বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

আর্সেনিক ঝুঁকি

কার্যকর উদ্যোগ নিন
  ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আর্সেনিক ঝুঁকি

আর্সেনিক সমস্যা বাংলাদেশে নতুন নয়। বরং দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আর্সেনিক সমস্যাক্রান্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত হওয়ার পরও কেবল সচেতনতার অভাবে এবং কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় মানুষ এটা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না। আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকাগুলোর মানুষ এক ধরনের ভীতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সর্বোচ্চ আর্সেনিক দূষণের শিকার। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই মাটির নিচের পানিতে অধিকমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। সে অনুসারে ধারণা করা হয় যে, দেশের প্রায় ৩.৫ কোটি থেকে ৭ কোটি মানুষ ক্রনিক আর্সেনিকোসিস ঝুঁকিতে রয়েছে। যেখানে আমাদের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৬ কোটি এবং বাংলাদেশের লক্ষাধিক আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী রয়েছে। যাদের চূড়ান্ত পর্যায় ক্যান্সার। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ বার্তা। কারণ আমরা জানি, ক্যান্সার একটি অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যামোথেরাপি দিলে হয়তো পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষ কেন ধীরে ধীরে মৃতু্যর দিকে ধাবিত হবে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিশ্বব্যাপী আর্সেনিক দূষণ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। অবাক বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর পঞ্চাশটির মতো দেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সীমিত পরিমাণে পাওয়া গেলেও সারাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে এর প্রকোপ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্সেনিক হলো ধূসর আভাযুক্ত সাদা রং বিশিষ্ট একটি উপধাতু। প্রকৃতিতে আর্সেনিক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে মনুষ্যসৃষ্ট কার্যাবলী যেমন অক্সিডেশনের ফলে আর্সেনিক ভূগর্ভস্থ পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছে। আর সেই পানি নলকূপের মাধ্যমে তুলে পান করে বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্সেনিকজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আর্সেনিকোসিসের মূল কারণ ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও জৈব আর্সেনিকযুক্ত (যেমন- শস্যকণা, শাকসবজি, মাংস, দুধ ইত্যাদি) খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ। যা নীরব ঘাতকের মতো মানবদেহের বহু ক্ষতি সাধন করে থাকে। আর্সেনিক রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে ত্বকে কালো কালো দাগের মাঝে সাদা সাদা দাগ- যা বৃষ্টির ফোটার মতো দেখায়, ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ, হাত ও পায়ের চামড়ার পুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া। আর্সেনিকোসিস নিরাময়ের কোনো সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত হয়নি। চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ হলো আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এ ছাড়াও ভিটামিন এ, সি, ই স্পিরুলিনা ইত্যাদি সম্পূরক হিসেবে চিকিৎসা দেয়া হয়। বিএসএমএমইউ'র গবেষণায় এসব প্রদান করে উপকার প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া হাত-পায়ের পুরুত্বের চিকিৎসায় বিভিন্ন মলম (যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইউরিয়া) ব্যবহার করা হয়।

আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে সব এলাকার পানিতে আর্সেনিক এর মাত্রা বেশি সে সব এলাকার ব্যাপারে সরকারকে অধিকমাত্রায় উদ্যোগী হতে হবে। এর আগে ওই সব এলাকার টিউবওয়েল সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। তাতেও এর সুফল পাওয়া যায়নি। জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে এই সমস্যার সমাধান দিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69778 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1