শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেন ঠেকানো যাচ্ছে না ধষর্ণ?

সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ ঢাকা
  ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ধষর্ণ বাড়ছে, বাড়ছে ধষের্ণর পর হত্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। আর এই ধষের্ণর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওয়তায় তেমন আনা যাচ্ছেনা বলা চলে। এর কারণ, অনেকেরই আছে ক্ষমতার যোগ, তাই তারা অপ্রতিরোধ্য। ধষর্ণ ও ধষর্ণপ্রবণতার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে এখন বড় ধরনের সামাজিক গবেষণার ব্যাপার হয়ে দঁাড়িয়েছে। মানুষ কেন এতটা বেপরোয়াভাবে যৌনতাতাড়িত হয়ে পড়ছে, কেনই বা ধষর্ণপ্রবণদের মধ্যে কাজ করছে না কোনো ধরনের ভয়ভীতি, এটা এখন এক বড় প্রশ্ন। ধষর্কদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছে। অথচ সে সব দৃষ্টান্ত কোনোই কাজে আসছে না। অথার্ৎ দেখা যাচ্ছে, ধষর্ণপ্রবণতা এক অপ্রতিরোধ্য মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যা শুধু আইন প্রয়োগ করেই দমানো যাবে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় সবর্গ্রাসী রূপ ধারণ করেছে এবং তাই সে মানতে চাইছে না কোনোকিছুইÑ আইন-আদালত, সামাজিক সম্মানবোধ, আত্মসম্ভ্রম।

আমরা মনে করি, ধষর্ণ রোধে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি এই প্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ধষর্ণপ্রবণতার পেছনে দেশের প্রচলিত রাজনীতি ও সমাজব্যবস্তা কতটা দায়ী সেটাও অনুধাবন করার প্রয়োজন পড়েছে। আথির্ক দুনীির্ততে ছেয়ে গেছে দেশ, এই দুনীির্ত হয়তো মানুষকে উৎসাহী করছে চারিত্রিক অন্যান্য স্খলনেও। অনেকেই বলছেন, সমাজটা যেহেতু ভোগবাদী হয়ে পড়েছে, তাই মানুষ নানা ধরনের ভোগে প্রলুব্ধ হতেই পারে। এই প্রলুব্ধতার পেছনে কোনো ধরনের নৈতিকতা কাজ করছে না।

বাংলাদেশ এক জনবহুল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের কোথায় কী ঘটছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তার সব খেঁাজ রাখা সম্ভব নয়। জাতিকে নৈতিকতাসমৃদ্ধ করে তুলতে না পারলে ধষের্ণর মতো অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। আমরা জোর দিয়েই বলতে চাই, দেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সমাজবিশারদ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব- সবাইকে একত্র হয়ে ধষর্ণপ্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সে মোতাবেক এই রোগের নিরাময়ের উপায় বের করতে সচেষ্ট হতে হবে। ধষর্ণ বতর্মানে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। অপেক্ষার সময় শেষ হয়ে গেছে বলা যায়।

শুধু ধষর্ণ নয়, একই সঙ্গে ধষর্ণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ধষর্কদের থাবা থেকে। জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন জোরালো ভ‚মিকা দেখা যায় না। সাধারণত দরিদ্র ও দুবর্ল ঘরের মেয়েরাই ধষের্ণর শিকার হয়। দীঘের্ময়াদে মামলা চালানোর মতো অথর্ ও সময় তাদের পরিবার দিতে পারে না। সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী নয়। বিপরীত দিকে অথির্বত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধষের্ণর মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গরিমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বঁাচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এরকম অভিযোগ অজস্র। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের এই ভ‚মিকা, অন্যদিকে সামাজিক প্রতিরোধও জোরালো নয়। এখনো কোথাও কোথাও গ্রাম্য সালিশে ধষির্তাকেও সমান দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির ফতোয়া দেয়া হয়।

স্বীকার করতেই হবে যে, ধষর্করাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এরকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধষের্ণর মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধষর্ণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথাথর্ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুবর্ল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের আইন আমলে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা ও সঠিক তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। ঘরে-বাইরে সবর্ত্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা চাই সাম্প্রতিক ধষের্ণর ঘটনার অপরাধীদের দ্রæত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22937 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1