বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
সতর্ক ও সচেতনতার বিকল্প নেই

রাজধানীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

নতুনধারা
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বহু মানুষ দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয়রা গণমাধ্যমে বলেছেন, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের ওই বহুতল ভবনে বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে চকবাজারের ঘিঞ্জি এলাকা। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরও কয়েকটি আবাসনে। বহুতলের জানলা, বারান্দা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকেন মানুষজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১২টি ইউনিট। পরে আরও ইউনিট যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে থাকেন প্রায় ২০০ জন দমকল কর্মী। ১৪ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা গেছে। স্মরণকালের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন ও পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালককে প্রধান করে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছে। আর বহুতল ভবনের নিচতলায় রাসায়নিকের গুদামে প্রচুর পস্নাস্টিক জাতীয় সামগ্রী মজুদ থাকায় মুহূর্তেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আগুন। গুদামের পাশে পারফিউম তৈরির কারখানা থাকায় আগুন এত ভয়াবহ চেহারা নেয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এলাকায় বেশ কয়েকটি রাসায়নিক গুদাম থাকা সত্ত্বেও সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর তা নিয়ন্ত্রণে এতটা সময় লাগা এবং রাসায়নিকের গুদাম থাকার পরও সেখানে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে। আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম না রাখতে সরকারের নির্দেশ আছে, এরপরও সেখানে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না রাখা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেই মনে করা যায়।

দেশে আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে শুকনো মৌসুমে। এক সময় পাট ও তুলার গুদামে আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। এখন বেশি আগুন লাগে মার্কেট ও গার্মেন্টসে। তাও প্রধানত রাজধানী ও আশপাশে। এমনকি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, বহু কথিত আধুনিক মার্কেটেও স্মোক ডিটেক্টরসহ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না; এমনকি পানিও নয়। দেশে-বিদেশে বহুল প্রচারিত তাজরীন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য। আবার নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো ভয়াবহতাও আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনাও রয়েছে। চকবাজারেও পানির রিজার্ভসহ অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বললেই চলে। একই কথা প্রযোজ্য বহুতল বিশিষ্ট বাসাবাড়ি এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসের ক্ষেত্রেও। আসলে জরুরি অবস্থা ও ব্যবস্থার কোনো ধারণাই গড়ে ওঠেনি ভবন নির্মাণসহ অগ্নিনির্বাপণ কিংবা অন্যবিধ দুর্ঘটনা মোকাবেলায়। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রশিক্ষণও নেই বললেই চলে। যে কারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিপুল প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষতি দেখে যাওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

উলেস্নখ্য, সরকারি উদ্যোগে দেশের অনেক উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক। আমরা মনে করি, এসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পেতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়ানোরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করাসহ বাসাবাড়ি, অফিস, সবক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাদ আছে, চোরে নিলে তবু বেড়া থাকে, আগুনে নিলে কিছুই থাকে না। লক্ষণীয় যে, প্রতিবছরই আগুনে প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটে থাকে। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। সঙ্গত কারণেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। চকবাজারের মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। এরপরও প্রত্যাশা থাকবে, অগ্নিকান্ডে ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাই আরও সচেতন ও সতর্ক হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37703 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1