শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেকার লোকের সংখ্যা বেড়েই চলছে

মো. ওসমান গনি ঢাকা
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বতর্মানে বেকার সমস্যা মনে হয় বাংলাদেশে জাতীয় সমস্যা হয়ে দঁাড়িয়েছে। আর এ বেকার সমস্যার কারণে একদিকে যেমন দেশে বাড়ছে দেশের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি অন্যদিকে বাড়ছে মাদকের অবাধ ব্যবহার। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির পিছনে মূল কারণ হলো বেকার সমস্যা। যতই দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেকারত্ব এখন দেশের জাতীয় সমস্যা। বেকারত্বের কারণে দেশের তরুণরা ঝুঁকে পড়ছে আত্মহননের দিকে। হতাশায় জীবন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ যুবক। কেউ কেউ নেমে পড়ছেন অবৈধ পথে। কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রতি বছর আট লাখ নতুন বেকার তৈরি হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির সুবিধা সমানভাবে বিতরণ না হওয়ায় দেশে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। গত ১০ জানু/১৯ (রবিবার) গুলশানে লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘প্রবৃদ্ধি ও অগ্রাধিকার’বিষয়ক সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গত ১০ বছরে অথৈর্নতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হলেও কমর্সংস্থান প্রবৃদ্ধি মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দঁাড়িয়েছে, বৈষম্যের চিত্র উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রতি বছর দুই লাখ মানুষ শ্রম বাজারে ঢুকছে, বিপরীতে চাকরি তৈরি হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার। সে ক্ষেত্রে প্রতি বছর আট লাখ মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। বেকারত্বের কষাঘাতে দেশ আজ বড় বিপযের্য়র সম্মুখীন। শিক্ষিত বেকাররা কমর্সংস্থানের সুযোগ না পেয়ে দিন দিন হতাশার সমুদ্রে ভাসছে। তারা নেশাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকমের্। বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষিত বেকারের দিক দিয়ে দ্বিতীয়। দেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। মাত্র সাত বছরে এই হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলোÑ উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আন্তজাির্তক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেকার নিয়ে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দঁাড়িয়েছে (যুগান্তর, ২০ জানুয়ারি ২০১৯)। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পযর্ন্ত পঁাচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অজর্ন করেও কমর্সংস্থান সৃষ্টির প্রবৃদ্ধি হতো ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ বিগত পঁাচ বছরে সাড়ে ছয় শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি দিয়ে কমর্সংস্থান বাড়ছে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও এই প্রবৃদ্ধি সহায়ক নয়। গত এক দশকে অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচন কমেছে (এনটিভি, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯)। বাংলায় একটি কথা রয়েছেÑ লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে- ছোটবেলায় এই ছড়াটি শোনেনি এমন শিশু পাওয়া কঠিন। লেখাপড়া করে চাকরি পাবে, ভালো রোজগার করে উন্নত জীবনযাপন করবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষিত মানুষই বেশি বেকার। তারা নিজেদের পছন্দমতো কাজ পান না। অন্যদিকে যারা কখনো স্কুলে যায়নি, শিক্ষার সুযোগ পায়নি তাদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। বাংলাদেশে যত লোক বেকার, তাদের মধ্যে প্রতি পঁাচজনে দুজন উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। পড়াশোনা করে একটু ভালো কাজের সন্ধানে থাকেন তারা। কিন্তু মনমতো চাকরি পাচ্ছেন না। অথর্নীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষকদের মতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ কমর্ক্ষম মানুষ কমের্ক্ষত্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে ৫ লাখের বেশি উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই চাকরি পাচ্ছেন না। অথর্নীতিবিদ ও গবেষকদের মতে, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের বিপরীতে চাকরিপ্রাথীর্র সংখ্যা অনেক বেশি। তাই শিক্ষিতদের বেশ বড় একটি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। একই সঙ্গে সরকারি শূন্যপদগুলোও নিয়মিতভাবে পূরণ হয় না। আর বেসরকারি খাতে বতর্মানে বিশেষজ্ঞ, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিতদের চাহিদা বেশি। যে কারণে প্রচলিত ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেসরকারি খাতে চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। একদিকে চাকরি না পাওয়ায় এসব শিক্ষিত জনবলকে দেশের অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে বেকারদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নানা সামাজিক অপরাধে। আর চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কা ও হতাশা থেকে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীদের একটি অংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে তাদের মেধা ও সেবা দেশের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিডিজবস’ থেকে জানা যায়, চাকরি প্রাথীর্রা প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জীবনবৃত্তান্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করে। গত এক মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার সিভি জমা পড়েছে। তিনি বলেন, একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দিলেই প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার সিভি জমা পড়ে। যাদের বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ব্যাংকের চাকরিতে। একটি ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার সিভি আসে। আমাদের জিডিপি, অতিধনী-ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি বা উন্নয়নের গল্পে দেশের মুষ্টিমেয় লোক তুষ্ট হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের এতে কিছু আসে যায় না। একদিকে কিছু মানুষ তাড়াতাড়ি বড় রকমের টাকার মালিক হচ্ছেন, অন্যদিকে ব্যাপক জনগোষ্ঠী থেকে যাচ্ছেন বেকার, হচ্ছেন হতদরিদ্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36973 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1