেই বীমা শিল্পে আস্থার বড় অভাব। কে কার চেয়ে বেশি কমিশনে ব্যবসা নেবে এই নিয়ে চলে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা; এর ফলে ব্যবস্থাপনা খরচ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাছাড়া প্রতি বছরই কমর্কতার্ ও কমর্চারীদের বেতনভাতাসহ অফিস ভাড়া, গাড়ি ও অন্যান্য পারিপাশির্¦ক অনেক খরচ বৃদ্ধির ফলে কোম্পানিগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই সময় উপযোগী ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিধার্রণ এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য শূন্য কমিশন ও এজেন্ট প্রথা বাতিল ও লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য পৃথক কমিশন প্রথা চালুর উদ্যোগ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষকে নিতে হবে। কতৃর্পক্ষ যদি বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তবে আশা করা যায় বাজেট ঘাটতিতে বীমা শিল্প রাজহঁাসের সোনার ডিমের ভূমিকা পালন করবে। বীমা শিল্পের সুদিন ফিরে আসবে এবং অথর্নীতি চাঙ্গা হবে। বীমা শিল্পে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হবে এবং সব অনিয়ম অব্যবস্থাপনা, দুনীির্ত ও আস্থাহীনতা থেকে মুক্ত হয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষের সব রীতিনীতি মেনে বীমা কোম্পানিসমূহ ওহঃবমৎধঃবফ ঝড়ভঃধিৎব প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। এতে বীমা শিল্পে বিদ্যমান সকল অনিয়ম দূর হবে বলে আমরা আশা করতে পারি এবং বীমা শিল্পে দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি কাজ করতে উদ্যোগী হবে যা বীমা শিল্পে পেশাদারিত্ব সৃষ্টির সহায়ক হবে।

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: এমকম, সিএসিসি, বিআইএ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ ইসলামী কমাশির্য়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8032 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1