শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরেই নিযাির্তত নারী

কাযর্কর উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দেশের ৬৬ ভাগ নারী কোনো না কোনোভাবে ঘরেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। আর এমন তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইডের সাম্প্রতিক গবেষণায়। গবেষকরা বলছেন, বাড়ির বাইরে অথার্ৎ রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে, যানবাহনে এবং অন্যান্য স্থানে নারী নিযার্তনের চিত্রই বেশির ভাগ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এসবের বাইরেও নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ। দেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভ‚মিকা রাখলেও ঘরের মধ্যে নারীর অবস্থা তেমন বদলায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের, এবং একই সঙ্গে পরিতাপেরও।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রবন্ধ উন্মোচন করা হয়। গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রচলিত ধারণা এবং পিতৃতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস হচ্ছে ‘নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ’। কিন্তু, প্রকৃত সত্য হচ্ছে নারীদের প্রতি বেশির ভাগ সহিংসতা বাড়িতে সংঘটিত হয়। ঘরের প্রতি তিন জনের মধ্যে দুজন নারীই নানাভাবে পরিবারের লোকজনের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের ২০টি জেলায় সংঘটিত সহিংসতার তথ্য, পুলিশের কাছে রিপোটর্ হওয়া অভিযোগ, বিচার বিভাগীয় কাযর্ক্রম, জেএনএনপিএফের নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাবিরোধী সরকারি সংস্থা এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মিডিয়া প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে এবং তা বিশ্লেষণ করেই গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

বলাই বাহুল্য, আমাদের সমাজব্যবস্থা এমনই যে, এখানে প্রতিনিয়ত নারীরা লাঞ্ছিত-নিপীড়িত হচ্ছেন। একজন নারী যদি নিজের বাড়িতেই নানানভাবে নিযার্তনের শিকার হন, তাহলে নারীরা আমাদের সমাজে কতটা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। নারীকে সম্মান জানাতে বারবার পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবতের্নর কথা আলোচকরা বলে থাকেন। কিন্তু পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি আদৌ বদলেছে? বদলায়নি, তারই স্পষ্ট প্রমাণ হতে পারে অ্যাকশন এইডের এই সাম্প্রতিক গবেষণা। কিন্তু এ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে একটা সমাজ-দেশ চলতে পারে না। সরকারও নারীর অথৈর্নতিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা বাড়াতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। আগের তুলনায় নারী আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠছেন, নিজের অধিকারটা বুঝতে পারছেন। কিন্তু এত সবের পরেও যখন নিজ পরিবারে নারী অনিরাপদ বোধ করেন কিংবা নিযার্তনের শিকার হয় তাহলে নারীকে নিয়ে যত আয়োজন তা তিমিরেই রয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এর আগেও বিভিন্ন জরিপে বলা হয়েছিল, একজন নারী নিজ ঘরে শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অথৈর্নতিক নিযার্তনের শিকার হয়ে থাকেন। স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিরেকে স্বামী যৌন নিযার্তন চালিয়ে থাকেন, যা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ঘটে আসছে। বিষয়টিকে ধষের্ণর সঙ্গে তুলনীয় হলেও বাস্তবতা যে, এখনও পযর্ন্ত কোনো আইনই এটা মানতে রাজি নয় যে, বিয়ের পর নারীরা ধষের্ণর শিকার হতে পারেন। আর এ মতামতটিও গবেষকদের। আমরা মনে করি, নারী যদি এভাবে নিযার্তনের শিকার হতেই থাকেন তাহলে সবদিক থেকেই সমাজ পিছিয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতির অবসানই প্রত্যাশিত।

আমরা জানি, দেশের আইন নারীবান্ধব। দেশে নারী নিযার্তন প্রতিরোধ আইন যেমন কাযর্কর, তেমনইভাবে ‘কমর্ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে’ সুপ্রিম কোটের্র সুস্পষ্ট নিদের্শনাও আছে। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোটের্র হাইকোটর্ ডিভিশন এ নিদের্শনা ঘোষণা করেন। অথচ নিদের্শনা প্রণয়নের দীঘর্ ৯ বছর পরেও কমর্ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কাযর্কর কোনো ব্যবস্থা বা কৌশল হাতে নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৪ শতাংশ শিক্ষাথীর্ যৌন হয়রানি প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটির কথা জানেন না। ৮৭ শতাংশ শিক্ষাথীর্ জানেন না সুপ্রিম কোটের্র নিদের্শনা সম্পকের্ও। আদালতের নিদের্শনা বাস্তবায়ন কিংবা কৌশল প্রণয়ন করতে সংশ্লিষ্টরা কেন ব্যথর্ হবে- এ প্রশ্নটিও অযৌক্তিক হতে পারে না।

সবোর্পরি বলতে চাই, যে কোনো মূল্যে নারী নিযার্তন প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নারীরা নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন, সুতরাং তাদের চলার পথও কণ্টকমুক্ত হতে হবে। ঘরে কিংবা বাইরে নারী নিযার্তন রোধে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনে আরও কঠোর হোক। নারী নিযার্তনের যে কোনো ঘটনায় অপরাধীদের দ্রæত আইনে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নারীর চলার পথ সবক্ষেত্রে মসৃণ হোক- এটাই আমাদের চাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32731 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1