শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের গণহত্যা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা

পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামন্ত ও সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে। পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই দেশ শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিতে উভয় অংশের মধ্যে বৈষম্য দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান স্বাধীনতা।
সালাম সালেহ উদদীন
  ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

২৫ মার্চ কালরাত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে করুণ অধ্যায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে নির্মূল করতে একাত্তরের ২৫ মার্চ 'অপারেশন সার্চলাইট'র নামে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ একটি বেদনাবিধুর অধ্যায়। বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন কেবল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষায়। আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে তারা এই গণহত্যা চালায়।

পূর্ববাংলার নিয়ন্ত্রণকারী তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার লক্ষ্য ছিল যতদিন বাঙালিকে তারা পূর্ণ বশীভূত করতে না পারছে, ততদিন একের পর এক 'গণহত্যা'র মধ্যদিয়ে পুরো বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে যাওয়া। তাই কসাইখ্যাত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অত্যন্ত দম্ভভরে উচ্চারণ করেছিলেন, সব মানুষের মৃতু্য হলেও, বাংলার মাটি চাই। অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে তিনি ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় তিনি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য বাংলার জনগণকে আহ্বান জানান।

\হ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত করা হয় বাংলার মাটি। এরপর সারা দেশে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। পাকিস্তানের শোষণ-শাসন আর বৈষম্যে অতিষ্ঠ বাঙালি জাতি এ প্রতিরোধের জন্যই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিল। প্রকৃত প্রস্তাবে মার্চ মাসের সূচনায়ই শুরু হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চূড়ান্ত ফয়সালা। বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে তা আর কোনো দেশে হয়েছে বলে জানা যায়নি। এত কম সময়ে এত বেশি মানুষ হত্যা আর নারী নির্যাতন কোথাও হয়নি। এত নির্যাতনও কোথাও চালানো হয়নি পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক এই গণহত্যা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন (৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহরে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভ দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয় কয়েকশ' লোক। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং পাকিস্তান সরকার প্রদেশে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আন্দোলনরত জনতাকে প্রতিরোধের জন্য তারা রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা গড়ে তোলে এবং মেশিনগানের গুলিতে বাড়িঘর ধ্বংস করে। বাঙালির সংঘবদ্ধতা রুখে দিতেই ২৫ মার্চের লোমহর্ষক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। আর এ বেদনাবিধুর ঘটনার মধ্যদিয়ে বাঙালি আরও দ্বিগুণ শক্তি অর্জন করে। কালরাতের শোক ও ক্রোধ থেকেই বাঙালি একযোগে জেগে ওঠার প্রেরণা পায়। ফলে তৎক্ষণাৎ দেশের জনগণের মধ্যে অখন্ড পাকিস্তানের প্রতি পূর্ণ অনাস্থার প্রকাশ ঘটায়। কালরাতের পরদিন ২৬ মার্চ থেকেই স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার যুবা-তরুণ এবং আবালবৃদ্ধবনিতা। শাপেবর হওয়া ২৫ মার্চের একটি কালরাতের অধ্যায়ই মোড় ঘুরিয়ে দিল বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলার আপামর জনগণই সূচনা করল যুদ্ধজয়ের এক ইতিহাসের। যে ইতিহাস বাঙালি জাতির ত্যাগ সংগ্রাম আর গৌরবের ইতিহাস। ঐতিহাসিক ছয় দফা থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু অন্তরে লালন করতেন তা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৪ বছর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন, সে সাধনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি গণরায়। আর ঐতিহাসিক ছয় দফার পক্ষে গণরায় লাভের আশায় অবিচল স্থিরচিত্তে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে গেলেন '৭০ এর নির্বাচনের দিকে।

মানব জাতির ইতিহাসে যত গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কার বর্বরোচিত হত্যাকান্ড নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ড। পাক-হানাদার বাহিনীর সেদিনের নৃশংসতার কথা, বিভীষিকাময় ভয়াবহতার চিত্র ভাষায় বোঝানো যাবে না। শুধু প্রত্যক্ষদর্শী এবং ইতিহাস সচেতন মানুষরাই উপলব্ধি করতে পারেন। সেদিন নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা, বৃদ্ধা এক কথায় সর্বস্তরের বাঙালিকে। পাক-হানাদার বাহিনীর দানবীয় হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি নারীর ওপর। জ্বালিয়ে দেয় ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত। লুণ্ঠন করে এ দেশের মানুষের সম্পদ। সোনার বাংলা হয়ে ওঠে জলন্ত শ্মশান।

আশার কথা, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি আলোচনায় তোলার কথা বলেছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ও গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা ডিয়েং। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাডামা ডিয়েং এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কীভাবে এ দেশে গণহত্যা ?শুরু হয়েছিল, এ দেশের সাধারণ মানুষকে কীভাবে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও এ দেশে তাদের দোসররা, সে বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখের বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন, সে বিষয়গুলোও শেখ হাসিনা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির সামনে তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, নির্বিচারে চলেছিল হত্যাকান্ড। ওই রাতে শুধু ঢাকায় অন্তত ৭ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর সেই নৃশংসতার পর রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি, স্বাধীনতার জন্য শুরু হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল স্বাধীনতা।

এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। স্বাধীনতার জন্য বাঙালির ত্যাগ ও সংগ্রাম ইতিহাসে বিরল। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার মাস এ মার্চ। আর ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। সঙ্গত কারণে মাসটি বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থানের পর বাঙালি জাতি যে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এ মার্চেই।

বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে আনে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির অপরিসীম ত্যাগের পাশাপাশি এক গৌরবময় ঘটনা। এই একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনী এ দেশের নিরীহ বাঙালিদের ওপর বর্বর নৃশংস গণহত্যা চালায়। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছে নির্বিবাদে হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চের গভীর রাত থেকে শুরু হয় বর্বরোচিত হত্যাকান্ড। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত চলে এক নারকীয় হত্যা লীলা। সেই হত্যায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে। খুনি পাকিস্তান বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে লাখ লাখ মা-বোন। হত্যাযজ্ঞে শহীদ হয়েছেন বাংলাদেশের বাঙালি বুদ্ধিজীবী। ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নির্দেশে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ।

স্বাধীনতার মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। সেদিন বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ভাষণ প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। মাত্র ১৭-১৮ মিনিটের অনবদ্য এ ভাষণটি কোনো লিখিত ভাষণ নয়। একটি বারের জন্য ছন্দপতন ঘটেনি ভাষণে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল কঠিন সংকটে ভারসাম্যপূর্ণ অথচ আবেগময় অসাধারণ বক্তৃতা। ভাষণের প্রতিটি লাইন উদ্ধৃৃতিযোগ্য। বাঙালির জীবনে ৭ মার্চ উজ্জ্বলতম মাইলফলক। এই ভাষণ ছিল বহুমাত্রিক তাৎপর্যমন্ডিত সে বিষয়টি আজ পরিষ্কার। এটা ছিল এক মহাকাব্যিক ভাষণ। এমন উদাত্ত কণ্ঠে সম্মোহনী জাগানো ভাষণ আর কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব ছিল না। যদিও অনেকে এই মহাকাব্যিক ভাষণের তুলনা করে থাকেন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে। বাঙালির স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসন ও মানব মুক্তির স্বপ্ন সবই ছিল আমাদের জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণটিতে। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই ভাষণটিকে কেন্দ্র করে বিপুল মানুষের সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। বঙ্গবন্ধু বলেন- 'তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশালস্নাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের পর শুধু ঢাকা শহর নয় বরং দেশের রাজনৈতিক চেহেরা বদলে যেতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে পাল্টে যেতে থাকে সমাগ্রিক প্রেক্ষাপট। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে আরও বলেন- 'ভাইয়েরা আমার প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে'। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন ৭ মার্চের পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আটকাবস্থায় প্রহসনের বিচার করতে পারে তাই তিনি বলেছিলেন- 'আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা সব রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেবে'। তিনি সাধারণ জনগণের প্রতি আস্থা রেখে বলেছেন- 'প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহলস্নায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন'।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের শপথও ছিল তার মধ্যে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা- এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।

এ কথা সত্য যে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় বরং পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল এই স্বাধীনতা। কোনো জাতি যখন স্বাধীনতা চায় তখন সে প্রত্যাশিত স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে রাখার শক্তি আর কারও থাকে না। '৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে সমগ্র জাতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল। কারণ বাঙালি চেয়েছিল স্বাধিকার তথা স্বায়ত্তশাসন। দেখেছিল স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হলেও এর ঐতিহাসিক পটভূমি ছিল দীর্ঘ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ জন্ম নেয়। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল হিন্দু, পাকিস্তানে প্রাধান্য ছিল মুসলমানদের। পাকিস্তানের ছিল দুটি অংশ- পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার দূরত্ব ছিল হাজার মাইলেরও বেশি। সংস্কৃতিগতভাবে পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববাংলা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামন্ত ও সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে। পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই দেশ শাসন ও অর্থনৈতিক নীতিতে উভয় অংশের মধ্যে বৈষম্য দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান স্বাধীনতা।

ভুলে গেলে চলবে না- বাংলার সম্পদ, এর সবুজ-শ্যামলী, নদ-নদী, পাহাড়-হ্রদ-জলের প্রপাত, সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন সবই সৃষ্টিকর্তার অশেষ দান। এমন একটি দেশে বসবাস করে আমরা মানবিক ও দেশপ্রেমিক হবো না, এ কথা বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হয়। এ কথা সত্য, হাসিনা সরকার কৃষকস্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, জেলা পর্যায়ে কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে চলছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্রামকে শহর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগ ও তৎপরতা দেশের জন্য ইতিবাচক। হাতিরঝিল প্রকল্প, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী, বনানী ফ্লাইওভারসহ বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ এসবও ভালো উদ্যোগ। আগামীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে। আমরা আশাবাদী।

সালাম সালেহ উদদীন: কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42710 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1