বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। আর এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে চিকিৎসক সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যামানÑ যা নিশ্চিতভাবেই সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। সঙ্গত কারণেই সেবার মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে সাবির্ক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের একটিমাত্র সরকারি হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক ও ২২টি বরাদ্দকৃত শয্যা দিয়ে চলছে ভাস্কুলার ডিজিজ বা রক্তনালি রোগের চিকিৎসাসেবা। উদ্বেগের বিষয় হলোÑ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভতির্ হতে গেলেও হাসপাতালের অবকাঠামো ও চিকিৎসক সংকটে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। ফলে সমস্যা সমাধানে সেবার পরিধি বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরাÑ যা আমলে নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সড়ক দুঘর্টনা ও দুবৃের্ত্তর ছুরিকাঘাতসহ নানা দুঘর্টনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনেকের বিভিন্ন অঙ্গের রক্তনালি ছিঁড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ভাস্কুলার সাজাির্র না করলে আক্রান্ত অঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, যা পরে কেটে ফেলতে হয়। এমনকি সাজাির্রতে বিলম্বের কারণে রক্তনালি বন্ধ হয়ে কখনো কখনো রোগীর মৃত্যুও ঘটে! এ ক্ষেত্রে ভাস্কুলার সাজর্ন বা রক্তনালি চিকিৎসকরা বিচ্ছিন্ন হওয়া ধমনি বা শিরার রক্তবাহী নালিতে হাটের্র বাইপাস বা রিং পরানোর মতো সংযোগ স্থাপন করে রক্তনালি বøকের অস্ত্রোপচার করে থাকেন। আমরা মনে করি, যখন রক্তনালি রোগের চিকিৎসাসেবা নিয়ে এমন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভতির্ হতে গেলেও হাসপাতালের অবকাঠামো ও চিকিৎসক সংকটে ফিরে যেতে হচ্ছেÑ যা অত্যন্ত পরিতাপের এবং উৎকণ্ঠাজনক।
আমরা উল্লেখ করতে চাই. সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও রোগীদের অভিযোগ আছে যে, ভাস্কুলার সাজাির্র বা রক্তনালির কাযর্কর চিকিৎসায় একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী বহিবির্ভাগে চিকিৎসা নিতে গেলেও সেবায় চিকিৎসক ও শয্যা সংকট বিদ্যমান। আর এতে প্রতিষ্ঠানটির বহিবির্ভাগের রোগী ছাড়াও প্রতিদিন ভতির্ রোগীর চাপ সামাল দিতে বরাদ্দকৃত শয্যার বাইরে ফ্লোর ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে এ সব রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিএসএমএমইউতে ৪, ইব্রাহিম কাডির্য়াকে ৩ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ২৮ জন চিকিৎসক ও ৫০টির মতো শয্যা আছে। ফলে ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কম-বেশি ভাস্কুলার ডিজিজ বা রক্তনালি রোগে ভুগলেও তারা যে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সেটা নিশ্চিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ অঙ্গ হারাচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি আমলে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সবোর্পরি বলতে চাই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রতিষ্ঠান ও জনবল কাঠামোর অপ্রতুলতা সম্পকের্ সংশ্লিষ্টদের এমন অভিযোগ আছে, আশ্চযর্ বা সত্য হলেও দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজে এই চিকিৎসা হয় না! এ ছাড়া বেশির ভাগ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ভাস্কুলার সাজর্ন নেই। ফলে বিভিন্ন দুঘর্টনায় আহত হয়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের হাত-পা কেটে ফেলতে হচ্ছে! উন্নত চিকিৎসা সম্পকের্ ধারণা না থাকায় রক্তনালি বন্ধ হওয়া রোগীরা নিউরোলজি বা অথের্পডিক্স চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছেন। ফলে সাবির্ক পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রæত সম্ভব কাযর্কর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।