বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইসু্য দ্রম্নত সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা একটি বিরাট সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দরিদ্র দেশের পক্ষে এর মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষ হিসেবে মানবেতর দাবি অনুযায়ী আমরা তাদের সাহায্য করতে বাধ্য। কিন্তু তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসন চুক্তি ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। ইতোপূর্বে বাস্তুহারাদের ব্যাপারে মিয়ানমার তার প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করেনি।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহমদ
  ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

১৯৪৮ সালে বার্মা বর্তমান নাম মিয়ানমার ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী বার্মার শাসকরা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন এবং আরাকানসহ দেশটির মুসলিম বাসিন্দাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করেন। তারা অপপ্রচার শুরু করেন যে এরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, এদের পূর্ব-পুরুষরা বাঙালি, আসলে তা নয়, রোহিঙ্গাসহ আরাকান বা মিয়ানমারে মুসলিম বাসিন্দাদের কেউই বাইরে থেকে আসা কোনো অভিবাসী নয়। তারা সেখানকার মূল ভূখন্ডেরই বাসিন্দা, জন্ম ও উত্তরাধিকার সূত্রে সে দেশেরই নাগরিক, ভূমিপুত্র। এই সত্য কথাটি আমাদের জোর দিয়ে বলতে হবে এবং আমাদের কূটনৈতিক মিশনসমূহ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রভৃতির মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে এই সত্যটি জানিয়ে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে জোরালো কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। চুপ করে থাকলে এ সংকটের সমাধান কখনো হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভারে পর্যুদস্ত। যদিও ঢাকা ইউএনএইচসিআরসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওর সহযোগিতায় বেশ সুচারুভাবে শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য প্রদানে সমর্থ হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে, কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও জীবনধারণ ব্যবস্থা সুরক্ষা করে, মিয়ানমারকে রাজি করিয়ে তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের কূটনীতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে ঢাকা-নেপিদো জানুয়ারিতে একটি 'চযুংরপধষ অৎৎধহমবসবহঃ ঞৎবধঃু' স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু প্রশাসনিক অদক্ষতা, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, অদক্ষ কূটনীতি ইত্যাদি কারণে চুক্তিটি প্রশ্নবিদ্ধ। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা একটি বিরাট সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দরিদ্র দেশের পক্ষে এর মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষ হিসেবে মানবেতর দাবি অনুযায়ী আমরা তাদের সাহায্য করতে বাধ্য। কিন্তু তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসন চুক্তি ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। ইতোপূর্বে বাস্তুহারাদের ব্যাপারে মিয়ানমার তার প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করেনি।

রোহিঙ্গা সমস্যা-সমাধানে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে রাষ্ট্র টু রাষ্ট্রের বৈঠক করার জন্য বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া এবং সংকটের স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার বাংলাদেশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্ক, নেদারল্যান্ড, ব্রিটেন, আমেরিকা, ভারতসহ প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ। এর আগে সর্বপ্রথম তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থাকাসহ জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইসু্য উত্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ইতোমধ্যেই ফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'পাশে থাকার' প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিকভাবে বিশ্বসম্প্র্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা সময়ের দাবি। সরকার সে উদ্যোগ নিচ্ছে।

মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে পাশাপাশি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড বৈঠক এবং ফোরামে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে ইসু্যটি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ডেকে নিয়ে রোহিঙ্গা ইসু্যতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়। ঢাকায় কর্মরত প্রায় ৫০টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিককে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করানো হয়। উন্নয়ন সহযোগী চীন ও ভারত যাতে রোহিঙ্গা ইসু্যতে বাংলাদেশের অবস্থা বুঝে মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করেন সে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। অন্যদিকে ঢাকায় কর্মরত মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে কয়েক দফায় তলব করে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রশংসা করে বিশ্বের কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা শরণার্থীদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে বিশ্বের জনমত সৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সে লক্ষ্যেই ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের সরেজমিন সে চিত্র দেখাতে শরণার্থী শিবির সফরে যান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, ভারত, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতরা এই সফরে সামিল হন। বিদেশি কূটনীতিকরা কখনো গাড়িতে চড়ে আবার কখনো হেঁটে শিবিরগুলোতে গিয়ে শরণার্থীদের দুঃখ দুর্দশার চিত্র দেখেন এবং তাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা শোনেন। কূটনীতিকদের পক্ষে কথা বলার সময় নেদারল্যান্ডসের দূত লিওনি মার্গারেটা বলেন, অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকট এখন আগের চেয়েও বেশি বিপর্যয়কর। অনেক বেশি নির্যাতিত মানুষ প্রাণ বাঁচাতে শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি মানবিক সংকট। আমাকে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করতে হবে এত মানুষকে উষ্ণতার সঙ্গে গ্রহণ করার জন্য। আমরা সব ধরনের সহায়তা করব। বিদেশি কূটনীতিকরা জানান, তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে নিজ নিজ দেশে প্রতিবেদন পাঠাবেন এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাবনা দেবেন। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান নিজেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে তাদের ত্রাণ দিয়ে গেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট ইসু্য নিয়ে দ্রম্নত প্রস্তাব গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করার ঘোষণা দেন। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ প্রথম থেকেই সংকট সমাধানে সব ধরনের সহায়তার কথা বলছেন।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অমানবিক এবং মানবেতর জীবনযাপন করছে। আশ্রয় নিয়েছে আমাদের দেশে। সেজন্য জাতিসংঘ, অন্যান্য শক্তিশালী-পরাক্রমশালী রাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও চীন চাপ প্রয়োগ করলেই সমস্যার সমাধান হবে; তা না হলে হবে না। এটাই একমাত্র পথ। এখানে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, বিশ্ব জনমতকে মোবিলাইজ করা, দ্বিতীয়ত, বিশ্ব বুদ্ধিজীবী বা গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের মোবিলাইজ করা এবং তৃতীয়ত, বিশ্ব মিডিয়াকে মোবিলাইজ করা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে না পারলে তারা নানা রকমের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। যা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা শিবির ও আশপাশ এলাকায় নেতিবাচক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চিত্র বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রায় সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা দ্রম্নত প্রত্যাবাসনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। ''বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কূটনৈতিক তৎপরতা নেই, তা নয়। কিন্তু যতটা হওয়া প্রয়োজন ততটা হচ্ছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইসু্য নিয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত। আর সেই শক্ত অবস্থান নেয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে পড়ছে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ শুরু থেকেই দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছে। বিবেচনা করেছে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে এর সমাধানের দিকে যায়নি বাংলাদেশ। এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে তা ততটা শক্তিশালী নয়।' তার মতে, 'বাংলাদেশ, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আসিয়ান, ওআইসি এসব দেশ এবং ফোরামকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ মিয়ামারের সঙ্গে সম্পর্ককে কতটা স্পর্শকাতর বিবেচনা করে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় স্বীকার করাতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ, সার্ক, আসিয়ান, আঞ্চলিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারের ওপর তেমনভাবে চাপ সৃষ্টি করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু মৌখিক সমর্থন ছাড়া দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কোনো সাফল্য নেই। চীন, রাশিয়া, ভারত সবাই মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। এ থেকে দৃশ্যমান, মিয়ানমারের কূটনীতিকরা যে সাফল্য দেখাতে পেরেছেন, ঢাকা তা পারেনি। মিয়ানমারের কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য দেশটি শুধু যে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় এড়াতে পেরেছে তা নয়- দক্ষ কূটনীতির দ্বারা তারা তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে।

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা একটি বিরাট সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দরিদ্র দেশের পক্ষে এর মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষ হিসেবে মানবেতর দাবি অনুযায়ী আমরা তাদের সাহায্য করতে বাধ্য। কিন্তু তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসন চুক্তি ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। ইতোপূর্বে বাস্তুত্মহারাদের ব্যাপারে মিয়ানমার তার প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করেনি।

সমৃদ্ধি অর্জনের এই সময়ে যদি এখন থেকে চার-পাঁচ বছরের মাথায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কিশোর ও যুবকের একটি অংশও যদি ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গিবাদের খপ্পরে পড়ে, তাহলে তখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কতখানি হুমকির মধ্যে পড়তে পারে, সেটি সময় থাকতে ভাবা দরকার। এ রকম দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, মিয়ানমার সহজে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। সুতরাং রোহিঙ্গা ইসু্যকে কেন্দ্র করে যে রকম নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে আমরা পড়তে পারি, সেটি যাতে আমাদের অপার সম্ভাবনার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে তার জন্য বহুমুখী তৎপরতা ও পদক্ষেপ সময় থাকতে গ্রহণ করা উচিত। যেমন-দীর্ঘমেয়াদে এত বিশালসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসহ সব মানবিক চাহিদা পূরণ করা বাংলাদেশের একার পক্ষে তো সম্ভবই নয়, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যখন যা প্রয়োজন এমন বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থাপনায় চালিয়ে নেয়া যাবে না। তাই ফিলিস্তিনে শরণার্থীদের জন্য যেমন জাতিসংঘ রিলিফ ওয়ার্ক এজেন্সি (টঘজডঅ) স্থায়ীভাবে গঠন করা হয়েছে, তেমন একটা স্থায়ী আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এজেন্সি গঠন করা উচিত, যাতে এই রোহিঙ্গাদের সব মানবিক দায়িত্ব ওই সংস্থা পালন করতে পারে।

দ্রম্নত সমাধান না হলে গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ে পড়বে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এর ফলে কেবল বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোও সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এমন সতর্কতার কথা উলেস্নখ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষেশজ্ঞরা বলেছেন, ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে ও আসন্ন ঝুঁকি এড়াতে জাতিসংঘসহ বিশ্বকে খুব দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গা ইসু্যটি এখন আর মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সংকট নয় উলেস্নখ করে এই অধ্যাপক আরও বলেন, 'একটা বিষয় আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে এটা একই সঙ্গে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংকট। এই সমস্যার দ্রম্নত সমাধান না হলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে। মানবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা প্রকট হবে। সর্বহারা রোহিঙ্গাদের উপর যে গণহত্যা ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে তার বিচার হওয়াটাও জরুরি।'

পরিশেষে এটা বলা বোধহয় সঠিক হবে যে, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের কূটনীতি পরাজিত হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি ও বাংলাদেশের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে এদের প্রত্যাবাসনের সব ক্ষেত্রেই মিয়ানমার সফল। বাংলাদেশের মনে রাখা উচিত ছিল যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুর্বলদের কোনো স্থান নেই। উচিত ছিল অন্যের দ্বারা প্রভাবান্বিত না হয়ে মেরুদন্ড সোজা রেখে মিয়ানমার ও বিশ্বকে জানিয়ে দেয়া যে, নির্যাতন না থামা পর্যন্ত কোনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। মিয়ানমার সেই পদক্ষেপ নেয়ার পর যুক্তির দ্বারা ও বিশ্বসম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এ সংকট নিরসনে নেপিদোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে হতো। যেটি রোহিঙ্গারাও গ্রহণ করবে। এ ছাড়া বিশ্বসম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে যারা মিয়ানমারের এ ঔদ্ধত্যকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের জানিয়ে দেয়া উচিত ছিল যে, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন শুধু বাংলাদেশের একার দায়িত্ব নয়; এটা একটি আন্তর্জাতিক সংকট। বিশেষ করে ভারত ও চীনকে দৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃঢ়ভাবে অবগত করা উচিত ছিল, সংকট নিরসনে বিলম্ব হলে শুধু বাংলাদেশই যে অস্থিতিশীল হবে তা নয়, এ অস্থিতিশীলতা আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দুই দেশেরই স্বার্থের পরিপন্থী। দুঃখজনক হলেও এটি পরিষ্কার, বর্তমান চুক্তি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আশাপ্রদ হয়েছে বলে মনে হয় না এবং বাংলাদেশের জন্য এ শরণার্থীদের নিয়ে অন্য চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হতে পারে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহমদ: লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59061 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1