শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

মহানবীর আদশর্ হোক পাথেয়
নতুনধারা
  ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। ইসলাম ধমের্র প্রবতর্ক মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) জন্ম ও মৃত্যু দিবস। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আবার ৬৩ বছর বয়সে এই দিনেই ইন্তেকাল করেন। তিনি সবর্কালের সবের্শ্রষ্ঠ মহাপুরুষ। আল্লাহতায়ালা তাকে রহমাতুল্লিল আলামিন বা সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেন। এই দিনে শত কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়Ñ ইয়া নবী সালামু আলাইকা।

মহানবী জীবনব্যাপী মানুষকে ত্যাগ সত্যবাদিতা ও আত্মসংযমের দীক্ষা দিয়েছেন। ফলে এ দিনটি যথাযোগ্য মযার্দায় পালন করার আগে হজরত মোহাম্মদের (সা.) জীবন ও শিক্ষা সম্পকের্ গভীর অনুধ্যান প্রয়োজন। ইসলামের অবশ্যপালনীয় ধমীর্য় অনুষ্ঠানগুলো উদযাপনের ক্ষেত্রে যেমন আন্তরিকতা প্রয়োজন, তেমন মহানবীর (সা.) আদশর্ অথার্ৎ তার ব্যক্তিগত গুণাবলি নিজের জীবনে যতদূর সম্ভব অনুশীলন-অনুসরণ করাও প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কতর্ব্য। ধমর্ নিয়ে বিদায় হজে তিনি সতকর্বাণী করেছিলেন, ‘তোমরা ধমর্ নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না, অতীতে বহু জাতি এ জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে।’ পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, অতীতে ধমর্সংক্রান্ত ভিন্নমত প্রকাশের জন্য নিযার্তনের শিকার হতে হয়েছে। ইসলাম ধমর্ প্রচারের ক্ষেত্রে হজরত মোহাম্মদকেও (সা.) নিযাির্তত হতে হয়েছে। তার দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে কোরাইশদের নিযার্তন ও অত্যাচার সয়েও তিনি যে ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত রেখেছেন, তা পৃথিবীতে বিরল। লক্ষণীয় যে, শান্তি ও সহনশীলতার ধমর্ ইসলামের মূল শিক্ষা ভুলে গিয়ে একটি ধমার্ন্ধগোষ্ঠী পবিত্র ইসলামের ললাটে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের কলঙ্ক কালিমা লেপে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ আত্মবিনাশী কমর্কাÐ মুসলমানের মধ্যে অনৈক্য, অন্ধতা, স্বাথর্পরতা ও সংকীণর্তাকেই বেগবান করছে। এ পথ পরিহার করতে হবে, আসতে হবে ইসলামের মূল পথে। যে পথ সাম্য সৌহাদর্্য ও ভ্রাতৃত্বের, যে পথ ঔদাযের্র সহনশীলতার।

বিশ্বের মুসলমানরা হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পৃথিবীতে আগমন ও প্রয়াণের এ দিনটিকে অত্যন্ত মযার্দার সঙ্গে পালন করে থাকেন। কেননা, তিনি বিশ্বমানবতার প্রতীক ও সত্য-সুন্দরের বাণীবাহক হিসেবে আবিভ‚র্ত হয়েছিলেন। তার আদশর্ ও চারিত্রিক মাধুযের্র কারণে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত, যাযাবর ও ববর্র আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হতে পেরেছিল। তিনি উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। মহানবীর (সা.) কারণেই আরব জাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়, নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটে, নবীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার; যা কালক্রমে বিভিন্ন দেশের জীবনধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

পবিত্র এই মিলাদুন্নবী অথার্ৎ আজকের এই দিনে মহানবীর (সা.) মিলন ও ভ্রাতৃত্বের জীবনাদশর্ই হোক মানবজীবনের একমাত্র পাথেয়। তার জীবনাদশর্ অনুসরণ করেই সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জাতিতে জাতিতে গোত্রে গোত্রে মিলেমিশে বসবাস করা সম্ভব। পৃথিবীর দেশে দেশে আজ মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, পৃথিবীর দেশে দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে । ব্যাহত হচ্ছে শান্তি, বাড়ছে সন্ত্রাস। একমাত্র মহানবীর (সা.) দেখানো পথ অনুসরণের মধ্য দিয়ে এই হানাহানি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে যাবে। সারাজীবন মহানবীর (সা.) পদাঙ্ক অনুসরণের মধ্যেই যাবতীয় মুক্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

বতর্মান বিশ্ব বাস্তবতায় মহানবীর (সা.) পথ অনুসরণ করলে, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিজীবনে তার আদশের্র প্রয়োগ ঘটানো গেলে, সবের্ক্ষত্রে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করবে। আবার সাধারণ মানুষের সারল্য ও ধমর্ বিশ্বাসকে মূলধন করে তাদের ওপর ইসলামের নামে অন্ধত্ব-গেঁাড়ামি চাপিয়ে দিতে যারা উদ্যত, এই দিনে ওই সব অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কতর্ব্য হওয়া দরকার সত্য ধমের্র প্রকৃত অনুসারীদের। পাশাপাশি প্রচার করতে হবে মহানবীর (সা.) সত্যবাদিতা, ক্ষমা, সাম্য, সৌহাদর্্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, ঔদাযর্, সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি মানবতাবাদী দশর্ন। পৃথিবীর মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের ধমর্প্রাণ মুসলমানরাও আজ যথাযোগ্য মযার্দার সঙ্গে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করবে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, নবীজীর বাণী হৃদয়ে ধারণ করা এবং তা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে এই দিবস উদযাপনের প্রকৃত তাৎপযর্।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<23355 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1