শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর প্রয়াণ

এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়
নতুনধারা
  ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বায়ান্নর উত্তাল একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মেয়েদের যে মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেছিল, সেই মিছিলের উজ্জ্বল মুখ রওশন আরা বাচ্চু আর নেই। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন, অবশেষে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মৃতু্য মানুষের স্বাভাবিক নিয়তি। তবু কিছু মানুষ তাদের জীবনে ও কর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকেন, যাদের মৃতু্য মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বেশ কদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এর আগে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রওশন আরা বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক ভাষা সংগ্রামী রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী প্রমুখ। এ ছাড়া তাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি ও লেখিকা সংঘ।

এই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব এবং ভাষা সৈনিক মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও পরে ইতিহাসে এমএ পাস করেন তিনি। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটল অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল, নজরুল একাডেমি, কাকলি হাইস্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ দিন। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান সংগ্রামী এই নারী।

রওশন আরা বাচ্চু ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা জরুরি যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলের ছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সুসংগঠিত করেন। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একুশে ফেব্রম্নয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম ছাত্রী দলের অন্যতম সদস্য এই ভাষাসংগ্রামী যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন- যা কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে যে ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ফলে সেদিন তার নেতৃত্বেই ইডেন মহিলা কলেজ এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমাবেশস্থলে সমবেত হন। সমাবেশস্থলের বাইরে তখন পুলিশ ব্যারিকেড দিলে আরও কয়েকজন ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রওশন আরা বাচ্চু সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন এবং দলের অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান। পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করলে আহত হন যে দুজন, তাদের একজন ছিলেন রওশন আরা।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রওশন আরা বাচ্চু তার সংগ্রামী চেতনার যে আদর্শ রেখে গেলেন, তার সেই সংগ্রামী চেনতা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদীপ্ত করবে। তার এই মৃতু্য যে শূন্যতার সৃষ্টি করলো তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78420 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1