বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পথশিশুদের প্রতি নজর দিন

কাজী অমিত হাসান শিক্ষার্থী: ঢাকা কলেজ
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

প্রতিটি দেশ বা জাতির একটা নিজস্ব পরিচয়সত্তা থাকে। আর সেই পরিচয়সত্তা সেই দেশের মানুষই সৃষ্টি করে। অর্থাৎ মানুষের কর্ম দ্বারা দেশটি পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে দেশটির পরিচয় ছিল পূর্বপাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা নামে, তখন দেশটি বহির্বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত ও অভাব-অনটন দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশটি পরিচিতি লাভ করে একটি বীরত্ব জাতির দেশ হিসেবে, যার মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য দেশটির ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, পুলিশ, বাঙালি সেনাবাহিনী ও বাংলার সব স্তরের মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি।

দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ নামে অনেকেই চিনত না 'মুজিব কান্ট্রি' নামেই বেশি সমৃদ্ধ ছিল। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতির পিতা ছিলেন আমাদের দেশের আইডেন্টিটি। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করার পরেই হঠাৎ করেই ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ 'মুজিব কান্ট্রি' থেকে 'কিলার কান্ট্রি' নামে পরিচিত হয়ে গেল। ১৯৭৫ সালের পর দেশটি শাসন শুরু করে দুজন সেনাশাসক ও বিচারপতি সাত্তারের সংক্ষিপ্ত শাসনকাল। তখন আমাদের পরিচয় ছিল, পাকিস্তানের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেনাশাসকদের দেশ পরিণত। এরপর ৯০-এর গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদের পতন হলে খালেদা জিয়ার শাসনকাল শুরু হয়। তার সময়ে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল বিদেশি সাহায্য আর দয়া-দাক্ষিণ্যে নির্ভরশীল দেশ হিসেবে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আবার নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে উঠতে থাকে। এরপর ২০০১-০৬ মেয়াদে খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ১০ পার্সেন্টের দেশ।

আবার ২০০৯ সালে মমতাময়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন। দেশটি দ্রম্নত হয়ে ওঠে উন্নয়নের একটি রোল মডেল।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ।

সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললেও, দেশের বৃহৎ একটি সমস্যা হলো 'পথশিশু'।

ঘুণ যেমন কাষ্ঠকে খেয়ে ফেলে ঠিক তেমনিভাবে পথশিশুরা একটি দেশের সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করে ফেলে।

কারণ একটি দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রসর।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখ পথশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর বিছানা নেই, ৮৪ শতাংশ শিশুদের শীতবস্ত্র নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে, ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে, ৭৫ শতাংশ শিশু ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না, ৮০ শতাংশ শিশু মাদকাসক্ত নেশায় আসক্ত ও এসব পথশিশুরা বিভিন্ন বস্তি, রাস্তার ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালে জীবন অতিবাহিত করে।

আমরা বাঙালিরা আবেগপ্রবণ জাতি, আমরা পথশিশুদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি।

যেমন : অনেকেই পথশিশুদের প্রতি করুণা করে, তাদের কিছু টাকা-পয়সা, খাবার ও পরিধানের বস্তু কিনে দেয়।

আর যারা অতি দয়ালু তারা নিজের শরীরের কাপড় খুলে দেন।

আবার কিছু মানুষ আছে যারা পথশিশুদের সব অপকর্মে জড়িত রাখে।

ক্ষমতায় থাকা দল/বিরোধী দলের সব ইউনিটের নেতারা পথশিশুদের চোরাকারবার, দালালি, মাদকদ্রব্য, পতিতাবৃত্তি ও সন্ত্রাসী কাজে নিয়োজিত করে।

বিভিন্ন মিছিলে পথশিশুদের সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকে (বিশেষ করে বিরোধী দল)।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মততাময়ী শেখ হাসিনার মতে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে ও শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বলবে। যে ১০ লাখ পথশিশুদের ঘর নেই, তাদের শিক্ষার আলো কে জ্বালাবে?

তাদের ঘর ছাড়াই কি প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলবে?

তাহলে পথশিশুরা কি বাসস্থান বহির্ভূত থাকবে? যেহেতু বাংলাদেশে বৃহৎ একটি সমস্যা পথশিশু সেহেতু সরকার কেন এর স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান করছে না। ৪৮ বছরে যেই সমস্যার সমাধান হয়নি তার সমাধান আদৌ কি হবে?

বাংলাদেশ সরকার যদি প্রবাসী ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিতে পারে তাহলে পথশিশুরা শিক্ষা, খাদ্য ও বাসস্থান কেন পাবে না?

পরিশেষে বলি, আমরা পথশিশুদের প্রতি যতই করুণাভাবে তাকাই না কেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা কেউ তাদের আসল প্রাপ্য দিচ্ছি না। আমরা তাদের কিছু টাকা, খাবার ও বস্তু দান করি, এগুলো ওদের আসল প্রাপ্য নয়। ওদের আসল প্রাপ্য হলো 'বর্ণমালার শিক্ষা' অ, আ, ক ও খ হঁ্যা এগুলোই ওদের আসল প্রাপ্য।

তাই আসুন না আমরা সবাই পথশিশুদের প্রতি করুণভাবে না তাকিয়ে ওদের অধিকারের দিকে তাকাই। ওদের প্রাপ্য ওদের বুঝিয়ে দিই। তাহলে আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পাবর।

আমরা আবারও আমাদের 'মুজিব কান্ট্রি' ফিরে পাব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67805 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1