শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর: জানতে ও বলতে হবে?

৩৭০ ধারা রদ করে ভারতশাসিত কাশ্মীরকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করে কেন্দ্রের অধীন আনার অর্থ তারা শুধু বিশেষ মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যতাই হারাল না বরং অঞ্চল দুটির অবস্থান অন্যান্য প্রদেশেরও নিচে চলে গেল এবং ৩৫-এ ধারায় প্রদত্ত বিশেষ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হলো।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অব.)
  ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকেই সব সময় কাশ্মীর আলোচনায় থাকলেও সম্প্রতি তা একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। আগস্ট ০৫, ২০১৯ তারিখে (সোমবার) ভারত সরকার কর্তৃক সংবিধানের ৩৭০ ধারা (যা অক্টোবর ১৭, ১৯৪৯ সালে সংবিধানে সংযোগ করা হয়েছিল) রদের মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা উঠিয়ে ভারতশাসিত কাশ্মীরকে দুভাগ করে কেন্দ্রের শাসনের অধীনে আনার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উলেস্নখ্য, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশে হিন্দুদের জন্য ভারত আর মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও ব্রিটিশরাজ কাশ্মীর ও হায়দারাবাদের মতো প্রিন্সলি স্টেটগুলোকে (গোয়া, দেমন, দিউ, চন্দননগর ইত্যাদিসহ প্রায় ৫০০টি) নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দিয়েছিল। তারপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কাশ্মীরের জনসাধারণের দুঃখ-কষ্টের শুরু। উলেস্নখ্য, তদানীন্তন ভারত উপমহাদেশের প্রিন্সলি স্ট্রেটগুলোর মধ্যে কাশ্মীর মুসলিমপ্রধান হিন্দু রাজা ও হায়দারাবাদ হিন্দু সংখ্যাগুরু মুসলিম শাসক ছিল। অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে হায়দারাবাদসহ অধিকাংশ স্বতন্ত্র স্টেটকেই সেনা অভিযানের মাধ্যমে ভারত দখল করে নিয়েছিল। তবে সীমান্তবর্তী হওয়ার জন্য ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীরের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল। আমি এ লেখায় কাশ্মীরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে সম্ভাব্য পরিণতি ও করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

ভারত আর পাকিস্তান সৃষ্টির সময় কাশ্মীরের মুসলমানরা (রাজ্যের প্রায় ৮৫% লোক) পাকিস্তানে যোগ দিতে চাচ্ছিল। একপর্যায়ে (অক্টোবর ২২, ১৯৪৭-এ) তারা পাশতুন মুসলিম যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজা হরি সিং সাহায্য প্রার্থনা করলে ভারত সরকার তাকে। ভারতের সঙ্গে যোগদানের পরামর্শ দেয়। তিনি কতগুলো শর্তে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি আর যোগাযোগব্যবস্থা এই তিনটি বিষয় কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থাকবে এবং বাকি সবকিছু রাজ্যসরকার পরিচালনা করবে। ভারতের সঙ্গে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক একটা চুক্তি ভারতের প্রথম গর্ভনর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে স্বাক্ষর করেন। তখন পাশতুন যোদ্ধাদের সরাসরি সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি পাকিস্তান সেনাবাহিনীও কাশ্মীরে ঢুকে পড়লে ভারতীয় বাহিনীও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটির মধ্য প্রথম ঢুদ্ধ। দীর্ঘ চার বছর যুদ্ধের পর ১৯৫২ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় (ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উঠিয়েছিল) ঐতিহাসিক এই যুদ্ধ শেষ হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনসাধারণ তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করার কথা থাকেলও ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হলেও হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর থেকে উভয় সেনাবাহিনীই যেখানে ছিল সেখানে অবস্থান করছে এবং মধ্যবর্তী সীমানাকে লাইন অব কন্ট্রোল (খঙঈ) বলা হয়। অথচ প্রস্তাবিত সেই নির্বাচন ভারত আজও দেয়নি বিধায় একদিকে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শত্রম্নতা দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে কাশ্মীরের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও অধিকার হারানো প্রক্রিয়াও ক্রমাগতভাবে চলেছে। যার সর্বশেষ পদক্ষেপ হলো ভারত সরকার কর্তৃক একতরফাভাবে সংবিধানে ৩৭০ ধারা বাতিল করেন। অথচ দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত শিমলা (১৯৭২) ও লাহোরে (১৯৯৯) চুক্তি দুটিতেও বলা আছে যে কাশ্মীরের যে কোনো সংকটে আলোচনা করবে দুই দেশে। উলেস্নখ্য যে ১৯৫৪ সালের সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরীদের সম্পত্তির মালিকানা এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিশেষ অধিকার ও সুযাগ-সুবিধা দিয়েছিল।

৩৭০ ধারা রদ করে ভারতশাসিত কাশ্মীরকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ এই দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করে কেন্দ্রের অধীন আনার অর্থ তারা শুধু বিশেষ মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যতাই হারাল না বরং অঞ্চল দুটির অবস্থান অন্যান্য প্রদেশেরও নিচে চলে গেল এবং ৩৫-এ ধারায় প্রদত্ত বিশেষ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হলো।

ভারতীয় সংসদে গৃহীত এই পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমে প্রক্রিয়াটি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কারও কোনো মতামত না নিয়ে এমনকি প্রস্তাবিত বিলটি সংসদদের মধ্যে বিতরণ না করে হিন্দুবাদী সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা সংসদে পাস করে নিয়েছে। সরকারের দাবি মোতাবেক বিষয়টিকে। ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে মেনে নিলেও এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে স্থানীয় জনসাধারণসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত গ্রহণ করাই সমীচীন ছিল। এমনকি ৩৭০ ধারা মোতাবেক এ ধরনের প্রস্তাব কাশ্মীর থেকে আসার কথা। এ সিদ্ধান্ত ইতোপূর্বে গৃহীত সিকিম ও হায়দারাবাদের চেয়েও নিষ্ঠুর যা ভারতের বর্তমান সরকারের কর্তৃত্ববাদী, আগ্রাসী ও উগ্রমনাভাবেরই বহির্প্রকাশ মাত্র। অবশ্য বিষয়টির উপর মতামত দিতে ভারতের বিচার বিভাগও সময়ক্ষেপণ করছে।

যে যাই বলুক না কেন- সবকিছু বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে ভারতের বিজেপি সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই কাশ্মীরের ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। তারা কাশ্মীরের ভাগ্যবিধাতা ভাগ্য। তাদের মতো করে নির্ধারণ করার জন্য ২০১৮ সালের মাঝামাঝি রাজ্যপাল শাসন এবং ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও কাশ্মীর সমস্যার-সমাধানের বিষয়টি রেখেছিল। তারপর, অনেকের মতে, নির্বাচনের আগে (১৪ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৯) পুলওয়ামা জেলার জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে-৪৪-এ আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার মতো ঘটনার সৃষ্টি করে একদিকে উগ্র জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে নির্বাচনে সুবিধা আদায় অন্যদিকে সারা দেশে কাশ্মীরবিরাধেী মনোভাব ছড়িয়ে দিয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই 'অবৈধ কার্যক্রম নিবারণ আইন' এবং 'জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইন' সংশোধন করার ফলে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় বসে কোনো ভারতীয় নাগরিক লেখায় বা কথায় দ্বিমত প্রকাশ করলে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আটক, জামিন ছাড়া বন্ধি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে। ফলে কংগ্রেসসহ বিরোধী শিবির এবং অমর্ত্য সেনের মতো প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার কিছু মানুষ বিরোধিতা করলেও ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দল এবং শক্তি সরকারের এই পদক্ষেপকে জোর সমর্থন দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রচুর কাজ করার ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো মুসলিম দেশসহ অনেক দেশ এমনকি রাশিয়া ও ইসরাইলও বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ উলেস্নখ করে ভারতের পদক্ষেপকে সরাসরি সমর্থন করেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো অনেক নমনীয় মতামত যথা কাশ্মীরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারত ও পাকিস্তানসহ সবাইকে দায়িত্বশীল হতে বলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখার কথা বলেছে। এসব হলো এক প্রকার ভারতের কার্যক্রমকে সমর্থন দেয়ার সামিল। অথচ আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ডাইরিতে লিখেছিলেন, 'ভারতের উচিত ছিল গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা স্থায়ী শান্তিচুক্তি করে নেয়া। তখন পাকিস্তান ও ভারত সামরিক খাতে ব্যয় না করে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারত। দুই দেশের জনগণও উপকৃত হতো। ভারত যেহেতু গণতন্ত্রের পূজারী সেহেতু কাশ্মীরের জনগণের মতামত নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়? এতে একদিন দুটি দেশই এক ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে বাধ্য হবে।' (সূত্র: কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা-১৫৯)। কাশ্মীরের সম্পর্কে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর এই অবস্থানকে বিবেচনায় নিতে হবে।

ভারতের বর্তমান কাশ্মীরনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে ইসরাইলের প্রসঙ্গ এসে যায়। ভারত ১৯৯২ সালে ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তারপর থেকে বিভিন্ন ইসু্যতে তারা পরস্পর একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। উভয়ের প্রতিবেশীই মুসলিম দেশ। তাদের ভাষায় উভয়েই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং তাদের নিরাপত্তা মুসলিম রাষ্ট্রের দ্বারা হুমকির মুখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা উভয়েই লড়ছে ভূমি দখল বা ভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ভারত ইতোমধ্যে ইসরাইলের সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় বাজার হয়েছে। ২০১৭ সালে তাদের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ভারত। তারা প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রসহ শুধু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে যা ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তারা পাকিস্তানের বোলাকাটে জিইশ-ই-মুহাম্মাদের ঘাঁটি আক্রমণের সময় ইসরাইলের রাফায়েল স্পাইস-২০০০ 'স্মার্ট বামে' ব্যবহার করেছে। তা ছাড়া সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, কমান্ড কন্ট্রোল ধ্বংস, সন্ত্রাসী হত্যা ইত্যাদিও ইসরাইলের বহুল ব্যবহৃত শব্দ। নিজেদের বৈশ্বিক স্বার্থ আর নয়া দিলিস্নর কাছে অস্ত্রশস্ত্র বিক্রির জন্য তারা ভারতে মুসলমানবিরাধেী মনোভাব ও হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উসকে দেবে সেটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত তার দীর্ঘদিনের প্যালেস্টাইনের নীতি পরিবর্তন করে ইসরাইলকে জোর সমর্থন দিয়েছে। অতএব, বর্তমান বাস্তবতায় কাশ্মীরে ভারত কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপে ইসরাইল এবং তার বন্ধুদের পূর্ণ সমর্থন করারই কথা।

পাকিস্তান নিজ অংশের কাশ্মীর অর্থাৎ আজাদ-কাশ্মীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরকে নিজের করার জন্য সব সময় চেষ্টা করেছে। তারা কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধ (১৯৬৫ সালে এবং ১৯৯৯ সাল ভারতের নির্বাচনের আগে) এবং অনবরত ঝগড়া-বিবাদ করে চলছে। আমেরিকাসহ অধিকাংশ উন্নত দেশ এমনকি ভারতের মতো ১৯৯০-এর দশক থেকে, পাকিস্তানও তার স্বার্থের জন্য কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধবাদী রাজনৈতিক শক্তি ও জঙ্গিদের (তথাকথিত আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহার করেছে যা অবশ্য সে সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে। তবে পাকিস্তান যাই বলুক না কেন, জইশ-ই-মুহাম্মাদ (২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত) ও লস্কর-ই-তাইয়ে্যবের মতো ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলো পাকিস্তানের সব ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। আবার যেহেতু বিষয়টি দীর্ঘদিন দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান হচ্ছে না এবং হওয়ার সম্ভাবনাও নেই এবং ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাও কখন মেনে নেয়নি সে ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে দুর্বল পাকিস্তান আর কি-ই বা করতে পারত? কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের নীতি বুঝতে প্রায় ৪২ বছর আগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জুলফিকার আলী ভুট্টোর জাতিসংঘে প্রদত্ত এক ভাষণের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, 'কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়, বরং এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এক বিতর্কিত ভূখন্ড। আর কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের দাবি সব সময়ই অনেক বেশি। কারণ রক্তে, মাংসে, জীবনযাপনে, সংস্কৃতিতে কিংবা ভূগোল আর ইতিহাসে তারা পাকিস্তানের মানুষের অনেক কাছের।'

ভারত ও পাকিস্তানের বৈরিতার মধ্যে পড়ে গত ৭০ বছর ধরে কাশ্মীরের জনগণ অন্যায়-অবিচার, নিপিড়ন-নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, আটক, ধর্ষণ ইত্যাদিসহ সব ধরনের অত্যাচার আর বঞ্চনার শিকার হয়েছে। গত ৩০ বছরে ৩০ হাজারেরও অধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে। ফলে ১৯৯৮ সাল থেকে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। ভারত সরকার সমগ্র কাশ্মীরকে একটা জেলখানা বা সেনানিবাস বানিয়ে সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ ও তাদের দাবিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা ও কলা-কৌশল প্রয়োগ করেছে। ফলে সেখানে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের ন্যায্য দাবি এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃত অধিকার অর্থাৎ গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দেয়া হয়নি।

তাই স্থিতিশীলতা আর উন্নয়নের কথা বলে ভারত সরকারের একতরফাভাবে গৃহীত সর্বশেষ পদক্ষেপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্নের অবকাশ আছে। বিষয়টিকে কাশ্মীরের জনসাধারণের বিশ্বাস ভঙ্গের সামিলও বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, 'বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩৫(ক) ধারারও বিলোপ করে দেয়া হলো। এর মধ্যদিয়ে সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। এর পরিণাম ভালো হতে পারে না।' এর আগে ৩৭০ ধারা বাতিল হতে পারে এমন জল্পনায় রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা নষ্ট করে দেয়া হলে তা দেশের পক্ষে অমঙ্গলজনক হবে। ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংবিধানবিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ চিদাম্বরমের সংসদে প্রদত্ত বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব দল, সব রাজ্য, সব নাগরিককে এ বিষয়ে সতর্ক করতে চাই যে রাজ্যগুলোর সমাহার। (ইউনিয়ন অব স্টেট) হিসাবে ভারতের যে ধারণা, তা আজ ভয়াবহ বিপদের মুখে।

কাশ্মীরের মানুষের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করার জন্য স্থানীয় রাজনীতি ও নেতৃত্বের কর্মকান্ডও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কাশ্মীরের আপমর জনতা ভারত, পাকিস্তান কিংবা চীনের সঙ্গে নয় বরং তারা সব সময় নিজস্ব একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছে। রাজা হরি সিং, তার পুত্র কিরণ সিং (স্বাধীনতার পর কাশ্মীরের প্রথম শাসক : নভেম্বর ১৭, ১৯৫২ থেকে মার্চ ৩০, ১৯৬৫ পর্যন্ত এবং প্রথম গর্ভনর নভেম্বর ৩০, ১৯৬৫ থেকে) এবং তাদের মতো অমুসলিম পরিবার/নেতৃত্বের কথা বাদ দিলেও কাশ্মীরের অন্যতম প্রভাবশালী। রাজনৈতিক পরিবার 'আব্দুলস্নাহ পরিবার ভারতের মধ্যেই কাশ্মীরের ভবিষ্যতে কথা বলে দীর্ঘদিন ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কিছুই করতে পারেনি। তাই এখন গৃহবন্দি হয়ে। হাজারও কান্নাকাটি আর দুঃখ প্রকাশ করলেও তাদের স্বার্থপরতা, দৃঢ়চেতার অভাব আর আপসকামী রাজনীতি কাশ্মীরের মানুষের স্বাধিকার হারানো আর নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ-কষ্টের অন্যতম কারণ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।

বিশ্ব সম্প্রদায় সব সময় বলেছে যে যুদ্ধ নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রায় শতাব্দী প্রাচীন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাকিস্তান সবসময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা চাইলেও ভারত বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা বলে বারবার এড়িয়ে গেছে। শক্তি ও সামর্থ্যে ভারত একটি অনেক শক্তিশালী দেশ। বিশ্বের পঞ্চম অর্থনৈতিক শক্তি (পাকিস্তান হলো ৪৪তম) ভারত সামরিক শক্তিতেও অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ জনসংখ্যার দক্ষিণ এশিয়ার দেশদুটিই কিন্তু পারমাণবিক বোমার অধিকারী। কাশ্মীরের হিন্দুরা উলস্নাস করলেও ভারতের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অন্যান্য অঞ্চলের সংখ্যালঘু ও খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপ ভালোভাবে নেয়নি। অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ইতোপূর্বে মোতায়েনকৃত পাঁচ লাখের সঙ্গে আরও বেশি সেনা প্রেরণ এবং সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কারফিউ এবং বাইরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েও তারা আন্দোলন ও প্রতিরোধ শুরু করেছে। সব বাধা আর নিষেধ অমান্য করে ০৮ আগস্টেই কেন্দ্রশাসিত লাদাখের শিয়া সংখ্যাগুরু মানুষ কারগিলে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য স্থান থেকেও প্রতিবাদের খবর এসেছে। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা বোঝাতে অবরুদ্ধ, বিভ্রান্ত, সন্ত্রস্ত, ক্রুদ্ধ, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীর উপত্যকাটিকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার ভারতীয় সেনা রাস্তা আটকে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে, সাধারণ মানুষের বাড়ির ছাদ দখল করে নিয়েছে। ইন্টারনেট, মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন বন্ধ, ফলে বাইরের দুনিয়ায় যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারত সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপগুলো এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জরুরি। মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য এর সঙ্গে বন্দিদশার তুলনা করছেন! মার্কিন সংবাদপত্রটির মতোই ব্রিটিশ চ্যানেল বিবিসিও দাবি করেছে যে, বিক্ষোভ সামলাতে গুলি বা ছররা ছুড়েছে ভারতীয় সেনা।

উলেস্নখ্য, কাশ্মীর এতদিন শুধু এক ধরনের মানসিক ও প্রতীকী স্বাতন্ত্র্যতা ভোগ করত। কেননা, শুধু ১৯৫৬ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ৪৭টি এবং তারপর আরও কয়েকবার রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে ৩৭০ ধারাকে দফায় দফায় দুর্বল করা হয়েছে। আর এখন ভারত সরকার এবং তাদের হিন্দুত্ববাদের প্রকৃতস্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তাই বলা যায় যে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বশেষ পদক্ষেপের ফলে ভারতসহ কাশ্মীর নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ উন্মোচিত হয়েছে। তাই এখন দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা কাশ্মীরে এদিক কিংবা ওদিক একটা কিছু হয়তো হবে। ভারত যদি কাশ্মীরকে সঙ্গে রাখতে চায় তবে তাকে কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে নিয়েই উপত্যকায় বিদ্রোহ আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে ভারত সরকারের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী মনোভাব, গুজরাট ও বাবরি মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতি, গোরক্ষা আর জয়শ্রীরাম ইত্যাদির নামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন ইত্যাদি দেখে সেরকম কিছু আশা করাও কঠিন। আমরা জানি এবং ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে অত্যাচার আর নির্যাতন করে মানুষের ন্যায্য আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম আর স্বাধিকার আন্দোলন চিরদিনের জন্য দাবিয়ে রাখা যায় না। অতএব, নিজেদের ভাগ্য নির্ধারনের প্রস্তাবিত সেই নির্বাচন আপাতত না দিলেও ভারতের উচিত হবে এলাকার মানুষের মন জয় করে আরও কিছুদিন কাশ্মীর শাসন করা। তবে কথাও ঠিক যে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে সরকার একদিকে একটি দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের শুরু অন্যদিকে বহু জাতি ও বহু ধর্মের দেশ ভারতের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে দুর্বল করেছে। তাই অনেকে বলতে চায় যে ৩৭০ ধারার মাধ্যমে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের যে যোগসূত্র জন্ম নিয়েছিল তা এখন ছিন্ন হয়ে গেল। তাই সব ক্রিয়া-প্রক্রিয়া। এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিকে যথাযথভাবে সামাল দিতে না পারলে ভবিষ্যতে ভারতকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বের সব শান্তিকামী মানুষ এবং শক্তিকে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের পার্শ্বে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। কেননা বর্তমান অবস্থান যার কাছে যেমনই হোক না কেন, এখনো জাতিসংঘের প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের ভিত্তিতেই কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত বহাল আছে।

তাই সবাইকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়নীতির আলোকে তাদের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি খ্রিস্টানদের জন্য সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান এবং ইন্দোনেশিয়াকে ভেঙে তিমুরের মতো স্বাধীন রাষ্ট্র সৃস্টি করতে পারে তবে কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র তৈরি করাতে দোষ কোথায়? সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে তাদের দাবি অন্যদের চেয়ে অধিক যুক্তিযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত। এজন্য ভারত কিংবা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়কে সেসব ব্যবস্থাই নিতে হবে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ সব বিশ্বশক্তিগুলোকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সময় প্রফেসর। ইউনূসসহ নোবেল বিজয়ী একদল প্রথিতযশা মানুষ যেমন তাদের পাশে ছিল তেমনি বিশ্বের বিবেকবান মানুষের উচিত আজ কাশ্মীরীদের পাশে দাঁড়ান। তা না হলে একদিকে মানুষ সমাজ ও বিশ্ব-ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাবে অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বে অশান্তি লেগেই থাকবে। একটি ঐতিহ্যবাহী সমৃদ্ধশালী জাতির অস্তিত্ব ও পরিচয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে হুমকির মুখে পড়বে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের উগ্রবাদী মনোভাব, ভুল ও সাম্প্রদায়িক নীতি আর গোষ্ঠী স্বার্থের কারণে উপমহাদেশের মানুষ ইতোমধ্যে অনেক কষ্ট করেছে। তাদের মধ্যে কৃত্রিম বিভাজন, অবিশ্বাস এবং শত্রম্নতার বীজ বপন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ তা কোনোভাবেই চাই না। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ভালো থাকতে চাই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার মোকাবেলা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক উপমহাদেশ গড়তে চাই। তাই আমাদের সব সময় ন্যায় আর ন্যায্য কথা বলতে হবে। এ মুহূর্তে সব অশুভের মধ্যে একটি সুখবর হলো যে ভারত ও পাকিস্তানের অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রকামী মানুষের এবং তাদের সঙ্গে অন্যান্য স্বাধীনচিন্তা ও উদারমনের মানুষসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কাশ্মীরের মানুষের পক্ষে কথা বলতে শুরু করছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বাংলাদেশ ও কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশের ২৫১ বিশিষ্টজন 'দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও এই অঞ্চলের বন্ধুরা' নামে উদ্বেগ প্রকাশসহ কাশ্মীরের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। ১৬ আগস্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীর নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেছে। সেখানে পাঁচ স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চীন আবার সরাসরি পাকিস্তান ও কাশ্মীরের পক্ষে এবং অনেকটা নিরপেক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা-সমাধানের কথা বলেছে। আর ১০ অস্থায়ী সদস্যদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েত সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাকিরা নিরপেক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা বলেছে। অর্থাৎ কাশ্মীরের কথা বিশ্ব আবার বলতে ও শুনতে শুরু করেছে। আমাদের সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে হবে বিধায় অন্ততপক্ষে সত্য কথা বলার ধারাকে বেগবান করতে হবে।

আর একটা বিষয় নিয়ে কিছু বলা দরকার। তা হলো কাশ্মীরের জটিল সমস্যার একটা সমাধান পাওয়ার জন্য কাশ্মীর নিয়ে কথা বলার মুহূর্তে অন্যকিছু নয় বরং শুধু কাশ্মীরের উপরই ফোকাস রাখতে হবে। ৩৭০ ধারার ওপর ভিত্তি করে নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, মিজো ও মেঘালয়সহ অন্যান্য এলাকার জনগণ যে বিশেষ অধিকার ভোগ করে তাদের কি হবে কিংবা এ ধরনের ইসু্য নিয়ে কথা বলার সময় এটা নয়। তা ছাড়া পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া আইনজীবী এমএল শর্মা আর সাংবাদিক অনুরাধা ভাসিন সুপ্রিম কোর্টে দুটা আবেদন করে ইতোমধ্যে কিছু ক্ষতি করে ফেলেছেন। কাশ্মীর নিয়ে আবেগ প্রকাশ, অপ্রয়োজনীয় পোস্ট বা বিবৃতি প্রদান ইত্যাদির প্রয়োজন নেই। অতএব, আমাদের কাশ্মীরের বিষয় ভালো করে জানতে হবে এবং কাশ্মীরের অত্যাচারিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ন্যায্য কথা বলতে হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অব.): কলাম লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63604 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1