শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

তরুণদের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে!

নতুনধারা
  ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

'তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়, দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়'- বিখ্যাত শিল্পী আব্দুল জব্বারের গান বর্তমান সময়েও কত প্রাসঙ্গিক! তরুণদের স্বপ্নগুলো তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা তরুণ-তরুণীরা কত স্বপ্ন দেখে, স্বপ্নকে আলিঙ্গন করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, পরিবার-সমাজ সর্বোপরি দেশের জন্য কিছু করতে চায়। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রয়েছে ভালোবাসা-আবেগের বিনিয়োগ, পরিশ্রম-অর্থের বিনিয়োগ, রয়েছে হার না মানা মানসিকতার বিনিয়োগ। তরুণরা স্বপ্ন দেখে এদেশে কোনো ঘুষ-দুর্নীতি থাকবে না। পড়ালেখা শেষে নিজ যোগ্যতা বলে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাকরি পাবে। 'বিবিএসের' জরিপে গত বছর জানা গিয়েছিল দেশে এখন বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। এর বৃহৎ অংশই স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাস করা চাকরিপ্রত্যাশী। তরুণরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, অবসরের বয়সসীমা বেড়ে যাওয়াসহ বিদেশের সাথে চাকরিতে তরুণদের সমন্বয় সাধনের জন্য হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো প্রয়োজন। মানসম্মত চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য পড়ালেখা (স্নাতক-স্নাতকোত্তর) শেষ করতে প্রায় ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। আর সেই সার্টিফিকেটের মেয়াদ মাত্র ৩ বছর (৩০ বছর পর্যন্ত)! দেশের নীতিনির্ধারকরা কি কখনো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, প্রতি বছর কত তরুণ-তরুণী পড়ালেখা শেষ করে বের হচ্ছে, আর কত জন চাকরি পাচ্ছে।

মাঝে মাঝে পত্রিকা মারফত চাকরি না পেয়ে তরুণের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। কোটাপ্রথা সংস্কার নিয়ে বর্তমান তরুণসমাজ দীর্ঘদিন ধরে চিন্তিত। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ৫৬ শতাংশ কোটা নেই। আশা করা হচ্ছে কোটা প্রথার যুক্তিসংগত সুরাহা হবে। বর্তমান চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের বৃহৎ একটা অংশ ব্যাপকভাবে হতাশ। পরিবার-পরিজন পথ চেয়ে বসে আছে কখন পড়ালেখা শেষ করে সন্তান পরিবারের হাল ধরবে। তরুণরা কেন হতাশাগ্রস্ত হয়, কেন মাদকাসক্ত হয়, কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেই, কেন বিপথে যায়, কেন তরুণদের স্বপ্নগুলো চুরি হয়ে যায়? কেন? সব তরুণ-তরুণী তো স্বপ্ন দেখেছিল সুন্দর ভবিষ্যতের, সুন্দর জীবনের। বাস্তবতা হলো, তরুণরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে, চাকরির বাজারের সঙ্গে বর্তমান লেখাপড়া কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে কেউ মনে করেন না। একই দিনে, একই সময়ে একাধিক চাকরির পরীক্ষা থাকছে। এতে করে তরুণদের ঠকানো হচ্ছে। আবার তারুণ্যের সময় খেয়ে ফেলছে চাকরির নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা। এক একটা চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে নূ্যনতম এক বছর থেকে শুরু করে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এদেশে পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আসলেই কি তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে?

দেশের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীরা আজ দিশেহারা, স্বপ্নহীন। তারা কারিগরি শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। তরুণদের নিয়ে কত কথা বলা হয়, কত স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তরুণদের বেকারত্বের জ্বালা কেউ বোঝে না, কেউ জানতে চায়ও না। সম্প্রতি 'উন্নয়নশীল' দেশের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বাস্তবতার যাঁতাকলে পৃষ্ঠ হয়ে তরুণদের স্বপ্ন, চেতনা, দিনবদলের আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। এদেশ থেকে সকল অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূর করার স্বপ্ন দেখে। তাই তরুণদের বেকারত্ব, হতাশা আর উৎকণ্ঠা থেকে বের করে আনতে হবে। নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে, মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে তরুণরাই সবচেয়ে বড় শক্তি। যোগ্যতা অনুযায়ী সব তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে যেমন বেকারত্ব দূর হবে তেমনি পরিবার-সমাজ-দেশ এগিয়ে যাবে।

সাধন সরকার

ছাত্র, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78418 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1