বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে শ্রমিকদের দুরবস্থা

নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ হোক
নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

প্রবাস থেকে বাংলাদেশের মেয়েদের পাঠানো টাকায় দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাদের শ্রমে বাড়ে দেশের রিজার্ভ। আর তারা যখন বিদেশের মাটিতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা ও পাশবিক নিপীড়নের শিকার হন, তখন তাদের পাশে দাঁড়ায় না কেউ। বিশেষ করে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানোর পর 'খোঁজ নেয় না কেউ'- এমন একটি উদ্বেগজনক চিত্র রোববার তুলে ধরা হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে অকথ্য নিপীড়নের শিকার হওয়া সুমি আক্তার সম্প্রতি একটি ভিডিও ক্লিপে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানান। এই ভিডিওটি ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দ্রম্নত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও ওঠে জোরেশোরে। অবশেষে সৌদি আরব থেকে সুমি আক্তার বাড়িতে ফিরেছেন। আর এ ঘটনার পর সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়টি আবারও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, নানা অভিযোগ তুলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সৌদি আরব। পরে অন্য কোনো দেশ থেকে না পেয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে বিনাখরচে নারী কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় দেশটি। মাসিক মাত্র ৮০০ রিয়াল (১৬ হাজার টাকা) বেতনে গৃহকর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালে রাজি হয় বাংলাদেশ। সৌদি আরব তখন পুরুষ কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। পুরুষ কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের দরজা খোলা রাখতে বাংলাদেশ মেয়ে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে- এ বিষয়টিও বহুল উচ্চারিত। অথচ ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠায় না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকাও দেশটিতে নারী পাঠায় না। ২০১১ সালে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেয় ফিলিপাইন। দেশটির সংসদীয় প্রতিনিধি দলের তদন্তে প্রকাশ পায়, দেশটিতে প্রবাসী নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। যে কারণে প্রতিনিয়তই সামনে আসছে, সৌদিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের ওপর অকথ্য শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা। কাজের সন্ধানে সে দেশে গিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়া, এমনকি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে লাশ হয়েও ফিরছেন অনেকে। এসব ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন না, বরং শ্রমিকদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন তা একটু গভীরে গেলেই সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারতেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা সব জেনেও না জানার ভান করছেন। আর এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন দেশের নারী সমাজ। সৌদি আরবে বাংলাদেশের মেয়েদের সঙ্গে যা ঘটছে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব শেষ করছে দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অথচ আজ পর্যন্ত এসব ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি; সাজা পায়নি কোনো দোষী। এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সৌদি আরবে গৃহকর্মে মেয়ে পাঠাতে পারলেই কর্মীপ্রতি দুই হাজার ডলার পায় রিক্রুটিং এজেন্সি। টাকা উপার্জনের এমন সহজ রাস্তা খোলা থাকায়, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিদেশে পাঠাচ্ছে এজেন্সি ও দালালরা। পাসপোর্ট দেওয়ার সময় পুলিশের যাচাই-বাছাই করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। দালালের বানানো ভুয়া পাসপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেটে বিদেশ চলে যাচ্ছে কর্মীরা। বিমানবন্দরেও নেই নজরদারি। বলাই বাহুল্য, বিদেশে কর্মরত মেয়েদের খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব দূতাবাসের। কিন্তু জনবল সংকটের কথা বলে সে কাজটি করে না দূতাবাস। আর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড নির্যাতিত কর্মী দেশে ফেরার পর পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে দায়িত্ব সারছে সরকারের এই সংস্থাটি। ফলে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বিদ্যমান পরিস্থিতির অবসান ঘটানো জরুরি।

সর্বোপরি বলতে চাই, পুরুষ শ্রমিক পাঠাতে নারী শ্রমিক পাঠানোর এই কৌশল থেকে সংশ্লিষ্টদের বেরিয়ে আসতে হবে। পুরুষ শ্রমিক পাঠাতে প্রয়োজনে নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান করতে হবে। যেহেতু এটাও সত্য যে, কর্মী নিয়োগের সর্বময় কর্তৃত্ব সৌদির হাতে। সুতরাং প্রত্যাশা থাকবে সরকার এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে, দেশ ও দেশের নারীর সম্মানের কথা বিবেচনায় রেখে। পাশাপাশি এখনো যারা কষ্ট সহ্য করে সৌদিতে অবস্থান করছেন, তাদের দেখভাল এবং প্রয়োজনে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75924 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1