শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হবে কবে?

দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমরা আশা করব, সরকার সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার নির্দেশনা মেনে চলবেন। আর তাতেই দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
মীর আব্দুল আলীম
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

পর্দা ভেদ করে দুর্নীতির গোমড় একে একে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পর্দার পর্দা ছিল না বলে পর্দা কাহিনী জেনে গেছে জনগণ। হালকা বালিশ ভারী হয়ে দুর্নীতিবাজদের মাথার বোঝা হয়ে গেছে। নির্মল পানি জনগণকে উপহার দিতে ওয়াসার কর্তা বাবুদের উগান্ডা ভ্রমণ কাহিনী সবই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল বিষয়। এসব ছাড়িয়ে আলোচনায় এখন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অনিয়ম। টিআইবি বলছে, 'দলিল ও দুর্নীতি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে'। জমি রেজিস্ট্রিতে ঘুষ লাগে ৫০০ থেকে ৫ লাখ টাকা। দলিলের নকল তোলার জন্য সেবাগ্রহীতাদের ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। দলিল নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি দলিলে দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা বা ঘুষ দিতে হয়। দলিল ও দুর্নীতি সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। এই সেবায় ক্রমাগত দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশব্যাপী কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেন স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। জমির দাম, দলিল ও দলিলের নকলের ধরন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা না থাকার ওপর এবং এলাকাভেদে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের পরিমাণ কমবেশি হয়। সেবা গ্রহীতা ও সরকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে পনের দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। ভূমি দলিল নিবন্ধন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গুণগত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। টিআইবি'র প্রতিবেদন বলা হয়, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপক, এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভূমি নিবন্ধন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে। এখানে নিয়োগ পদোন্নতিতেও দুর্নীতি ব্যাপকতা পেয়েছে। আসলে দুর্নীতিবাজদের কোনো নীতি নেই। দফায় দফায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে দেশে ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীও ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আক্ষেপ করে বলেছেন, 'সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সরকার প্রদান করেছে, যেটা প্রয়োজন সেটা তো আমরা মেটাচ্ছি। তাহলে দুর্নীতি কেন হবে?' এ জন্য সরকারি কর্মচারীদের, মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হবে। তার এমন নির্দেশ দুর্নীতিবাজরা ভড়কে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। দুর্নীতিবাজরা তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। আমাদের দেশকে যে কোনো মূল্যে দুর্নীতিমুক্ত করতেই হবে। ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সেবা খাতে দুর্নীতি হয় বেশি। মানুষের অর্থ ব্যয়সহ ভোগান্তি হয়। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে হবে। এখনো বোধ করি ফায়ার সার্ভিস ছাড়া প্রতিটি সেবা খাতে সেবা পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়। টিআইবির রিপোর্টে এদিক থেকে সবার শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দ্বিতীয় ও তৃতীয়তে আছে যথাক্রমে পাসপোর্ট ও বিআরটিএ। তবে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি ঘুষ নেয় বিআরটিএ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের সেবা পেতে বছরে ঘুষ দিতে হয় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, পাসপোর্ট ও বিআরটিএ, ভূমি অফিসে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পুলিশ স্টেশন, আদালত পাড়া থেকে শুরু করে সবখানেই অনেকটা রাখঢাক না রেখে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ চলছে। দুদিন আগে জাতীয় দৈনিকে দেখলাম রাজধানীর পাশের রূপগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নাকি প্রকাশ্যে ঘুষ নেয় সাব-রেজিস্ট্রার। কাজের ব্যাপ্তি অনুসারে ঘুষের পরিমাণের নির্ধারিত কোনো কোনো দপ্তরে। সেবাপ্রাপ্তি নাগরিক অধিকার। এ অধিকার অনেকটাই হরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, 'সবাইকে অনুরোধ করব, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, দেশটা আমাদের। আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজ সারা বিশ্বে একটা সম্মানজনক জায়গায় আসতে পেরেছি। ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি সেই পাকিস্তানও এখন আর্থ-সামাজিক সূচকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে চায়। এখন সেই পাকিস্তানও বলে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আজকে কিন্তু আমাদের আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলার সাহস তাদের নেই। এ কথা বলতেও তারা পারবে না। কারণ আমরা অনেক এগিয়েছি। এই এগিয়ে যাওয়াটা, এই যাত্রাটা আমাদের কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে।' কেবল প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায়ই কেবল দুর্নীতিমুক্ত দেশ হবে না। আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারের সততা নিয়ে কাজ করতে হবে।

দুর্নীতি যে বাড়ছে সাদা চোখেই তা দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি কমিয়ে আনার প্রয়াস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা। ঘুষ ও দুর্নীতি কমাতে সচিবদের বারবার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'পে- স্কেলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যে হারে বেড়েছে, তা বিশ্বে বিরল। তাই জনগণ যেন সেবা পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। বেতন যেহেতু বেড়েছে তাই ঘুষ-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।' অথচ সেবা খাতের কোথাও দুর্নীতি কমেছে এমন কথা শোনা যায়নি। বরং ভুক্তভোগীদের মুখে সেবা খাতের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাশাপাশি জোর করে ঘুষ আদায় করার অভিযোগও কমেনি। সেবা খাতের ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন, ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দুর্নীতির এই চিত্র যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তার উদাহরণ উঠে এসেছে টিআইবির চলতি প্রতিবেদনে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) 'সেবা খাতে দুর্নীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘুষ ছাড়া সেবাপ্রাপ্তি এখন প্রায় দুরূহ।

পৃথিবীর সবদেশেই কম-বেশি দুর্নীতি আছে, ঘুষের রেওয়াজ আছে। এই কথাটির আপেক্ষিক সত্যতা মেনে নিয়েও, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপকতাকে অস্বীকার করার কোনো অজুহাত নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, এই দুর্নীতি জনগণের মনে ব্যাপক হতাশাবোধের জন্ম দিয়েছে। এই হতাশাবোধের মূল কারণ হচ্ছে যে, দেশের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যকর ভূমিকা থেকে বিচু্যত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। একটি গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন সমাজব্যবস্থার প্রধানতম ভিত্তি হওয়ার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অগ্রগণ্য হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম, সরকারি ও বেসরকারি আমলাতন্ত্র, জাতীয় সংসদ, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি খাত। আমরা বিগত কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্রমে ধ্বংস বা অকার্যকর করার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে চালিত করেছি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুর্নীতি।

সরকারি কেনাকাটায় কমিশন, ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়া, ঠিকাদারের বিল ছাড়ানো, সাব-রেজিস্ট্রার, সওজের প্রকৗশলী, বন বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও পুলিশের ওসি, এসপিসহ গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো বদলির তদবির, জলমহাল বরাদ্দ, সরকারি বাড়ি বিক্রি, আইনগত ফাঁকফোকর দিয়ে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় নিয়ে আসা, পস্নট বরাদ্দ ও বরাদ্দ পাওয়া সরকারি পস্নট পরিবর্তন করা, পস্নটের আকার বাড়ানো এবং নিয়োগবাণিজ্যে ঘুষ বেড়েছে। উলিস্নখিত বিষয়ে সারা বছরই কম-বেশি ঘুষবাণিজ্য চলে। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে এ ধরনের তদবির বেশি করা যায় বলে সচিবালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এখন তদবিরকারকদের জমজমাট আনাগোনা বিরাজ করছে। আবার এসব কাজকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির পেশাদার তদবিরবাজ চক্রও গড়ে উঠেছে। প্রশাসনে ঘুষ এখন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্য। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির পদে লিখিত পরীক্ষা নেয়া বাধ্যতামূলক না হওয়ায় একেবারে তালিকা করে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগের অন্ত নেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি প্রমাণ করা যায় না বলে সংশ্লিষ্টরা একেবারে বেপরোয়া। এ ছাড়া কয়েকজন প্রভাবশালী সচিবের পিএসের দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্ট সচিবদের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাকে নিয়ে রয়েছে দুর্নীতির অনেক মুখরোচক গল্প।

দুর্নীতির এই সর্বগ্রাসী থাবা থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে যে, কেন দুর্নীতি হয় বা দুর্নীতি বিস্তারের প্রক্রিয়া কীভাবে বৃদ্ধি পায়। সার্বিকভাবে দেখলে দুর্নীতির ব্যাপকতার সঙ্গে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের একটি সম্পর্ক আছে। একথার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে বলতে হয় যে, কেবল মূল্যবোধের অবক্ষয় বাংলাদেশের দুর্নীতির ব্যাপক প্রসারের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা জনগণের মনে যে পরিমাণ হতাশার সৃষ্টি করে তা তুলনাহীন। দুর্নীতি কেবল ওপর মহলে হয় তাই নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এই অংশগ্রহণের কারণ সব ক্ষেত্রেই, শুধু লোভ নয় বরং অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে নূ্যনতম জীবনযাপনের প্রচেষ্টা। এই অসহায়ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃষ্টান্তের, যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির সুযোগ নেই বরং জনগণকে মূল্য দিতে হয় সৎ থাকার জন্য। জনগণের কাছে এই ধারণা ক্রমেই দৃঢ় হয়েছে যে, সমাজে নীতিবান হয়ে থাকার মধ্যে কোনো গৌরব নেই বরং আছে বহু ভোগান্তি। সমাজের সুশীল অংশেও ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে বেআইনি পথে থাকার সুবিধা রয়েছে অনেক। জনগণের মনে এই ধারণা যত ক্রমবিকাশমান হচ্ছে, হতাশা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে বিরূপতা তত বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এই হতাশার ফল ধরে আমরা হয়ে যাচ্ছি বছরের পর বছর দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ।

বাংলাদেশ একটি প্রধান দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, এই ধারণাটি সৃষ্টি হয়েছে দেশের আমজনতার মনে, কারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অবকাশ রাখেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা দেশের জনগণের মনে তীব্র হতাশার সৃষ্টি করেছে, দুর্নীতির পথে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সৃষ্টি করেছে বাধা। যতদিন এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারবে না, সমাজে দুর্নীতির ব্যাপক দৌরাত্ম্যের প্রতাপ আমাদের দেখে যেতে হবে। দুর্নীতির যে ধারণা আমরা সৃষ্টি করেছি, সেই ধারণাকে বদলাতে হবে আমাদেরই। আর তা করতে হবে কথাকে কাজে পরিণত করার মাধ্যমে। বাংলা নামের এ দেশ আমাদের সবার, তাই আমাদের সবার মিলিত প্রতিরোধে সমাজের সব অনাচার দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও সঠিক ভূমিকা থাকতে হবে। আর এসব বিষয়ে সরকার জনতার ন্যায্য সমর্থন পাবে বলেই আমার বিশ্বাস। বর্তমান সরকারের সাফল্যের অনেক নজির আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। শত কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গত দুই বছরে মন্ত্রী-এমপি ও তার সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ দুর্নীতির তালিকা কম নয়। ক্রমেই তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সরকারের অর্জনগুলোকে আড়াল করে দিচ্ছে।

সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করা এবং উন্নয়ন ঘটানো। এ জন্য আমাদের রাজনীতিক, মন্ত্রী, আমলা আর দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনেরও কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতি কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সেবা খাতের এই দুর্নীতিই সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। আজ দুর্নীতি যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ছেয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ যার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে তার পেছনে রয়েছে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া। বেশির ভাগ সময়েই যারা দুর্নীতি করেন তারা পার পেয়ে যান। দুর্নীতির অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলে নেয়া হয় না, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শাস্তি পায় না, ফলে দুর্নীতি রোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি রোধে আইনের কঠোরতা বাড়াতে হবে। সর্বোপরি এ জাতীয় অপরাধে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমরা আশা করব, সরকার সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার নির্দেশনা মেনে চলবেন। আর তাতেই দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।

মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক

হবংিংঃড়ৎবসরৎ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67697 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1