বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ

নতুনধারা
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:১৩

মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা এবং অভিযান; সরকারের এসব কর্মকান্ড মাদক নির্মূলে দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরই ধারাবাহিকতা এবং সরকারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রম্নতি পেয়ে কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দলে দলে আত্মসমর্পণ করছেন। কিছুদিন আগে প্রথম দফায় কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা টেকনাফের তালিকাভুক্ত ৩৫ গডফাদারসহ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। আর দ্বিতীয় দফায় শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেছেন ১০২ জন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে ২৪ জনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত 'গডফাদার'। এ ছাড়া 'ইয়াবা গডফাদার' হিসেবে বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই ও ১২ আত্মীয়সহ ১৬ জন আছেন এদের মধ্যে। আত্মসমর্পণের সময় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭০ রাউন্ড তাজা কার্তুজও জমা দেন। আত্মসমর্পণের পর তাদের পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি কিছুটা হলেও আশাব্যঞ্জক এবং স্বস্তিকর বলেই প্রতীয়মান হয়। সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়টি আলোচনায় এলেও দেশবাসীর প্রত্যাশী ছিল মাদকের মূলোৎপাটন। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদক প্রতিরোধে আগের তুলনায় নিয়ে জনসচেতনতাও বহুলাংশে বেড়েছে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উলেস্নখ করে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ঘোষণা শুনেই ইয়াবা সেবন ও ব্যবসা থেমে যাবে, এমনটি মনে করারও যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সরকারের প্রতিশ্রম্নতির বিষয়টিও ইতিবাচক। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেছেন, ইয়াবা পুরো দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে দেশের নতুন প্রজন্ম চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ফলে মাদকের ভয়াবহ এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে কোনো মূল্যে মাদক নির্মূল করতে হবে। যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের নামের তালিকা থেকে স্পষ্ট হতে পারে সমাজের প্রভাবশালীরাই দীর্ঘদিন ধরে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আত্মসমর্পণকারীরা তাদের দায়ও স্বীকার করেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন বিষয়টি কত কষ্টের এবং লজ্জার। তারা বলেছেন, বিজিবি, পুলিশ,র্ যাব ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করলে ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ হয়ে যাবে। সীমান্তে যৌথ টহল দেয়া হলে কোনোভাবেই ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে না। বিশ্লেষকরাও বারবার এ কথাটি বলে এসেছেন। আমরা বলতে চাই, বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। তথ্য মতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উলেস্নখ করেছেন, ১৯৩টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। এটা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে, সীমান্ত দিয়েই দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে সর্বনাশা মাদক। মিয়ানমার থেকে সড়ক ও নৌপথে ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে আর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজকে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। শূন্য হচ্ছে মায়ের বুক। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত কখন মাদকের নেশার জালে আটকা পড়ে তাদের প্রিয় সন্তান। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাদক নির্মূলে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তকে কঠোরভাবে সুরক্ষা দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তাও অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত থাকলে ইয়াবা সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তারা পরাস্ত হবে, এমনটাও মনে করা যায়। সর্বোপরি, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের মূলোৎপাটনই আমাদের কাম্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও মাদকের ভয়াবহতা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়াও বাঞ্ছনীয়। মাদক নির্মূলই হোক শেষ কথা- এটা বিবেচনায় রেখেই প্রশাসনিক কঠোরতা অব্যাহত থাক, এমনটি সবাই প্রত্যাশা করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে