শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিমা ব্যবসা, শিক্ষিত জনশক্তি ও আর্থিক বুনিয়াদ

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ
  ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বিমা শিল্প এখন বিকাশমান। বিমা নিয়ে অতীতে অনেক নেতিবাচক কথা হলেও সেটা অনেকটা কমে এসেছে। এখন দরকার এই শিল্প বিকাশে দক্ষ হাতে নার্সিং করা, যার উদ্যোগ ইতিমধ্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন।

এতদিন আমাদের অনেকের কাছেই অজানা ছিল, বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের মতো বিমা জগতেরই একজন সদস্য ছিলেন, তিনি ষাট দশকে আলফা বিমা কোম্পানিতে ১ মার্চ থেকে কর্মরত ছিলেন। তাই ১ মার্চকে সরকারের পক্ষ থেকে বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার জন্মশতবার্ষিকীতে রইল শত সহস্র বিনম্র ভালোবাসা। প্রকান্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় তা তিনি করবেন এবং শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রেখে সরকারি রাজস্ব খাতে অবদান রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, বিমা শিল্পে যারা জড়িত রয়েছেন তার প্রতিটি কথা বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা করে যাবেন।

আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের মুখে শুনেছি, তিনি ছাত্র অবস্থায় বিমার ওপর একটি বই লিখেছিলেন। ছাত্র অবস্থায় বইটি প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে তার অত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষকের নামে তা প্রকাশ করেছিলেন এবং শিক্ষক যৌথ লেখক হিসেবে তার নাম যুক্ত করে তাকে সম্মানিত করেছিলেন।

আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টারস ডিগ্রিতে পড়ি তখন আমার ইন্সু্যরেন্স টার্ম পেপার ছিল। রি-ইন্সু্যরেন্স শিখার জন্য ১৯৮১ সালে সাধারণ বিমা করপোরেশনের পুনঃবিমা বিভাগে প্রায় এক মাস ইন্টার্নশিপ করে হাতে-কলমে শিখে রিপোর্ট জমা দিয়ে ওই বিষয়ে পাস করতে হয়েছিল। ওই সময় সাধারণ বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মোরশেদ স্যার। সে সময়ের পুনঃবিমার বিভাগের কর্মকর্তারাও আমাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন। তা ছাড়া সিরাজুল ইসলাম স্যারও আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান ছিলেন, এখন পাইওনিয়ার ইন্সু্যরেন্সের কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

১৯৮৪ সালে ভাগ্যের টানে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্সী কোর্স কমপিস্নট করে গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট ডিপার্টমেন্টে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যোগদান করি। গ্রামীণ ব্যাংক সবেমাত্র প্রজেক্ট থেকে ব্যাংক হিসাবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের দূরদর্শিতায় এবং আমার সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দক্ষতা, দূরদর্শী ও মানবিক মূল্যবোধের কারণে গ্রামীণ ব্যাংক আজ বিশ্বের বুকে একটি উদাহরণ হয়ে আছে। যার মডেল পৃথিবীর অনেক দেশেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্যার এই কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক বিরল মর্যাদায় বসিয়েছেন।

আমার বাবার শরীরিক অবস্থার দ্রম্নত অবনতি ঘটার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে গ্রাম-গঞ্জে ঘোরা বাদ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ও সিএ প্রফেশনের এক বন্ধুর হাত ধরে ১৯৮৬ সালে প্রগতি ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করি। আমি প্রগতি ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির মিহির দা, আমার শ্রদ্ধেয় স্যার মির হোসেন সাহেবের কাছে চির কৃতজ্ঞ। যিনি আমাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছন ইন্সু্যরেন্স কি, কীভাবে ডকুমেন্ট ইসু্য করতে হয়, বিমা গ্রহিতাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, পত্রালাপ করতে হয়, ঞবষবী-এর ডড়ৎফরহম কীভাবে লিখতে হয়। অবলিখন, পুনঃবিমা, দাবিসংক্রান্ত কাজ তার কাছ থেকেই শিখেছি। এক কথায় তিনি আমার ইন্সু্যরেন্স গুরু।

দেখতে দেখতে বিমা শিল্পে ৩৪টি বছর কীভাবে কেটে গেল টেরও পেলাম না। ২৮ বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে বিমার বিভিন্ন শাখায় কাজ করে অবশেষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসাবে কর্মরত আছি। বিমা ব্যবসা এখন আর পেশা নয়- এটা অর্থনৈতিক উন্নতি ও গ্রাহক সেবার নেশা। সে পরিপ্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন বিমা শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছুটা শেয়ার করার জন্য এই লেখা। কেউ আমাকে বিজ্ঞ বা সমালোচক বলে ভুল বুঝবেন না, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ৬১-৬২নং সার্কুলারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ ও বিআই-এ মতামত প্রকাশ করেছিলাম পরে অনেক কিছুই সংশোধিত হয়ে ৬৪-৬৫নং সার্কুলার পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। আশা করি, নন-লাইফ বিমা শিল্পে কর্মরত কর্মকর্তারাও আমার এই ভাবনার সঙ্গে অনেকাংশে একমত হবেন।

বিমা ব্যবসা একদিনে হয় না, দীর্ঘ সাধনার ফল। যারা দীর্ঘদিন ধৈর্যসহকারে টিকে থাকতে পারে তারাই বিমায় সফলকাম হতে পারে। কি লাইফ, কি নন-লাইফ। ঝরেপড়া লোকের সংখ্যাই অধিক, গুটি কয়েক লোক কেবল সাফল্যের হাসি হাসতে পারে। এই কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বিমা শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। কেহই তার জীবন থেকে কয়েকটি বছর ট্রাই অ্যান্ড এরর-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। সবাই চায় নিশ্চিত চাকরি, দুটো পয়সা কম তাতে অসুবিধা নেই, শান্তি চাই। টার্গেট-বিহীন নিশ্চিন্ত ঘুম চাই।

বর্তমানে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে মার্কেট কারেকশন চলছে। নিয়ম নৈতিকতার মধ্যে বিমা শিল্পে কর্মরত কয়েক লাখ কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমা পরিবারের বেশ কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত জনবল বিমা শিল্পে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এদের বিকাশ কিন্তু একদিনে হয়নি, এদের পেছনে তাদের বাবা-মায়ের অবদান অনেক। তারাই তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং পথের নির্দেশনা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ভাগ্যবান যে উত্তরসূরি সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

ইদানীং কিছু মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তাদের পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাধা হলো তারা পরিচালকদের সন্তান নন, তারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধস্তন কারও সন্তান। আগেই বলেছি মার্কেট কারেকশন চলছে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধস্তনের প্রচুর বিমা ব্যবসা রয়েছে কিন্তু তিনি তা থেকে বেনিফিট নিতে পারছেন না বা কোম্পানি তার ব্যবসার জন্য আলাদাভাবে মূল্যায়িত করছে না, তাহলে তার ব্যবসার বেনিফিসিয়ারি কে হবেন? তাহলে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দাঁড় করলে তো সেই আগের অবস্থা অর্থাৎ ডেমি সৃষ্টি করতে হয়, তার চেয়ে কারও ব্যবসার জন্য তার ছেলেমেয়েদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

কোম্পানির জন্য যারা ধ্যানজ্ঞান রেখে নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময়ে কাজ করছেন, তাদের সন্তানরা বাবা-মায়ের বা কারও স্নেহের সহযোগিতার মাধ্যমে যোগ্যতর হিসেবে বিমা শিল্পে জায়গা করে নিতে চাইলে অবশ্যই কোনো বাধা থাকার কথা নয়। আর থাকলেও তা বিমা শিল্পের স্বার্থে শিক্ষিত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে তা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মীর হাতকে শক্তিশালী করে শিল্পে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টির প্রয়াস নিতে হবে।

একজন ডেক্সকর্মী সারাদিন তার কাজ করেও তার কানেকশন বা প্রফেশনালিজমের কারণে তার মেধা, শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে কোম্পানির জন্য ব্যবসা সংগ্রহ করলে, কর্তৃপক্ষের কাছে তার কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকতেই পারে? গিভ অ্যান্ড টেকের দুনিয়ায় তার প্রাপ্যটা তাকে না দিলে সে ব্যবসা আনবে কেন? সে যদি ব্যবসা না আনে কোম্পানি ব্যবসা হারাবে আর সে তার ব্যবসা তৃতীয় পক্ষ কারও কাছে বিক্রি করবে বা অন্যের নামে দেখিয়ে বা অন্য কোম্পানিতে ব্যবসা দিয়ে সে ঠিকই বেনিফিট নিয়ে নেবে। এটা বন্ধ করতে হলে উন্নয়ন কর্মকর্তার মতো তাদের ব্যবসা আহরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোনো পন্থা বের করার সময় এসেছে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী বিমা ব্যবসায় যারা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন তাদের আয় আনলিমিটেড। তাদের নিয়োগই দেয়া হয় এভাবে, ব্যবসা আনতে পারলে টাকা পাবে, না আনতে পারলে পাবে না। পৃথিবীতে সব কাজেরই বিনিময় মূল্য আছে। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে পরিশ্রম, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, মেধা ইত্যাদির মাধ্যমেই অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান রাখতে হয়।

যদি এমন হয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেট দিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়া হলো, মাস শেষে টার্গেট পূরণ না হলেও তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হবে, তবে কি কেউ টার্গেট পূরণে বা ব্যবসা আনতে সচেষ্ট হবেন? এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো টার্গেট পূরণ করবেন আর বাকিরা তার সুবিধা ভোগ করবেন। এভাবে কতদিন চলবে? কথায় আছে বসে খেলে রাজার ধনও এক সময় শেষ হয়ে যায়। এক সময় কোম্পানিও দেউলিয়া হয়ে যাবে, এভাবে ফ্রি বেতন দিতে থাকলে।

তাই উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেটের বিপরীতে আনুপাতিক একটা পারসেনটেজ বেসিস ধরে যে যত টার্গেট নিতে চায় সে অনুপাতে বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে। টার্গেট পূরণ করলে পূর্ণ বেতন এবং টার্গেট পূরণ না হলে আনুপাতিক হারে বেতন পাবে। যা এখন আমাদের দেশের সব কোম্পানিতে চালু আছে। আরও উলেস্নখ্য যে, কোনো অবস্থায়ই পারসেনটেজ হিসাবে এককালীন অর্থ কাউকে দেয়া যাবে না, এতে কোম্পানি সর্বোপরি সরকারি রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খয়রাতি সাহায্যে বেশি দিন চলা যায় না। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সবাইকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ বিনির্মাণে বিমা খাত পিছিয়ে পড়বে।

বিমা এখন আর পেশা নয়, এটা নেশাও বটে। বিমা পেশাজীবীরাই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বিমাকারী এবং বিমাগ্রহিতাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বেগবান করছেন। বিদেশের তুলনায় আমাদের বিমা শিল্প অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তাই বিমা পেশাজীবীদের আর্থিক বুনিয়াদকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

কথায় কথায় আমরা বিদেশের বিমা শিল্পের সুনাম করে থাকি আর আফসোস করি, আমরা কেন সে পর্যায় যেতে পারি না। বিদেশে বিমা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে। উন্নত দেশে যারা বিমা ব্যবসা করেন তারা যে কদর পান আমাদের দেশে তার উল্টো। কারণ তাদের কমিটমেন্টের দাম আছে কিন্তু আমাদের নেই। তাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে বিমা বাধ্যতামূলক বলে সেবাও সে মতোই বিমা কোম্পানিগুলো দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও তা অসম্ভব নয়। শুধু নিয়ম-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তা মেনে চলা।

আমাদের নিয়ম-কানুন এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা সবার পক্ষে মানতে কোনো অসুবিধা না হয়। শুধু একটি বিষয়ই আমার কাছে বিস্ময় বলে মনে হয় অনেকদিন ধরে আমরা নন-লাইফ বিমা কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু সব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা একই অবস্থানে নয় বলে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না বা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আবার এজেন্টের কথায় আসি নন-লাইফ বিমায় এজেন্টের ভূমিকা কী তা স্পষ্ট নয়। একজন উন্নয়ন বা ডেক্স কর্মকর্তা তাদের কাজের পাশাপাশি এজেন্ট হতে পারবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। একজন ব্যক্তি এসএসসি পাস হলেই এজেন্ট হতে পারে। এই এজেন্ট দিয়ে বিমা শিল্প কি উপকৃত হবে তাও বুঝি না। বিমা শিল্প যদি এজেন্টনির্ভর হয়, এদের মধ্য থেকে এক সময় যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। তাই সব সময় বিদেশের ভাবধারায় না চলে আমাদের দেশের উপযোগী আইন তৈরি ও প্রতিপালনে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

তাই আমাদের বিমা শিল্পকে বিদেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট যে কোনো একটি বেছে নিয়ে এক খাতের খরচকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবেই বিমা কোম্পানির আর্থিক সলভ্যান্সি আসবে এবং সবাই সেবামূলক মনোভাব নিয়েই কাজ করবে। আমাদের অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিমা শিল্পে আর উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট নয় যারা বিমায় কাজ করবেন তারা বিমা কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত হবেন।

উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট এই দ্বৈত ব্যবস্থা থেকে বের হতে পারলেই বিমা শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যার সুবিধাভোগী দেশের সব জনগণ হবেন। এই ব্যাপারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক বুনিয়াদকে উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

আমাদের প্রত্যেকেই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষকের সন্তান, একজন ডাক্তারের সন্তান, একজন ইঞ্জিনিয়ারের সন্তান, একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টের সন্তান, একজন উকিলের সন্তান বা একজন ব্যাংকারের সন্তান যোগ্যতা অর্জন করে তাদের পিতা বা মাতার পেশায় আসতে পারে, তাহলে একজন বিমা পেশাজীবীর সন্তান কেন বাবা-মায়ের পেশায় আসতে পারবে না? নিশ্চয়ই আসবে আর যদি বিমা আইনে কোনো বাধা থাকে তাহলে তা পরিবর্তন করে যোগ্যতরদের স্থান করে দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের যথাযথ প্রতিপালন করতে যে কোনো অনুকূল সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শিল্পের উন্নয়নে সবার সম্মিলিত প্রয়াস থাকা অত্যন্ত জরুরি নতুবা বিমা শিল্পে নতুন শিক্ষিত প্রজন্ম আগ্রহী হবে না।

আমাদের দেশে বিমা শিল্পের যথাযথ বিকাশের তেমন ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স একাডেমি, একাডেমি ফর লার্নিং এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকেও তেমন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে না। তাই বর্তমানে বিমা শিল্পে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রণোদনা সৃষ্টি করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ সব বিমা কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

আর বেশি দূরে নয়- বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগ এবার অবশ্যই সফল হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিমা পেশাজীবীরাও মান-সম্মান নিয়ে আর দশটা দেশের বিমাকর্মীদের মতো নিজ পেশার স্বীকৃতি পাবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই লেখার যবনিকা টানলাম।

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সু্যরেন্স কোং লিঃ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79337 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1