শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা পরিস্থিতি

মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক
নতুনধারা
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

'দেশের অর্ধেক রোগী সুচিকিৎসা পায় না' বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যে এমনই এক উদ্বেগজনক চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সহযোগী একটি গণমাধ্যমে। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার নানান অনিয়মের তথ্য আসছে গণমাধ্যমে। এ ছাড়া ওষুধের প্যাকেটে মূল্য প্রদর্শন না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে আলোচনার শিরোনাম হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিষয়টি নিয়ে সরকার বিব্রত হয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের এসব অনিয়ম নিরসনে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ওষুধের প্যাকেটে মূল্য প্রদর্শনের জন্য। দেশের স্বাস্থ্য খাত, চিকিৎসাব্যবস্থা, ডাক্তার সংকট, ডাক্তারদের মফস্বলে যেতে অস্বীকৃতি জানানো এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবাসংক্রান্ত নানান আলোচনার ভেতর এবার দেশের সার্বিক চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক এক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে বললেও অতু্যক্তি হয় না।

তথ্য অনুযায়ী, রোগে আক্রান্ত হলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকের কাছে যায় না। ৫৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নেয় ওষুধের দোকানদার, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, হাকিম-কবিরাজ, ওঝা, পীর, বৈদ্যসহ অন্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে। অর্ধেকের বেশি রোগীর সুচিকিৎসা না পাওয়ার ক্ষেত্রে এটিই প্রধান কারণ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ থেকে। বিবিএস ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, দেশের ১৬ শতাংশ রোগী সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে উপজেলা-জেলাসহ বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। আর ২৬ শতাংশ রোগী সেবা নিয়ে থাকে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। বেশ কিছু রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশেও গমন করে থাকে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তাহলে কেন মানুষ বিদেশমুখী, এর কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি বলেও প্রতীয়মান হয়।

বলাই বাহুল্য, চিকিৎসাসেবার কথা উঠলেই সাধারণভাবে হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি- এসব বিষয়ই আলোচিত হয় সর্বাধিক। এ ছাড়া উঠে আসে নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দসহ নানান বিষয়, যার সঙ্গে রোগীদের তেমন সংশ্লিষ্টতা থাকে না। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাব্যবস্থায় সংকট দেখা দিলে তা আলোচনায় উঠে আসা স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, মানুষ কেন চিকিৎসকের কাছে যান না, তার কারণ যেহেতু শনাক্ত হয়েছে; সুতরাং সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সে অনুযায়ী কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। বিবিএসের রোগগ্রস্তবিষয়ক জরিপ (২০১৪) বলছে, প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ১৭০ জন কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জ্বরে। অন্যদিকে গেঁটেবাত, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার- এসব অসংক্রামক রোগও আগের চেয়ে বাড়ছে। এটাও দেখা যায়, রোগে ভুগলেই সব মানুষ চিকিৎসকের কাছে যায় না। প্রায় ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করে, সমস্যাটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্য একটি অংশ চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে চিকিৎসা নেয় না। এরা প্রায় ১৭ শতাংশ। বাড়ির কাছে হাসপাতাল বা চিকিৎসক না থাকার কারণে অনেকে চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। অনেকে মনে করে, চিকিৎসকের কাছে গেলে বড় কোনো রোগ ধরা পড়তে পারে। এই আতঙ্কেই অনেকে চিকিৎসকের কাছে যায় না। এমনও হয় যে সঙ্গে যাওয়ার লোক থাকে না বলে অনেকে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যায় না। চিকিৎসা না নেওয়ার এই প্রবণতা নারী ও পুরুষের মধ্যে যেমন আছে, তেমনি আছে শহর ও গ্রামের মানুষের মধ্যে। আমরা মনে করি এই প্রবণতা থেকে দেশের জনগণকে বের করে এনে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সর্বোপরি বলতে চাই, দেশের চিকিৎসাসেবা খাতের অগ্রগতির চিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সহজলভ্য করতে ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়াও আবশ্যক। মনে রাখা দরকার, দেশের দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী এখনো চিকিৎসার উচ্চমূল্য বহনে অক্ষম। তা ছাড়া বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই সময়ে এসে, যখন জনগণ সনাতন পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করে তখন তাদের সচেতনতার অভাবই পরিলক্ষিত হয়। আমরা মনে করি, জনগণকে সঠিক চিকিৎসা দিতে তাদের আরও সচেতন করতে হবে। দেশের মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74725 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1