বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেনের ঈদ টিকিটে ভোগান্তি

সর্বস্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হোক
নতুনধারা
  ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

এবারও রোজার ঈদে বাড়ি ফিরতে অগ্রিম টিকিট ক্রয়ে শুরু হয়েছে মলস্নযুদ্ধ। শনিবার যায়যায়দিনে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিনেও ট্রেনের টিকিট নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন বিক্রি হয়েছে ২ জুন তারিখের ট্রেন যাত্রার টিকিট। এদিন ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলেও জানা যায়। পরিতাপের হলেও সত্য যে, প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও অনলাইনে এবং অ্যাপ থেকে টিকিট কিনতে পারেননি বলে টিকিটপ্রত্যাশীদের অভিযোগ। অনেকেই অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপ থেকে চেষ্টা করেও টিকিট কিনতে না পেরে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। জানা গেছে, টিকিট কালোবাজারি রোধ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের এবছর ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অ্যাপস ব্যবহার করে টিকিট কিনতে না পারায়, অনলাইনে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে কী লাভ হলো- এমন প্রশ্নও উঠেছে। বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই চরম ভোগান্তি বৈ অন্য কিছু নয়।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, অ্যাপসে টিকিট কিনতে ব্যর্থ হয়ে রাজধানীর মানুষ সেহরি খেয়ে কিংবা তারও আগে টিকিট নামের সোনার হরিণের আশায় ছুটছেন কমলাপুর। এ ছাড়া বাসের টিকিটের জন্য গাবতলী, সায়দাবাদ, মহাখালী, সদরঘাট, বাদামতলী পর্যন্তও ছুটছেন মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের আশায়। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যে বা যারা কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট হাতে পান তাদের চোখে-মুখে যেন যুদ্ধ জয়ের, নিদেনপক্ষে লটারি বিজয়ের আনন্দ। আর যারা পান না তাদের সংখ্যাই বেশি। তাদের মুখ মলিন ও হতাশাগ্রস্ত এসব ব্যক্তির অভিযোগের শেষ নেই, যার অনেকাংশ সত্যও বটে। শতকরা ৯৫ জন যানবাহনের টিকিট না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ। টিকিট নিয়ে তা সে হোক না বাস, ট্রেন, লঞ্চ, এমনকি বিমানের; সব ক্ষেত্রেই নয়-ছয়, স্বজনতোষণ ও কালোবাজারি- একরকম ওপেনসিক্রেটই বলা যায়। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রতিবছর ঘরমুখো মানুষ সড়ক, রেল, নৌ অথবা আকাশপথে ভ্রমণ করে থাকে। ঈদে যাত্রীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন যানবাহনের আগাম টিকিট বিক্রির রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু অগ্রিম টিকিট বিক্রি নিয়ে নানারকম দুর্নীতি, দুরাবস্থা, ভোগান্তির অভিযোগ উঠলে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই আমরা মনে করি। আমরা বারবার বলে আসছি, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অগ্রিম টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেন কোনোরকম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। টিকিট বিক্রির প্রতিটি স্তরেই যেন শৃঙ্খলা বজায় থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে আগাম টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে যে সংশয় ও দুশ্চিন্তা থাকে, তা নিরসনে সংশ্লিষ্টদেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবছর টিকিট পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ নানারকম দুর্ভোগের শিকার হন। টিকিট কালোবাজারি, মহাসড়কের দুরবস্থা, যানজট, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। ঈদে যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রতিবারই উপেক্ষিত হতে দেখা যায়। টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি অজ্ঞানপার্টি, পকেটমার, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য দুর্বৃত্ত ও তস্করের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় ট্রেন ও স্টেশনগুলোয়। এদের দমনে যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল মুখে স্পেশাল ও উত্তম সেবা প্রদানের কথা বলা হলে তা হাস্যকর বলেই বিবেচিত হবে।

ঈদের আগে সড়ক, নৌ ও রেলপথে নির্ঝঞ্ঝাট ও নিরাপদ ভ্রমণের প্রত্যাশা নিয়ে ঘরমুখো মানুষ টিকিট কিনতে গেলেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিট পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। এতে সাধারণ মানুষের উৎসবের রং ফিকে হতে বাধ্য। ঈদের আগে এ ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে দমন করা উচিত। যদিও আমরা জানি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ ব্যাপারে তৎপর। তবু যেহেতু অগ্রিম টিকিট প্রাপ্তিতে ভোগান্তির চিত্রই সামনে এসেছে, সেহেতু প্রত্যাশা থাকবে যাত্রী ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51088 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1