বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

দ্রæত প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুবিচার করুন

নাজমুল হোসেন প্রকৌশলী ও লেখক
  ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সমস্ত জল্পনা-কল্পনা এবং আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে শেষ হলো একাদশ জাতীয় নিবার্চন। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জয়ী করতে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তরুণরা বরাবরের মতো আবারও ক্ষমতাসীন দলকেই বেছে নিল। আর আওয়ামী লীগের এমন নিরঙ্কুশ জয় ও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমথের্নর মাধ্যমে জনগণ আবারও বুঝিয়ে দিল তারা উন্নয়ন, শান্তি, বঙ্গবন্ধুর আদশর্ ও নীতিকেই লালন করে। আর সেই সুবাদে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া মন্ত্রীরাও শপথ নিয়েছেন। তারা সবাই গোটা জাতিকে বারবার আশ্বস্ত করছেন ইশতেহারে রাখা প্রতিটি প্রতিশ্রæতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলে দেশের বিভিন্ন সূচকে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তাতে জনগণের কাছে এই সরকারের ধারাবাহিকতা এখন একান্ত কাম্য একটি বিষয় হয়ে দঁাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের নিবার্চনী ইশতেহারে শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য ছিল নানা রকম প্রতিশ্রæতি। দেড় কোটি বেকারের কমর্সংস্থান, তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রæতির মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো। বিগত সাত বছরে তরুণদের এই দাবিটি নবম ও দশম মহান জাতীয় সংসদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকবারের সুপারিশ, মাঠপযাের্য়র আন্দোলন, পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তথা সব মহলে তুমুল আলোচনার ঝড় তুলেছিল। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও বারবার তরুণদের আশার আলো দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে সরকারের ক্ষমতার অন্তিম মুহূতের্ তরুণরা মন্ত্রিসভা ভাঙার আগেও আশায় বুক বেধে বারবার পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শাহবাগ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান, মানববন্ধনসহ নানা রকম ক‚টনৈতিক চেষ্টা করে গেছে। তবে শেষ পযর্ন্ত নিবার্চনের কয়েকদিন আগে মাননীয় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন সরকারের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের নাগরিক টিভি কতৃর্ক আয়োজিত ‘সবিনয়ে জানতে চাই’ নামক অনুষ্ঠানে এবং তরুণদের নিয়ে সিআরআই কতৃর্ক আয়োজিত আরও একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উপস্থিতিতে এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বতর্মান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময় বলেছিলেন এবার নতুন করে ক্ষমতায় এসেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর বাস্তবায়ন করে দেবেন। তারা আরও বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনোই ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। এবার জাতীয় নিবার্চনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নিবার্চনী ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না রাখার বিষয়টিকে নিয়েও ওবায়দুল কাদের ও তারানা হালিম মন্তব্য করে বলেছিলেন বতর্মানে এ দেশের সাবির্ক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে বয়সসীমা একেবারেই তুলে দেয়াটা অযৌক্তিক। তাই আওয়ামী লীগ সরকার যৌক্তিকভাবে, বাস্তবতার নিরিখে ও অন্যান্য অ্যাডভান্স গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বয়সসীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই বয়সসীমা বাড়াবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই বয়সসীমা কত বছর বাড়ানো হবে? প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই বোঝেন, যারা প্রথম এই দাবি তুলেছিল, যারা বিগত বছরগুলোতে আন্দোলন করল বয়সসীমা কম করে বাড়ালে তারা তো কোনো সুযোগ পাবে না। ঘরে বসে বিনা পরিশ্রমে সুযোগ পাবে শুধু নবাগত চাকরিপ্রাথীর্রা। তা তো এক তরফাভাবে হতে পারে না! আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী সবের্ক্ষত্রেই সঠিক ও সুবিচার করে থাকেন। তিনি সবাইকে কমবেশি খুশি রাখেন। গত সাত বছর ধরে তরুণদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর করা। কিন্তু বিভিন্ন যৌক্তিক কারণ দশিের্য় বুক ভরা আশা নিয়ে এই দাবিতে প্রথম থেকে সারা দেশের যেসব তরুণরা আন্দোলন করে আসছিল এত বছর আন্দোলন করে তাদের বতর্মান বয়সসীমা আজ ৩৫-এর দ্বারপ্রান্তে। তাই আশা করব প্রধানমন্ত্রী সবাই যাতে অন্তত আবেদনের পযার্প্ত সুযোগ পায় সেই সুবিচার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেভাবেই এর বাস্তবায়ন করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৮-৪০ বছর করা যেতে পারে। অথবা ৩৫ বছর পার হওয়াদের জন্য চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো বিশেষ সুবিধা দিতে পারেন। আর পাশাপাশি সব শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সব মন্ত্রণালয়কে নিদের্শ দিতে পারেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন স্বাধীনতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীর সন্তানরা এতে প্রজাতন্ত্রের কমের্ প্রবেশের সুযোগ পেয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সোনার বাংলাকে কলঙ্কিত করতে পারে। তাই সরকারের পাশাপাশি এর বিরোধী বতর্মান তরুণ প্রজন্ম, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরাও। অন্তত এদের জন্য যেন অন্যরা চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য চাকরিতে চ‚ড়ান্ত নিয়োগপত্র প্রদানের আগে সঠিকভাবে তদন্তপূবর্ক প্রাথীের্দর পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা যেতে পারে।

অন্যদিকে বিশেষ করে যারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে যেমন- সেশন জট, রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে আক্রান্ত হয়ে অকারণে কয়েক বছর হারিয়ে বয়স বাড়াতে দাবি তুলেছে মূলত যৌক্তিকতার সুবিচারে তাদেরই এই সুবিধা পাওয়া উচিত বা তাদেরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সুবিধা দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই কোনো বিশেষ আইনের মাধ্যমে সুবিধা দিয়ে মানবতার দৃষ্টিতে সুবিচারস্বরূপ তাদের মুখেও হাসি ফোটাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত ‘মানবতার মাতা’ খেতাবটি আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। যে কোনো আইন তো প্রয়োজনের তাগিদেই তৈরি করা হয়। তাই ত্রিশোধের্দর জন্য তিনি এমন একটি আইন তৈরি করতে পারেন যেখানে এর প্রজ্ঞাপনের পরই কমপক্ষে ৩ বছর পযর্ন্ত আইনের আওতাভুক্তরাই শুধু সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন। আর এই ক্ষণস্থায়ী বিশেষ আইনটি নিধাির্রত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই আপনা থেকেই বাতিল হয়ে যাবে। এতে একদিকে যেমন চাকরিতে প্রবেশের বয়স স্থায়ীভাবে বাড়ল না তেমনি অন্যদিকে নবাগত চাকরিপ্রাথীের্দর ক্ষেত্রে বা অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়েও নতুনভাবে দীঘর্স্থায়ী কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না। ফলস্বরূপ অন্তত হতাশায় থাকা তরুণরা এমন সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে এতটুকু সান্ত¡না পাবে। আর বতর্মানে যেহেতু আগের মতো সেশনজট নেই তাই নতুনরা এই সুবিধা না পেলেও চলবে। তাদের জন্যও অন্য কোনো সুবিধার কথা ভাবা যেতে পারে। কারণ তারা যথা সময়েই অনাসর্ বা মাস্টাসর্ শেষ করতে পারছে। এরপরেও সরকার বয়স বাড়াতে চাইলে সবাই সুযোগ পাবে সেই চিন্তা মাথায় রেখেই বয়স বাড়াবে বলে আশা করছি। তরুণদের জন্য ইশতেহারে রাখা অনেক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপারও বটে। তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য কোনো সময় বা বাড়তি পরিকল্পনার দরকার আছে বলে মনে করি না। তাই ইশতেহার রাখা এই প্রতিশ্রæতির যত দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে হতাশায় দিনাতিপাত করা এই সব বেকারদের জন্য ততই ভালো হবে। আর এটাকে যদি দেরি করে, বতর্মান ক্ষমতার মাঝামাঝি সময়ে বা শেষ সময়ে বাস্তবায়ন করা হয় তবে সেটা না করারই সমান। কারণ এই ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হওয়ার পরিবতের্ বরং চলমান অবস্থাই ভয়াবহরূপে অব্যাহত থাকবে। একটা দিন আগে সুযোগ পাওয়া মানেই একটা দিন আগে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সমান।

তাই আশা করব প্রধানমন্ত্রী অতি গুরুত্বের সঙ্গে ইশতেহারে তরুণদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসংক্রান্ত প্রতিশ্রæতি পূরণ পূবর্ক দ্রæতই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সুবিচারস্বরূপ একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33065 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1