বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ই-পাসপোর্ট সেবা

যথাসময়ে চালু হোক
নতুনধারা
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত ও সমৃদ্ধ তথা ডিজিটালাইজড বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার আন্তরিক ও অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রক্রিয়ারই অন্যতম একটি অপরিহার্য অংশ ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্ট সেবা বেশ আগে থেকেই চালু হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বারবার সময় নির্ধারণ করা সত্ত্বেও ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা যায়নি। এর আগে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরে চালুর কথা থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাস থেকেই চালু হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ই-পাসপোর্ট সেবা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হলে আগমন ও বহির্গমন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রম্নত হবে। লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এর পাশাপাশি জাল ও ভুয়া পাসপোর্টের দৌরাত্ম্যও হ্রাস পাবে। যাত্রী হয়রানি কমবে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ১২০তম।

তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। আমাদের দেশে এমআরপির যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। যাহোক, দেরিতে হলেও ই-পাসপোর্ট চালু হওয়া ইতিবাচক বৈকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনের সময়ে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ডিআইপির ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই অত্যাধুনিক এ পাসপোর্ট গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়ার কথা জানায় ডিআইপি। কিন্তু যন্ত্রপাতি সেটআপসহ বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা, সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি সেটআপে কিছু ত্রম্নটি ধরা পড়ায় তা সম্ভব হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ই-পাসপোর্ট কার্যকর করতে প্রকল্পের আওতায় জার্মানি থেকে ৫০টি ই-গেট আসার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র তিনটি ই-গেট। এগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হলেও দেশের বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে ই-গেট স্থাপন শেষ করা না গেলে এর সুফল মিলবে না। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ বয়স অনুপাতে ৫ ও ১০ বছর হবে। তবে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআর পাসপোর্ট বাতিল হবে না। কিন্তু কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

উলস্নখ্য যে, বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমান পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে 'পাবলিক কি ডাইরেকটরি'তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে। ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দিয়ে দেয়। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডিতে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে থাকে। এটি এক অত্যাধুনিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুরুতে ৩০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য কারখানা স্থাপন করা হবে উত্তরায়। ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যবস্থার আরও এক ধাপ উন্নতি সাধিত হবে। ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। সুতরাং এতে নাগরিকরাও যে অধিক উপকৃত হবেন, তা বলাই বাহুল্য। ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হয়ে সব অপেক্ষার অবসান ঘটুক- এটাই সবাই প্রত্যাশা করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67400 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1